উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : সংস্কৃত সাহিত্যের স্বরূপ বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক এ মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষণ : সংস্কৃত সাহিত্য ভারতবর্ষের প্রাচীন সাহিত্য। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ সাহিত্য এ অঞ্চলের মানুষের মনোরাজ্যে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এক সময় তা সমৃদ্ধিও অর্জন করেছিল যথেষ্ট। কিন্তু দেহগত যৌবনের স্থূল ও উত্তেজক বন্দনার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ার কারণে তাতে পচন দেখা দেয় এবং এক সময় তার পতন অবধারিত হয়ে উঠে। সংস্কৃত সাহিত্যকে বলা যেতে পারে যৌবনের আলোচনা যে যৌবন বেহিসেবি ভোগবাদে প্রমত্ত। ভোগ বাসনা চরিতার্থ করা ছাড়া সে যৌবনের আর অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। রাজা যযাতির জীবন থেকে যখন যৌবন বিগত হয়ে যাচ্ছিল, তখন ভোগ সুখ থেকে নিবৃত্ত হবার বেদনায় তিনি অধীর হয়ে উঠেছিলেন। সম্পূর্ণ বিবেক বর্জিত ও নির্লজ্জ হয়ে তিনি সে সময় আপন সন্তানদের কাছ থেকে যৌবন ভিক্ষা নিয়েছিলেন, পুনর্বার ভোগ সমুদ্রে নিমগ্ন হবার জন্য। সংস্কৃত সাহিত্য সে ভোগবাদেরই কাব্যকলা। সংস্কৃত সাহিত্যে যুবকযুবতী ছাড়া অন্য কারো স্থান নেই। সে যুগে সকল পাত্রপাত্রীরা আঠারো বছরের তরুণ-তরুণী। সেখানে ভোগের ছবি ছাড়া অন্য কোন ছবি খুঁজে পাওয়া যায় না। শুধু মালা ও চন্দন আর বনিতা নিয়ে সে কাব্যজগৎ গড়ে উঠেছে। তবে এ ত্রিবিধ উপকরণের মধ্যে বনিতাই সেখানে প্রধান। বনিতাই সেখানে স্বর্গ এবং মালা ও চন্দন উপসর্গ মাত্র। সংস্কৃত সাহিত্য পড়তে গেলে তাই মনে হয় রমণী দেহের উপমা যোগানো ছাড়া সেখানে প্রকৃতির আর কোন কাজ নেই। আবার সে রমণীর মন যোগানো ছাড়া পুরুষের অন্য কোন কাজ নেই। শুধু বিলাসকলায় উৎসাহী পাঠকের জন্যই যেন লেখা হয়েছে সংস্কৃত সাহিত্য। জীবনের আর কোন রূপের প্রতিবিম্ব সেখানে ফুটে উঠেনি।
মন্তব্য : সম্ভোগের চোরাবালিতে আটকা পড়ে সুস্থ জীবনচর্চার সাথে সম্পর্ক হারিয়ে ফেলেছিল সংস্কৃত সাহিত্য। তাই অবধারিত হয়ে উঠেছিল তার পতন।
সংস্কৃত কাব্যজগৎ মাল্যচন্দনবনিতা নিয়ে গঠিত এবং সে জগতে বনিতাই হচ্ছে স্বর্গ এবং মাল্যচন্দন তার উপসর্গ।”- ব্যাখ্যা কর।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079
Leave a Reply