মরমি দর্শন বলতে কী বুঝ?

অথবা, মরমি দর্শন কী?
অথবা, মরমি দর্শনের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, মরমি দর্শন কাকে বলে?
অথবা, মরমি দর্শন সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর।৷ ভূমিকা : মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন প্রাণী, বুদ্ধিবৃত্তির স্বাভাবিক আকর্ষণেই মানুষ জানতে চায় অজানাকে,উন্মোচন করতে চায় তার সৃষ্টি ও বৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর অপার রহস্যকে। জানতে বা উপলব্ধি করতে কিংবা একাত্ম বা মিলিত হতে চায় সেই পরম সত্তার সাথে যিনি সৃষ্টি করেছেন এ জগৎ সংসারকে। কিন্তু এ রহস্য উন্মোচন, উপলব্ধি বা লিনের উপায় কি? এ প্রশ্নে সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে। চিন্তাশীল মানুষের সুসংগঠিত চিন্তার ফসল হিসেবে যে সকল তত্ত্ব বা যতবাদের উদ্ভব হয়েছে তন্মধ্যে মরমিবাদ অন্যতম।
মরমিবাদ : ইংরেজি Mysticism কথাটির বাংলা প্রতিশব্দ মরমিবাদ। সাধারণত দর্শনে মরমিবাদ বলতে এক ধরনের আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতাকেই বুঝানো হয়। এ মতবাদ অনুসারে, মরমি অভিজ্ঞতা বা স্বজ্ঞাই জ্ঞানের যথার্থ উৎস বা পদ্ধতি। এ মতে, ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা বা বিচারবুদ্ধি নয়, বরং মরমি অভিজ্ঞতা বা স্বজ্ঞার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায় জগৎ জীবন ও পরম সত্তাকে। এ উপলব্ধি ব্যক্তির আত্ম-অভিজ্ঞতামূলক এমন অনুভূতি যা প্রচলিত ভাষায় ব্যাখ্যা করা প্রায় অসম্ভব। অর্থাৎ মরমি অভিজ্ঞতা নির্দেশ করে জ্ঞেয়বস্তুর এমন চেতনা বা গভীর অভিজ্ঞতাকে যেখানে জ্ঞাতা অতিক্রম করে। যায় অভিজ্ঞতার চলমান জগতের সব বহুত্ব ও বিরোধকে এবং একাত্মবোধ করেন জগৎ, জীবন ও পরম সত্তার সঙ্গে এর জন্য দরকার কঠিন, কঠোর ও গভীর অনুশীলন বা সাধনার অব্যাহত শ্রম ও অনুশীলনের ফলে অর্জিত অভিজ্ঞতার এর চূড়ান্ত পর্যায়ে জ্ঞানের সাধক লাভ করেন মরমি অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই মরমি সাধক কোনো কোনো বিরল মুহূর্তে বুদ্ধির পর্যায় অতিক্রম করে সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন পরম সত্তার এবং উপলব্ধি করেন তাঁর সাথে মিলনের অনবদ্য অনুভূতি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, দর্শনের ইতিহাসে মরমিবাদকে স্বজ্ঞাবাদ নামক জ্ঞানতাত্ত্বিক মতবাদের সাথে একীভূত করে দেখা হলেও মরমিবাদ ধর্মাশ্রয়ী একটি মতবাদ হিসেবেই মানব সভ্যতায় বিকাশ লাভ করেছে। বিশেষ করে বাঙালির দর্শন চিন্তায় মরমিবাদ বলতে আধ্যাত্মিক সাধন বলে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতার সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত অতীন্দ্ৰিয় মতবাদকেই বুঝানো হয় যা মূলত ধর্মীয় সাধন ক্রিয়ার সাথে যুক্ত।