সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতা লিখ ।

অথবা, সামাজিক গবেষণার নেতিবাচক দিকসমূহ লিখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার দুর্বল দিকসমূহ লিখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার সমস্যাগুলো তুলে ধর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার ৮টি সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কেননা সমাজ সদা পরিবর্তনশীল ও গতিশীল এবং মানবীয় আচরণ অত্যন্ত জটিল বিধায় এদেরকে গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয় । তাই সমাজবিজ্ঞানীরা ঘটনার বর্ণনা, আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সমাজকে বিশ্লেষণ করে থাকেন । প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ন্যায় সামাজিক ঘটনাবলির পরিমাপ সমাজবিজ্ঞানে সম্ভব হয় না ।
সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতা : নিম্নে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. মানব আচরণ সম্পর্কিত : সমাজবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয় হলো মানব আচরণ, মানব সম্পর্ক ইত্যাদি যা পরীক্ষাগারে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব নয়। মানুষের আচরণ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বিধায় তার অচেতন মনে দ্বন্দ্ব, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা ইত্যাদি নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা করা এক দুরূহ ব্যাপার ।
২. তত্ত্ব নির্ভরতা : সামাজিক গবেষণায় ব্যবহৃত তত্ত্ব প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে ব্যবহৃত তত্ত্বের ন্যায় নিখুঁত ও সুফলদায়ক নয়। কেননা মানুষের আচরণ ও সামাজিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সামাজিক বিজ্ঞানের তত্ত্বগুলো ।
৩. উপাত্ত সংগ্রহে জটিলতা : বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার ক্ষেত্র পদ্ধতিগত। সমাজবিজ্ঞানে এর অনেক জটিলতা আছে । কেননা সমাজের মানুষ শিক্ষিত বা সচেতন না হলে উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানারকম জটিলতা দেখা দেয় ।
৪. মূল্যবোধ নিরপেক্ষ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষকের মূল্যবোধ নিরপেক্ষ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা এটি মূল্যবোধ না হলে বাস্তবতাকে তুলে ধরতে বাধাগ্রস্ত করে। সামাজিক গবেষণায় এ সমস্যাটি প্রকট। কারণ গবেষক ও তথ্য সংগ্রাহক এ সমাজেরই সদস্য এবং তাদের রয়েছে নিজস্ব মূল্যবোধ ও ধ্যান-ধারণা। ফলে তারা পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে।
৫. সাধারণীকরণ : সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণে সাধারণ সূত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এতে বিভিন্ন চলকের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করে সাধারণীকরণ করা হয়। তবে সামাজিক গবেষণার সাধারণীকরণগুলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সাধারণীকরণের মতো এত নিখুঁত নয় এবং এগুলো স্থান-কাল ও পাত্রভেদে ভিন্নতা দেখা যায় ।
৬. পুনরাবৃত্তি : প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গবেষণার বিষয়বস্তুকে গবেষণাগারে পরীক্ষা করা যায় বিধায় এর পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব । যেমন- অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন মিশে পানি হয় এবং যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে গবেষণা করলে একই ফল পাওয়া যাবে। কিন্তু সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে যেহেতু মানুষের মন, আচরণ, ইচ্ছা- অনিচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, সেহেতু পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা এখানে খুবই ক্ষীণ ।
৭. ঘটনা পরিমাপ : সামাজিক গবেষণায় সাধারণত গুণবাচক প্রপঞ্চ বা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। ফলে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের গবেষণার অন্তর্ভুক্ত উপাদানগুলোর ন্যায় এক্ষেত্রে সঠিকভাবে পরিমাপ করা যায় না।
৮. ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না : মানব সম্পর্ক এবং মানব চরিত্র রহস্যময়, জটিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা দুর্বোধ্য । এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি সাধারণ সূত্রে পৌছা কঠিনতম কাজ। তাই এ সূত্রের ভিত্তিতে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় তা সবক্ষেত্রে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর্যুক্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছে । তথাপি বর্তমান বিশ্বের সমাজ গবেষকরা এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছেন এবং সামাজিক গবেষণায় এ পদ্ধতি প্রয়োগের উপর ক্রমশ গুরুত্ব দিচ্ছেন ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*