সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য কী? মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ প্ৰবন্ধ অবলম্বনে বিশ্লষণ কর।

অথবা, সংস্কৃতির কাজ কী? মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধ অনুসরণে ব্যাখ্যা কর ।
অথবা, “সংস্কৃতি মানে বিশ্বের বুকে বুক মিলিয়ে বাঁচা”- এ উক্তির আলোকে সংস্কৃতি কী তা আলোচনা কর।
অথবা, সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য কী? মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধ অবলম্বনে সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য, স্বরূপ ও কাজ নির্দেশ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ঢাকার মুসলিম সাহিত্যসমাজ ও ‘শিখা গোষ্ঠীর’ সংসর্গে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত। যুক্তিনিষ্ঠা এবং মুক্তবুদ্ধির দীপ্তিতে তাঁর প্রবন্ধ সাহিত্য অত্যন্ত রুচিশীল ও পরিচ্ছন্ন। ‘সংস্কৃতি কথা’ তাঁর একটি অসাধারণ সৃষ্টি। এ প্রবন্ধে তিনি সংস্কৃতি কি এ বিষয়ে সারগর্ভ আলোচনা করেছেন। জীবনকে অবলম্বন করেই গড়ে উঠে সংস্কৃতি। জীবনের বাইরে সংস্কৃতির কোন পরিধি নেই। তাঁর মতে, সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, মহৎভাবে, বিচিত্রভাবে বাঁচা।
সংস্কৃতি : ‘সংস্কৃতি’ শব্দটি ইংরেজি ‘Culture’ শব্দের প্রতিশব্দ। সংস্কৃতি বা কালচারের সংজ্ঞা অত্যন্ত ব্যাপক। কারো কারো মতে, জীবনকে প্রকাশের নাম সংস্কৃতি। কেউ মনে করেন সংস্কৃতি হচ্ছে সভ্যতার নির্যাস। আবার কেউ বলেছেন, সংস্কৃতি হচ্ছে প্রগতির পথ ধরে পূর্ণতা লাভের একটি সচেতন কর্মপ্রয়াস। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতে সংস্কৃতি মানে জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা। শিক্ষিত এবং মার্জিত লোকের ধর্মই সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষকে ভালোভাবে, সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায় ।
সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য : সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হলো- সে মানুষকে উন্নততর জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয়; সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রেম সম্পর্কে অবহিত করে। ধর্ম ও সংস্কৃতি এক নয়। ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার এবং কালচার শিক্ষিত ও মার্জিত লোকের ধর্ম। ধর্ম মানে মানুষের জীবনের নিয়ন্ত্রণ। ধর্ম সাধারণ লোককে নিয়ন্ত্রিত করে আর সংস্কৃতি মার্জিত লোককে জীবন সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সংস্কৃতিবান মানুষের চালক ধর্ম নয়, তাদের চালক সূক্ষ্মচেতনাবোধ। আর এ সূক্ষ্মচেতনাবোধের নামই সংস্কৃতি।
সংস্কৃতির স্বরূপ : জীবনই সংস্কৃতির প্রকৃত বাহন। জীবনের বাইরে সংস্কৃতির কোন অস্তিত্ব নেই। সংস্কৃতি মানুষকে পূর্ণতা দান করে তাকে অমৃতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সংস্কৃতির সংস্পর্শে মানুষ তার বিবেককে জাগ্রত করে মনের মধ্যে বিশ্বপ্রেমের অনির্বাণ শিখা জ্বালিয়ে দেয়। সংস্কারমুক্তি আর সংস্কৃতি এক নয়। সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বেঁচে থাকা। সংস্কৃতির স্বরূপ হলো মূল্যবোধ সম্পর্কে যথার্থ ধারণা।
সংস্কৃতির কাজ : সংস্কৃতি মানুষের অন্তরের মধ্যে একটি নিজস্ব জীবনদর্শনের জন্ম দেয়। সমাজ মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করে। মানুষ সমাজের বুকে বিচরণ করে নিজেকে গড়ে তোলে শিক্ষাদীক্ষা ও সৌন্দর্য সাধনার সাহায্যে। সংস্কৃতির কাজ হচ্ছে মানুষকে বিশেষভাবে, পরিপূর্ণভাবে গড়ে তোলা। প্রকৃতি ও মানব সংসারের মধ্যে অসংখ্য শিকড় প্রবেশ করিয়ে রস টেনে নিয়ে সংস্কৃতি মানুষকে বাঁচতে শেখায়। সংস্কৃতি মানুষের মনে অন্যায় ও নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে ঘৃণা জাগিয়ে তোলে।
মূল বক্তব্য : সংস্কৃতি বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোন মতবাদ বা দর্শন নয়। সংস্কৃতি মানুষের আত্মার খাদ্য। সংস্কৃতিকে বলা যেতে পারে একটি আত্মগত ধর্ম যা মানুষকে সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, শুভ ও আনন্দের সাথে সম্পৃক্ত করে। জীবনের বাইরে সংস্কৃতির কোন বিচরণ ক্ষেত্র নেই। মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। এ বেঁচে থাকার পথ ও মতের ভিন্নতা আছে। কেউ ধর্মকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, কেউ মনে করে ধর্ম বাইরের জিনিস। বেঁচে থাকার সার্থকতা ধর্মীয় অনুশাসনে নেই। মানুষকে বাঁচতে হবে সুন্দরের মধ্য দিয়ে। ধর্মে সুন্দরের সাধনা অবর্তমান। সুন্দরের সাধনা হলো সংস্কৃতি। সুন্দরকে গড়তে হবে, সুন্দরকে ভোগ করতে হবে, সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এই হলো মনুষ্য জীবনের প্রধান কাজ। যারা এ পথের পথিক তাদের কাছে ‘সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা।’ সংস্কৃতি হলো মানুষের সৌন্দর্যবোধ ও জীবনবোধের মহত্ত্বের নির্যাস। সকল প্রকার সংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে জীবনকে গভীরভাবে, ভীষণভাবে জানা-ই সংস্কৃতির প্রধান কাজ।
বিষয়বস্তু : মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধে সংস্কৃতি কী, সংস্কৃতিবান কে, কীভাবে সংস্কৃতিবান হওয়া যায় সব বিষয় বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে বিচিত্রভাবে, মহৎভাবে বাঁচা। সংস্কৃতি মানে জীবনের মূল্যবোধ সম্বন্ধে ধারণা। সংস্কারমুক্তি ও সংস্কৃতি এক কথা নয়। সংস্কারমুক্তি সংস্কৃতির একটি শর্ত মাত্র। সংস্কৃতির অনিবার্য শর্ত হচ্ছে মূল্যবোধ। সংস্কারমুক্ত ছাড়াও সংস্কৃতি হতে পারে; কিন্তু মূল্যবোধ ছাড়া সংস্কৃতি অসম্ভব। মূল্যবোধহীন সংস্কৃতির চেয়ে কুসংস্কারও ভালো। সংস্কৃতি সাধনা মানে Ripe হওয়ার সাধনা। সেজন্য জ্ঞানের প্রয়োজন আছে, বিজ্ঞানের প্রয়োজন আছে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন প্রেমের। সংস্কৃতিবান হওয়া মানে প্রেমবান হওয়া। প্রেমের তাগিদে বিচিত্র জীবন ধারায় যে স্নাত হয়নি সেতো অসংস্কৃত। তার গায়ে যে প্রাকৃত জীবনের কটু গন্ধ লেগে রয়েছে তা অসহ্য। সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীরে স্নাত না হলে সংস্কৃতিবান হওয়া যায় না।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্জিত, শিক্ষিত ও রুচিবান মানুষের জীবনের অলঙ্কার ও অহঙ্কার হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি কোন মতবাদ বা দর্শন নয়, সংস্কৃতি উপলব্ধি ও অনুভবের ব্যাপার। জীবনকে সুন্দর করতে, মহৎ করতে, সংস্কৃতির কোন বিকল্প নেই। সংস্কৃতিহীন মানুষ আর জন্তুর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%95%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%95%e0%a6%a5%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%ae%e0%a7%8b%e0%a6%a4/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*