রাজনৈতিক দল ও নারী ইস্যু সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, রাজনৈতিক দল ও নারী সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দাও।
অথবা, রাজনৈতিক দল ও নারী ইস্যু সম্পর্কে তুমি যা জান বিস্তারিতভাবে উল্লেখ কর।
অথবা, রাজনৈতিক দল ও নারী সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
রাজনৈতিক দল দলীয় মনোনয়ন ও সমর্থনের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তিকে সংসদে বা আইনসভায় প্রবেশের পথ সুগম করে দেয়। রাজনৈতিক দল সংসদের প্রবেশ দ্বারের প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। দেখা যায় যে, রাজনৈতিক দল বা সংগঠন লিঙ্গভিত্তিক সমমনাদের নেটওয়ার্কিংয়ের প্রতিফলন ঘটিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পুরুষ আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তোলে। বাংলাদেশে নির্বাচনি রাজনীতিতে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা নারীকে সংসদে প্রবেশের সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়নি। সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া কাঠামো, সিদ্ধান্ত এবং নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। এ প্রান্তিক অবস্থানের প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে। নারীদেরকে রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশীদার হতে হবে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ।
রাজনৈতিক দল ও নারী ইস্যু : রাজনৈতিক দল ও নারী ইস্যু এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচিত বিষয়। নিম্নে রাজনৈতিক দল ও নারী ইস্যু সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. নারীর প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দলের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নারীকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বাইরের অবস্থান থেকে বিভিন্ন সময়ে ভিতরে প্রবেশের প্রচেষ্টা নিতে হয়েছে। অতিক্রম করতে হয়েছে বাইরের বা বহিরাগত প্রবেশার্থীর জন্য আরোপিত সকল বাধাসমূহ। কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, সামাজিক,
অর্থনৈতিক কারণে সৃষ্ট বাধার তুলনায় কাঠামোগত বাধা নারীর পক্ষে অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন। নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কাঠামোগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক কারণের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক বৈশিষ্ট্য এবং নির্বাচনি পদ্ধতির উল্লেখ করা যায়।
২. নির্বাচনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : পুরুষের মধ্যে নেটওয়ার্কিং ও মনিটরিংয়ের প্রভাব এবং পূর্বে বর্ণিত নির্বাচনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সামর্থ্য অর্জনের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন লাভ করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর ক্ষেত্রে প্রায় সব উপাদানই অনুপস্থিত। তবে বলা হয়ে থাকে যে, পুরুষের অনুরূপ মনমানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর জন্য যেসব ব্যক্তি বা যারা পুরুষতাত্ত্বিক মূল্যবোধ আত্মস্থ করেন, তাদের জন্য সংসদে প্রবেশের পথ অতটা দুর্গম নয়।
৩. সংরক্ষিত মহিলা আসন : উন্নয়নশীল দেশগুলোর রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে প্রবেশেরৃবিকল্প বা পরিপূরক রাস্তা হলো সংরক্ষিত আসন পদ্ধতি। সংরক্ষিত আসন ব্যবস্থার নির্বাচন পদ্ধতি নারীর রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চয়ে সহায়ক হয়নি। রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর জোরদার অবস্থান বা অস্তিত্ব তৈরির লক্ষ্যে সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার। এ আসনগুলোতে তৃর্ণমূল পর্যায়ের অর্থাৎ স্থানীয় ভোটদাতাদের সাথে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে অব্যাহত অভিযোগ সৃষ্টির যে দাবি নারী আন্দোলনের রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলো বলতে গেলে তা উপেক্ষাই করে এসেছে বিভিন্ন সময়ে।
৪. রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি ইশতেহারে নারী : ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দুটি মূলৃদলই তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে নারী আন্দোলন কর্তৃক উত্থাপিত দাবি সংযোজন করেছিল। তাছাড়া তারা নারীর ভোটকে আকর্ষণও করেছে। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তীকালে নানা ধরনের সাংবিধানিক সমস্যা ও তালবাহানা উত্থাপন করা হয়েছে। নারী সংগঠন এবং নারীবাদী আন্দোলন জোটগুলোর মধ্যে সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ও নির্বাচন পদ্ধতি, নির্বাচনি এলাকার আয়তন সম্পর্কিত কিঞ্চিৎ মতপার্থক্যের কারণে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংশোধনীর পূর্বশর্ত হিসেবে এ ইস্যুগুলোতে নারীসমাজের ঐকমত্য সৃষ্টির কথাও বলা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের সকল সংশোধনীই যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত হয়েছে তা নয়। এ শর্ত কেবল নারীদেরকে কৌশলে অধিকার হতে বঞ্চিত করা ছাড়া কিছু নয়।
৫. রাজনৈতিক দলের আদর্শিক কমিটমেন্ট : যে কোনো নির্বাচনি ইশতেহার একটি রাজনৈতিক দলের আদর্শিক কমিটমেন্টের বহিঃপ্রকাশ। এর মাধ্যমে দল নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে স্বীয় আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায়, সামাজিক, অর্থনৈতিক নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। বলাবাহুল্য, আমাদের দেশের নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর রাজনীতি এসব সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়কে ঘিরে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরি হয় না বললেই চলে। তবু নির্বাচনি ইশতেহারে রাজনৈতিক দল কর্তৃক অগ্রগণ্য বিষয় বলে বিবেচিত ইস্যুসমূহ স্থান পায়। এ কারণে নির্বাচনি মেনিফেস্টো রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট বলে পরিগণিত হয়ে থাকে।
৬. লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিরসনে : সকল নারীই নিজস্ব সত্তা, অধিকার ও বৈষম্য বঞ্চনার উপলব্ধি সচেতনভাবে ধারণা করেন, সমাজে সেটা নাও হতে পারে। নারীবাদী চেতনাসমৃদ্ধ নারী লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য নিরসনে প্রয়াসী হন এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রের পরিধি।অনুঘটকের ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হন। তিনি চেষ্টা করেন, পরিবেশ ও প্রতিষ্ঠানকে নারী ইস্যুর প্রতি সংবেদনশীল করতে। তাই সমাজে বৈষম্য দূর করতে হলে সংখ্যার হিসাবের সাথে সচেতন নারী সত্তার সংমিশ্রণ হতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনারৃপরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের মূল স্রোতের দুটি বৃহৎৃরাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের ক্ষমতা ধারণ করে আছেন দু’জন নারী। ১৯৯১ সাল থেকে তারা পর্যায়ক্রমে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীর ভূমিকায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন। এছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গনে ও দলীয় কাঠামোয় এবং নেতৃত্বের নৈকট্যে অবস্থান করেছেন মুষ্টিমেয় সংখ্যক নারী রাজনীতিক। সার্বিকভাবে তবুও
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে নারীর উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ দুর্বল। বলাবাহুল্য, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীর ভোটকে পুঁজি করে নারী আন্দোলন নিরবচ্ছিন্ন বিরামহীন প্রয়াসের মাধ্যমে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে ক্ষমতায়নের সুযোগ সৃষ্টি করার সক্ষমতা ধারণ করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*