মাঠকর্ম সংস্থাপনে শিক্ষকদের/ মাঠকর্ম সুপারভাইজারদের জন্য নির্দেশিকা কয়টি ও কী কী?

অথবা, মাঠকর্ম সংস্থাপনে শিক্ষকদের/ মাঠকর্ম সুপারভাইজারদের জন্য নির্দেশিকাসমূহ কী কী?
অথবা, মাঠকর্ম সংস্থাপনে শিক্ষকদের জন্য নির্দেশিকাসমূহ কি কি?
অথবা, মাঠকর্ম সংস্থাপনে সুপারভাইজারদের জন্য নির্দেশিকাসমূহ তুলে ধর।
উত্তর।। ভূমিকা :
সমাজকর্মে কতিপয় নীতিমালা, মূল্যবোধ, আদর্শ ও পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো সমাজকর্মীদের মেনে চলতে হয়।অন্যদিকে মাঠকর্ম সংস্থাপনের জন্যও কতিপয় নির্দেশিকা রয়েছে। এ নির্দেশিকা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এজেন্সি তত্ত্বাবধায়কসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই মেনে চলতে হয়।
মাঠকর্ম সংস্থাপনে শিক্ষকদের/ মাঠকর্ম সুপারভাইজারদের জন্য নির্দেশিকা
University of South Australia – এর মতে মাঠকর্ম সংস্থাপনে শিক্ষকগণকে ৬টি নির্দেশিকা মেনে কাজ করতে হয়। যথা:
১. মাঠকর্মের জন্য ধারণাগত কাঠামো প্রতিষ্ঠা : মাঠকর্ম সংস্থাপনের জন্য ধারণাগত কাঠামো তৈরি করতে হবে।এটি হবে শিক্ষা ও শিখনের নীতির ভিত্তিতে।এর মাধ্যমে পেশাগত শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে ৫টি নীতি মেনে চলতে হয় । যথা :
ক. অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা;
খ. শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক শিখন;
গ. প্রতিক্ষেপক অনুশীলন;
ঘ. সক্রিয় শিখন ও
ঙ. অনুশীলন মানদণ্ড ।
২. মাঠকর্ম শিক্ষাদানে ভূমিকা : শিক্ষকগণকে মাঠকর্ম শিক্ষাদানের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সাথে লিয়াজোঁ স্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে সেখানে বহি:তত্ত্বাবধায়কের সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের ভিত্তিতে শিক্ষা দিতে হবে। তাছাড়া এজেন্সি ও সমাজকর্ম বিভাগের যৌথ উদ্যোগেও এ কাজটি সমাধা করা যেতে পারে। দৈনন্দিন কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শিক্ষানবিসদের কাজের ভুলত্রুটিও এ পর্যায়ে সংশোধন করে দিতে হবে।শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় শিক্ষণও এর অন্তর্ভুক্ত।
৩. শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও তত্ত্বাবধান : সংস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। কাকে কোন প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হবে, সেখানে তার কাজ কি হবে,কিভাবে সে কাজ করবে, কাজে কোন সমস্যা হলে তা কিভাবে মোকাবিলা করা হবে এসব বিষয় সমাজকর্মীকে পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। তাছাড়া শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের কাজে হস্তক্ষেপের বিষয়টিও এখানে মাথায় রাখতে হয়। অন্যদিকে সুপারভিশনের ক্ষেত্রে কতিপয় নীতি মেনে চলতে হয় । যথা :
শিখন হবে সামাজিক । এটি সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
শিক্ষার্থীরা একে অপরের সাথে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিখবে
সমবয়সী, বয়স্ক অথবা বিশেষজ্ঞরা শিখণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে ।
কো-অপারেটিভ এবং পিয়ার গ্রুপ কার্যক্রম শিখনের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষার্থীরা অধিক শিখতে পারবে যদি তারা উদ্ভাবন করতে পারে এবং পারস্পরিক কথা বলতে হবে।শিক্ষকগণকে এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন দপ্তর, জটিল ঘটনা, প্রসেস রেকর্ড, টিউটোরিয়াল ওয়ার্ক ইত্যাদি সম্পর্কে সংস্থাপনের পূর্বেই শিক্ষানবিস সমাজকর্মীদের জ্ঞান প্রদান করতে হয়। একটি সমাজকর্ম শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ফিল্ড এডুকেশন স্টাফ থাকে । তাদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করতে হয়। তাছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রেরণ করতে হয় তাদের সাথে পূর্ব যোগাযোগ ও একটি সমঝোতামূলক চুক্তি করতে হয়।
৪. যথাযথভাবে সংস্থাপন : মাঠকর্ম সংস্থাপনের জন্য এজেন্সি নির্ধারণ করে সেখানে প্রেরণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।এখানে মাঠকর্ম সুপারভাইজারদের পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয় ।
৫. সংস্থাপনে সমস্যাসমূহ : অনেক সময় শিক্ষার্থীদের মাঠকর্মে কোন সংস্থায় নিয়োগ করলেও সেখানে মূল্যবোধ ভিন্নতা,সমাজকর্মের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থা, শিক্ষার্থীদের কর্ম সম্পাদনে বিঘ্নতা, নির্দিষ্ট কর্ম করতে না পারা বা সে কর্ম সম্পাদনে সমস্যা সৃষ্টি, এজেন্সির সহযোগিতা প্রাপ্তিতে সমস্যা ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীদের মাঠকর্ম প্রশিক্ষণে সমস্যা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে এজেন্সি তত্ত্বাবধায়কের সাথে আলোচনা করে বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক কর্ম পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দিতে পারেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষার্থীর ব্যর্থতা খতিয়ে দেখে তা সমাধানের দিক নির্দেশনা দিতে পারেন।এতেও সমস্যার সমাধান না হলে এবং সংস্থায় কাজ করার মতো পরিবেশ না থাকলে শিক্ষার্থীদের সংস্থাপিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রত্যাহার করে বিকল্প প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা যেতে পারে।
৬. ব্যবহারিক সংস্থিতি : মাঠকর্ম একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এটি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে আলাদা কোর্স ও ক্যারিকুলাম অনুযায়ী হয়ে থাকে।আমাদের দেশে অনার্স চতুর্থ বর্ষ, মাস্টার্স প্রিলিমিনারি (যারা ডিগ্রি পাস কোর্স থেকে আসে শুধু তাদের জন্য) এবং মাস্টার্স শেষ পর্বের শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পর মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়।প্রতিটি ক্ষেত্রে ৯০ কর্মদিবস নির্ধারণ করে দেয়া হয় যার মধ্যে তাদেরকে ৬০ কর্ম দিবস মাঠকর্ম অনুশীলনে নিয়োজিত থাকতে হয় । প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা হিসেবে তাদেরকে মোট ৪২০ কর্মঘণ্টা কাজ করতে হয় ।
উপসংহার : মাঠকর্মের জন্য শিক্ষার্থীদের কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঠাতে হবে।এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সেখানে যাবার পূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে এই মর্মে নিশ্চিত হতে হবে যে তারা শিক্ষার্থীদের সাদরে গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করছে। এরপর সেখানে শিক্ষার্থীরা গেলে ফিল্ড সুপারভাইজার তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবেন। পরিচয় পর্ব শেষ হলে শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক সুপারভাইজারের সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং তারপর তারা আলোচনা সাপেক্ষে করণীয় ঠিক করবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*