উৎস : আলোচ্য অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘পুঁইমাচা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে। উক্তিটি সমাজপতি কালীময় চৌধুরীর।
প্রসঙ্গ : সমাজপতি কালীময় চৌধুরী সহায়হরি চাটুয্যেকে তাঁর সমাজ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে উল্লিখিত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
বিশ্লেষণ : তৎকালীন বর্ণবাদী হিন্দুসমাজে দুর্বলের উপর সবলের নির্যাতন নিপীড়ন ব্যাপকভাবে ক্রিয়াশীল ছিল। দুস্থ দরিদ্র দুর্বল ব্যক্তির সামাজিক অপরাধকে সমাজপতিরা সবসময়ই বড় করে দেখতেন। তাদের সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতির জন্য গুরুদ- ভোগ করতে হতো। সহায়হরি চাটুয্যে একজন দরিদ্র ব্রাহ্মণ। পাঁচজনের কাছে চেয়ে চিন্তে তাকে সংসার চালাতে হয়। তাঁর বড় মেয়ে ক্ষেন্তির বয়স পনেরয় পড়েছে, এখনো তাকে পাত্রস্থ করা হয়নি এটাই তাঁর অপরাধ। এছাড়া পূর্বে একবার ক্ষেন্তির বিয়ে স্থির হয়েও ভেঙে গিয়েছিল। এ কারণে ক্ষেন্তি ‘উচ্ছুণ্ড্য করা’ মেয়ে হিসেবে সমাজে ধিকৃত। তারপরও অধিক বয়স হওয়া সত্ত্বেও সহায়হরি মেয়ের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা না করায় সমাজপতি কালীময় চৌধুরী তাঁকে চণ্ডীমণ্ডপে ডেকে শাসিয়ে দিলেন। কোনরকম ভণিতা না করে তিনি সকলের সামনে বলে দিলেন “ওতো একরকম উচ্চুগু্য করা মেয়ে, আশীর্বাদ হওয়াও যা, বিয়ে হওয়াও তা। সাত পাকের যা বাকি এই তো! সমাজে বসে এসব কাজগুলো তুমি যে করবে, আর আমরা বসে বসে দেখব, এ তুমি ভেব না। সমাজের বামুনদের যদি জাত মারার ইচ্ছে না থাকে, মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেল। পাত্তর, পাত্তর, রাজপুত্তুর না হলে কি পাত্তর মেলে না?” এই কথার মধ্য দিয়ে কালীময় চৌধুরী সহায়হরিকে তাঁর সামাজিক অপরাধ সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তাঁরা এসব অপরাধ বসে বসে দেখতে নারাজ।
মন্তব্য : সমাজপতিদের সামাজিক শাসনের একটি জ্বলন্ত চিত্র উক্তিটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
সমাজে বসে এসব কাজগুলো তুমি যে করবে, আর আমরা বসে বসে দেখব এ তুমি মনে ভেব না।”— ব্যাখ্যা কর।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079
Leave a Reply