অথবা, রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের স্বদেশপ্রেমের যে ছবি ফুটে উঠেছে, তা নিজের ভাষায় বর্ণনা কর।
অথবা, “কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রকৃত দেশপ্রেমিক”- ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ অবলম্বনে উক্তিটির সত্যতা যাচাই কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ স্বদেশের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ ও অনুপম প্রেমের প্রকাশ করে। তিনি নিজেও বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তার বিদ্রোহ শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, বরং তা সামাজিক এবং আন্দোলনের বিষয়েও ছিল। তাঁর কবিতা, গান, এবং প্রবন্ধ সাধারণ মানুষের অধিকারের ও অপারাধিক লক্ষ্যে তাঁর আবেগ ও অবাধ আবাস পেয়েছে। তাঁর কবিতায় সাধারণ মানুষের সমস্ত দুঃখ, বিপন্নতা, এবং অসহিষ্ণুতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জবানবন্দীর প্রেক্ষাপট :
‘ধূমকেতু’ পত্রিকা ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনী ছিল। এটি বিপ্লবী ও প্রতিসন্ধিত কবিরা এবং লেখকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ছিল যেখানে তারা তাদের আলোচনা ও গবেষণা প্রকাশ করতে পারতেন। এটি ক্রান্তিকারী ধারাবাহিকতা এবং সাহিত্যিক উদ্যোগের ব্যক্তিগত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার মাধ্যমে বিপ্লবী ধারাবাহিকতা এবং সাহিত্যিক সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের সচেতনতা উত্তেজনা ও সমাজে প্রতিষ্ঠানের দিকে মোড়ক ভূমিকা প্রদান করে।
রাজবন্দীর জবানবন্দী নামক প্রতিবেদন একটি প্রমুখ সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক নিবন্ধ, যা অত্যন্ত উদ্ভাবনী ছিল। এটি সরকারি অত্যাচার এবং অধিকারবলের বিরুদ্ধে একটি কঠোর সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক আপত্তিপূর্ণ স্ট্যান্ড নিয়ে এসেছিল। এটি কবির দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল এবং তার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং ন্যায্যতা এই প্রতিবেদনের ভাবনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটি ভারতীয় সাহিত্যের ঐতিহ্যিক একটি অংশ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে এবং সাহিত্যিক সমাজের মধ্যে গভীর প্রভাব প্রদান করেছে।
উজ্জীবন সূত্র :
মানুষের জীবনে বিশ্বাস এবং সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত একটি অমূল্য সম্পদ হওয়া উচিত, কিন্তু অসচেতনতা, কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস এই সম্পদগুলি ধ্বংস করে দেয়। ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা একটি সম্প্রদায়ের আত্মসম্মান ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রশংসিত হওয়া উচিত, তবে এদের সাথে যুক্ত অপরাধ, অত্যাচার এবং অবনমনের প্রতিকূল।
গণজাগরণ এবং গণআন্দোলন একটি শক্তিশালী উপায় যা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এগুলি পরিচালনা এবং শাসনে দোষপূর্ণ অবস্থানের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ও প্রভাবশালী স্বাধীনতা অভিযানের অংশ হিসেবে কাজ করে। মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সংরক্ষণের জন্য সমাজের সকল স্তরে জাগরূকতা ও আগ্রহ গড়ে তোলার প্রয়োজন। এ প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রনাথের ক্ষোভ-
“বাহির পানে তাকায় না যে কেউ
দেখে না যে বান ডেকেছে
জোয়ার জ্বলে উঠছে প্রবল ঢেউ।”
কাজী নজরুল ইসলাম একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যার কবিতা, গান, ও রচনাসমূহ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য অংশ গড়ে তুলেছে। তিনি ছিলেন একজন নারী সমাজের সমর্থক, স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থক এবং মানবিক অধিকারের প্রচারক। তার কবিতা ও গানের মাধ্যমে তিনি সামাজিক অবস্থান, অধিকার, ধর্ম, সমাজ এবং রাষ্ট্রের বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন।
পরাধীনতা ও অত্যাচারে বিরোধে তার লেখা কবিতা এবং গান অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। তিনি বিশেষ করে কৃষক, কর্মকাণ্ডগার, সাধারণ মানুষের দুঃস্থিতির প্রতি সতর্কতা জানান। নজরুলের রচনাগুলি পরাধীনতা, অত্যাচার, বর্বরতা ও সামাজিক ন্যায় বিরোধী আওয়াজ নিয়ে ভরা।
তার কবিতা “বিদ্রোহী” একটি সংখ্যালঘু কৃষকের বিদ্রোহ এবং মুক্তির কামনা নিয়ে লেখা। এছাড়াও তার “বন্ধে মায়ার প্রান্তরে” কবিতাটি পরাধীনতার বিরুদ্ধে একটি অত্যন্ত গভীর অবহিত কবিতা।
তার লেখা “বিদ্রোহীরা” গানটি রাষ্ট্রনির্মাণ আন্দোলনের সময় মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি আগামী আহ্বান করে।
এতে মন্তব্য করা মুলত তার লেখা, কবিতা, ও গান দ্বারা পরাধীনতা ও অত্যাচারের বিরোধে গাণিতিকভাবে বিদ্রোহ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
দেশ এবং মানুষের প্রতি অকৃত্রিম প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই তিনি বলতে পেরেছেন-
“বিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না।”
সত্যের প্রকাশিকা : কবি ন্যায়, সত্য, সুন্দরের পূজারী, যার বুদ্ধি বিবেকের বিচারে কল্যাণকর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার কবিতায় সত্যের সন্ধানের প্রয়াস, সুন্দরতার আদর্শ, এবং ন্যায়ের আহ্বান অবদান প্রকাশ পায়। তার বিবেকের আলোকে তিনি সমাজের অন্যতম উদাহরণ হয়ে থাকেন।
এ দিক থেকে উচ্চারণ- প্রত্যেক কবিই দেশপ্রেমিক। কবি নজরুলের কণ্ঠে তাই চিরায়ত কল্যাণেরই সুদৃঢ় “আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা, ভগবানের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়।”
নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস : কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিষয়ে আপনি কতটুকু জানেন না? তিনি একজন প্রতিকূল দৃষ্টিতে মানুষ ও সমাজের প্রতি সততা এবং প্রত্যাশা ধরে রাখা ছিলেন। তাঁর কবিতায় সামাজিক ন্যায়, প্রতিকূল বিপ্লব, প্রেম ও জীবনের সমস্যা নিয়ে অগ্রগতি করা হয়েছে। তিনি জাতির অহঙ্কার বা নিজের স্বার্থের আগে নিজের ন্যায় ও বিবেকগুলি জলাঞ্জলি করতে রাজি ছিলেন না। তাঁর কবিতা, গান এবং রচনাগুলি দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের জাগরুকতা এবং প্রেরণা সৃষ্টি করেছে। তিনি আজীবন নিরবতা, আধুনিকতা এবং মানবিক সম্পর্কে চিন্তা করেছিলেন। তাই নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছেন- “কোন কিছুর ভয়েই নিজের সত্যকে, আপন ভগবানকে হীন করি নাই, লোভের বশবর্তী হয়ে আত্ম-উপলব্ধিকে বিক্রয় করি নাই; নিজের সাধনালব্ধ বিপুল আত্মপ্রসাদকে খাটো করি নাই।”
স্বদেশপ্রেমের বিস্তার :
আপনি কবি কেন্দ্রিত কথা বলছেন, এবং তার প্রতিবাদী মনোভাব এবং দৃঢ় নীতির বিষয়ে চর্চা করছেন। তার মাধ্যমে তিনি নিজের দৃষ্টিকোণ ব্যক্ত করেছেন, যা দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্মান অর্জন করেছে। তার চেষ্টা স্বাধীনতা, ন্যায় এবং মানবিক অধিকারের প্রতি আহ্বান করা। তার প্রতিবাদ সম্পর্কে সত্যিকারের সাথে আপাতত অবগত হতে হবে না, তবে তার প্রতিক্রিয়া ও সাহস দেখে তার নেতৃত্ব ও সাহিত্যিক যোগ্যতা মন্মানীয়।
তাই স্বচ্ছন্দে বলেছেন- “আমি এবারকার প্রলয় ঘোষণার সর্বপ্রথম আঘাতপ্রাপ্ত সৈনিক মনে করে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি।”
উপসংহার :
এই আলোচনাটি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার স্বদেশপ্রেম এবং দেশের উন্নতির জন্য প্রতিটি সম্ভাব্য প্রয়াস সমর্থন করেছিলেন। তিনি নিজেকে অমৃতের পুত্র হিসেবে মনে করেছিলেন, অর্থাৎ তার শক্তির সূত্র তার দেশের ভালোবাসা এবং সেই ভালোবাসা থেকে উদ্ভবিত শক্তি। তার কবিতা ও সাহিত্যে দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা সম্পর্কিত মূল বিষয়ের উল্লেখ খুব সাধারণ।
Leave a Reply