মেরীলিন ফ্রেন্স এর র‍্যাডিক্যাল নারীবাদ আলোচনা কর।

অথবা, র্যাডিক্যাল নারীবাদ সম্পর্কে মেরীলিন ফ্রেন্স এর মতবাদ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মেরীলিন ফ্রেন্স এর র্যাডিক্যাল নারীবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখ।
অথবা, মেরীলিন ফ্রেন্স এর র্যাডিক্যাল নারীবাদ বর্ণনা কর।
অথবা, র্যাডিক্যাল নারীবাদ বিষয়ে মেরীলিন ফ্রেন্স-এর মতামত তুলে ধর।
অথবা, র্যাডিক্যাল নারীবাদ সম্পর্কে মেরীলিন ফ্রেন্স এর ধারণা তুলে ধর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
র‍্যাডিক্যাল নারীবাদ সেক্স এবং জেন্ডার এ দু’য়ের মধ্যে সম্পর্ক স্বীকার করে না। জেন্ডার সেক্স থেকে সম্পূর্ণ পৃথক বলে দাবি করে। আর যখনই নারী ও পুরুষের মধ্যে সমাজ সৃষ্ট বৈষম্য বিলুপ্ত হবে, তখনই
নারীনির্যাতন থেকে মুক্তি পাবে। নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যে নারীসুলভ ও পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যের একত্র সমাবেশ অর্থাৎ, Androgyny প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়। কিন্তু তথাপি তাদের মধ্যে মত ও পথের বিভিন্নতা বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে মেরীলিন ফ্রেন্স ও মেরি ডেলীর র‍্যাডিক্যাল ব্যক্তিত্বের মতামত আলোচনার অপেক্ষা রাখে ।
র্যাডিক্যাল নারীবাদ : উদারপন্থি নারীবাদ সমাজসংস্কারের মাধ্যমে নারীমুক্তিতে বিশ্বাসী। র‍্যাডিক্যাল নারীবাদ সংস্কারে বিশ্বাসী নয়। র‍্যাডিক্যাল নারীবাদ সম্পর্কে মেরীলিন ফ্রেন্স ও মেরি ডেলী গুরুত্বপূর্ণ মতামত ব্যক্ত করেছেন। নিম্নে তাঁদের মতামত ব্যক্ত করা হলো :
মেরীলিন ফ্রেন্স এর অভিমত : মেরীলিন ফ্রেন্স একটু ভিন্নধর্মী। কিন্তু কেন্ট ও শুলামিথ প্রজনন তথা জীববিজ্ঞানকে নারী পুরুষ বৈষম্যের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, কেবল প্রকৃতি তথা জীববিজ্ঞান তথা প্রজনন নারী পুরুষ ভেদাভেদের একমাত্র কারণ নয়, অন্যতম কারণ। মেরীলিন ফ্রেন্সের মতামত নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. উভয় লিঙ্গ মানুষ গড়ে তোলে : কেন্ট ও গুলামিথের ন্যায় মেরীলিন নারী পুরুষকে নারীসুলভ ও পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বা উভয়লিঙ্গ ব্যক্তিমানুষ রূপে গড়ে তোলার পক্ষপাতী। কিন্তু কেন্ট ও তলামিথের সাথে তার তফাৎ এই যে, মেরীলিনের Androgynous বা উভয়লিঙ্গ মানুষের মধ্যে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যের তুলনায় নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য অধিক এবং অধিক সংখ্যায় সন্নিবেশিতহবে। কারণ নারীর ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্যগুলো পুরুষের ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য অপেক্ষা শ্রেয়তর ও উত্তম।
২. সমন্বয় সাধন : মেরীলিন বিশ্বাস করেন যে, “পিতৃতান্ত্রিক সমাজ পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যের যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছে, নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যের সাথে তার সমন্বয় অত্যাবশ্যক।” তবে এ সমন্বয় সাধনের পূর্বে প্রতিটি পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, সেটি সমন্বয়যোগ্য কি না। প্রয়োজনে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যগুলোকে পুনঃব্যাখ্যা করে তাদের সমন্বয় উপযোগিতা নিরূপণ করতে হবে।
৩. নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য : মেরীলিন কেন্ট ও শুলামিথের সাথে একমত যে, নারীর উপর পুরুষের নির্যাতন থেকে আধিপত্যের অন্যান্য ব্যবস্থাগুলোর সূচনা হয়েছে। নারীর উপর পুরুষের আধিপত্যের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা সম্ভব। হলে সকল ধরনের আধিপত্য ন্যায্য গণ্য করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে Marilyn French তাঁর ‘Beyond Power. On
Women, Men and Morals’ গ্রন্থে বলেছেন, “Stratification of men above women in time leads to stratification of classes, an elite rules over people. ” নারীর উপর পুরুষের স্তরবিন্যাস সকল শ্রেণির স্তরবিন্যাসের সূচনা করে। একটি অভিজাত শ্রেণি জনগণের উপর আধিপত্য করে।
৪. আধিপত্যমূলক ক্ষমতা (Power over) : আধিপত্যমূলক ক্ষমতার মূলনীতি পিতৃতন্ত্রের ভিত্তি। কাজেই পিতৃতন্ত্রের বিশ্ব পুরুষসুলভ বিশ্ব, যেখানে সকল ক্ষমতা একটি পুরুষসুলভ গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত থাকে। পিতৃতন্ত্র এমনভাবে কাজ করে, যাতে এ ক্ষমতা পুরুষের হাতে থাকে। আধিপত্যমূলক ক্ষমতার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য কর্মপন্থা নির্দেশ করে ক্ষমতা প্রয়োগের প্রক্রিয়া কিন্তু ক্ষমতা প্রয়োগের ফলাফল বিচার বিবেচনায় নেয়া হয় না।
৫. সুখ (Power Pleasure) : নারীসুলভ বিশ্বের ভিত্তি Pleasure with বা সুখ মূলনীতি। এখানে একটি গোষ্ঠী অন্যসব গোষ্ঠীর হয়ে কথা বলার সামর্থ্য রাখে। সকল মত ও পথের জন্য দ্বার খোলা থাকে, এমনকি পরস্পর বিরোধী মতেরও স্থান হয়। তাই বলা যায় যে, এক গোষ্ঠী কর্তৃক অপর সকল গোষ্ঠীর পক্ষ সমর্থন করে কথা বলার সামর্থ্য, যাকে
তিনি বলেছেন, Pleasure with বা সুখ।
৬. ভারসাম্য সৃষ্টি : পুরুষসুলভ Power over গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই মেরীলিন দাবি করেন যে, “একজন androgynous ব্যক্তির মধ্যে Pleasure with এবং Power over এর ভারসাম্য সৃষ্টি করা সমীচীন হবে না।” Power over কে Power to তে রূপান্তরিত করে Pleasure with ও Power to এর মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টি করতে হবে। মেরীলিনের মতে, Power to পুরুষসুলভ Power over এর নারীসুলভ বৈশিষ্ট্যে রূপান্তরিত সংশোধিত রূপ।

উপসংহারঃ উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, র‍্যাডিক্যাল নারীবাদের অন্যতম লক্ষ্য পিতৃতন্ত্রের পতন এবং স্ত্রীর সমতা বিধান। ব্র্যাডিক্যাল নারীবাদ নারীমুক্তি প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াসী। যেসব নারীবাদী দার্শনিক র‍্যাডিক্যাল নারীবাদের মাধ্যমে নারীমুক্তি কামনা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মেরীলিন ফ্রেন্স। মেরীলিন ফ্রেন্স তার দর্শনে
সুন্দরভাবে নারীমুক্তির পথ নির্দেশ করেছেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*