শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।

অথবা, শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর।
অথবা, শ্রীচৈতন্যের দেবের আবির্ভাবের কারণ কি?
অথবা, শ্রীচৈতন্যের দেবের আবির্ভাব সম্পর্কে যা জানো লেখ ।
অথবা, শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব সম্পর্কে তোমার অভিমত দাও।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
বাংলায় গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রবর্তক হলেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব। বাংলার নিম্ন বর্ণের হিন্দুসমাজের এক ক্রান্তিলগ্নে মহান পুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব আবির্ভূত হয়েছিলেন তাদের যুক্তির অমোঘ বাণী নিয়ে।তৎকালীন সংস্কারাচ্ছন্ন, বর্ণবিভক্ত বাংলার অধিকার বঞ্চিত সাধারণ মানুষের কাছে প্রেমভক্তি ও মানবতার আদর্শকেই তুলে ধরেছেন তিনি তাঁর প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্ম ও দর্শনে। তাই বলা চলে তিনি ছিলেন একজন ধর্মসংস্কারক, সমাজসংস্কারক ধর্মাবতার। হিন্দু ধর্মের নতুন সংস্করণরূপেই প্রবর্তিত হয়েছিল তাঁর বৈষ্ণব ধর্মমত। মূলত ধ্বংসোম্মুখ হিন্দু ধর্মকে রক্ষা করাই ছিল তাঁর ধর্মসংস্কারের মূল লক্ষ্য। এ জন্যই বৈষ্ণব আচার্যগণ মনে করেন, “কলিতে নামের মাহাত্ম্য প্রচারের ধারা জন চিত্তকে শুদ্ধ ও ভগবৎ সাক্ষাৎকারের উপযোগী করে তোলার জন্যই বিশেষ করে বাংলাদেশে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব।”
চৈতন্যের আবির্ভাবের প্রেক্ষাপট : মধ্যযুগের বাঙালি হিন্দুসমাজের এক ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগে বের আবির্ভাব। তাঁর এ আবির্ভাবের প্রেক্ষাপটটি অতি প্রাচীনকালের ভারতীয় হিন্দুসমাজে বর্তনের ধারার সূচিত। খ্রিস্টের জন্মের দুই’শ বছর পূর্বে ও পরবর্তী সময়ে ভারতবর্ষে বিরাট রবর্তন ঘটিত হয়। এ সময় নারী হিন্দু ধর্মের বৈদিক ব্রাহ্মণ্য সমাজ সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণিকে কখনোই মানুষ বলে মনে করতেন না। সমাজের নিচু তলার মানুষকে ব্রাহ্মণরা কখনো সামাজিক স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি বৈদিক দেবদেবতারাও তাদের কোনো অধিকার ছিল না। সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণি তাদের মতো করে অবৈদিক দেবতার পূজ করতে থাকে। তাদের মধ্যে বাসুদের, কৃষ্ণ উল্লেখযোগ্য। এ অবৈদিক দেবতারা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। অন্যদিকে যুগ পরিবর্তন এবং আক্রমণকারী বিদেশি জাতির আবির্ভাব ও নতুন নতুন শিল্প কারুকর্মের প্রসারের ফলে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণির আর্থিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে তাদের দেবতারও অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। ফলে শূদ্রদের উপর পূর্বতন সমাজব্যবস্থাকে সব বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছিল সঙ্কেট উত্তরণের জন্য তার কিছু কিছু তুলে নেয়া জরুরি প্রয়োজন
হয়ে পড়ে। কাজেই ব্রাহ্মণদের মধ্যে যারা আধুনিক মনোবৃত্তিসম্পন্ন ছিলেন তারা অবৈদিক জনপ্রিয় আচারগুলোর সাহায্য নিলেন এবং অবৈদিক দেবতা বাসুদের কৃষ্ণকে স্বীকৃতি দিয়ে তাতে তুলে তাদের পতন ঠেকালেন। এভাবে প্রাচীনকালে বৈষ্ণবধর্ম হিন্দু ধর্মকে রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রাচীনকালে অবৈদিক দেবতাদের স্বীকৃতি দিয়ে শূদ্রদের আচরিক প্রথাকে মেনে নিলেও এ ধারা বেশিদিন অক্ষুণ্ণ থাকেনি। সেন যুগে আবার প্রবল ব্রহ্মণ্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং সমাজে নানা ধরনের বিভাজন মানুষে মানুষে বিভেদের রেখা এঁকে দেয়। সেই সাথে ব্রাহ্মণ্যবাদের বাড়াবাড়ির কারণে ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্ম আপনা থেকেই ভেতরে ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ভারতে মুসলিম আগমনের ফলে সমাজের নীচু ডলার মানুষ উদারপন্থি ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে থাকে দলে দলে। হিন্দু ব্রাহ্মণ্যাবাদী ধর্ম আবার অস্তিত্ব সঙ্কেটে পতিত হয়। এমনি সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে নদীয়ায় শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাব ঘটে। চৈতন্য পূর্ববর্তী হিন্দুসমাজ নিশ্চিত ভাঙনের মুখে পতিত ছিল। শ্রীচৈতন্য এ সংকটকালে আবির্ভূত হয়ে এক নতুন ধারার আন্দোলন শুরু করেন ব্রাহ্মণ ধারাকে রক্ষা করার জন্য। যেভাবে দলে দলে নিম্ন শ্রেণির জনগণ মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করছিলেন ঠিক একইভাবে দলে দলে লোক শ্রীচৈতন্যের ভাবান্দোলনের ছায়াতলে সমবেত হতে থাকে। ফলে হিন্দুধর্ম রক্ষা পায় অস্তিত্ব সংকট থেকে।
উপসংহার : অতএব দেখা যাচ্ছে, সনাতন হিন্দু ধর্মের এক মহাসংকটাপন্ন অবস্থায় এ ধর্মকে রক্ষা করার মহাব্রত নিয়েই আবির্ভূত হয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যদের। তাঁর আবির্ভাব বাঙালি হিন্দুসমাজকে নিশ্চিত ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করল। শুধু তাই নয় বাঙালির সাহিত্য, ধর্ম, দর্শন তথা মনন সাধনায়ও এ মতাদর্শ রাখল এক তাৎপর্যপূর্ণ অবদান।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*