বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ বলতে কী বুঝ? এর বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য আলোচনা কর ।


অথবা, আধেয় বিশ্লেষণ কী? আধেয় বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্য উল্লেখপূর্বক উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, আধেয় বিশ্লেষণ কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট ও উদ্দেশ্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
সাম্প্রতিককালে গবেষকগণ সমাজ গবেষণায় বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেন । কিন্তু এর প্রয়োগ সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে সীমাবন্ধ ছিল, যদিও এটা একটি সামাজিক বিজ্ঞানের একটি পদ্ধতি । মানুষের গণসংযোগ ধারা, প্রক্রিয়া এবং এর প্রভাব জানার জন্য এ পদ্ধতি বেশ কার্যকর। তবে মানুষের অন্যান্য সামাজিক আচরণের স্বরূপ বিশ্লেষণেও বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ প্রয়োগ উপযোগী ।
বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ : গণযোগাযোগকারী যার সাথে যোগাযোগ করেছেন, যে বিষয়ে বা যে উদ্দেশ্যে যোগাযোগ করা হচ্ছে তার প্রক্রিয়া ও প্রভাবের উপর যে ধরনের গবেষণা করা হয় তাকেই এককথায় বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ পদ্ধতি বলা চলে ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন সময় তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন । নিম্নে তাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মতামত তুলে ধরা হলো :
এফ. এন. কার্লিংগার (F. N. Kerlinger) তাঁর ‘Behavioural Research’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, “The content analysis is a method for studying and analysing communication in a systematic, objective and quantitative manner to measure variables.” অর্থাৎ, বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ হলো গণযোগাযোগ ও তার চলক পরিমাপ করার জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের একটি পদ্ধতি ।
হ্যানস রাজ (Hans Raj) তাঁর ‘Theory and Practice in Social Research’ গ্রন্থে বলেন, “Content analysis is a method of analysis with which an attempt is made to convert the symbolic behaviour into scientific data.” অর্থাৎ, আধেয় বিশ্লেষণ হলো বিশ্লেষণের এমন একটি পদ্ধতি, যা প্রতীকী আচরণকে বিজ্ঞানভিত্তিক উপাত্তে রূপান্তরিত করে ।
ও. আর. হোস্টি (O. R. Holsti) এর মতে, “Content analysis as a procedure for applying scientific method of documentary evidence.” অর্থাৎ, আধেয় বিশ্লেষণ হলো দলিল প্রমাণাদির ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের একটি প্রক্রিয়া ।
ফিলিপ্‌স (Phillips, 1985) এর মতে, “Content analysis is the research procedure for relating symbolic data to their context.” উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, আধেয় বা বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ বৈচিত্র্যপূর্ণ সমস্যাবলি অনুসন্ধানে একটি বহুমুখী পদ্ধতি । একে পর্যবেক্ষণ পরিমাপনের পদ্ধতিও বলা হয়। বর্তমান বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটাচ্ছে। তাই যোগাযোগ মাধ্যমে উপযোগিতা ও ক্ষতিকর প্রভাব সমাজজীবনে কতটা ভূমিকা রাখছে তা নিরূপণ করার জন্য সমাজ গবেষকগণ বর্তমানে এ পদ্ধতির দিকে বেশ ঝুঁকে পড়েছেন।
বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের বৈশিষ্ট্য : আধেয় বিশ্লেষণে চলক পরিমাপ করা হয় না, বরং এটি যোগাযোগমূলক প্রপঞ্চের আপেক্ষিক গুরুত্ব অথবা গণসংখ্যাকে নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা তাকে অন্যান্য পদ্ধতি থেকে পৃথক করেছে । নিম্নে এ বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি সমাজ গবেষণায় ব্যবহৃত সর্বাধুনিক পদ্ধতি ও কৌশল ।
২. এটি গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি শ্রেণিবদ্ধ করে ।
৩.এ পদ্ধতি সামাজিক ঘটনা বর্ণনা ও ব্যাখ্যার জন্য একান্ত সহায়ক ।
৪. এটি তথ্যকে সংখ্যাত্মকভাবে উপস্থাপন করে ।
৫. এ পদ্ধতি নিজস্ব অনুসন্ধান, নকশা প্রণয়ন এবং তা অনুসরণের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে ।
৬.এ পদ্ধতি পূর্বানুমান তৈরি ও যাচাইয়ে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে ।
৭.এটি বৈচিত্র্যময় সামাজিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে ।
৮.এটি প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে বা ফলাফলকে সারণিবদ্ধ করে।
বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যসমূহ : কাঠামোগত পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার সমতুল্য হলো বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ । পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাথে এর পার্থক্য হলো এখানে কাঠামোবদ্ধ বিশ্লেষণের কাজ করা হয়। এখানে বিভিন্ন ডকুমেন্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যাবলি সাংকেতীকরণের সাহায্যে সংখ্যাতাত্ত্বিক উপাত্তে রূপান্তরিত করা হয়। বার্নাড বেরেলসন ১৯৫২ সালে বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যগুরোকে এর কার্যাবলি প্রয়োগ ইত্যাদির সাথে সম্পৃক্ত করে নিম্নলিখিতভাকে তুলে ধরেছেন :
১. বিষয়বস্তুর বৈশিষ্ট্যভিত্তিক উদ্দেশ্য :
ক. যোগাযোগের মান নির্ণয় করা ।
খ. যোগাযোগের বিষয়বস্তুর ধারা চিহ্নিত করা

গ. বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ও তার স্তরগুলোর তুলনা করা
ঘ. যোগাযোগ মান প্রয়োগ করা।
ঙ. আগ্রহ ও তাৎপরতাভিত্তিক জ্ঞানের উন্নয়ন খুঁজে দেখা।
চ. যোগাযোগ বিষয়বস্তুর লক্ষ্যভিত্তিক অগ্রগতি নিরূপণ করা ।
ছ. কৌশলগত গবেষণা কাজে সহায়তা করা।
জ. যোগাযোগ বিষয়বস্তুর আন্তর্জাতিক পার্থক্য তুলে ধরা ।
২. বিষয়বস্তুর গঠনভিত্তিক উদ্দেশ্য :
ক. গঠনযোগ্যতা পরিমাপ করা ।
খ. রটনা কৌশল প্রকাশ করা ।
গ. উন্নতমানের ফিচার খুঁজে বের করা।
৩. বিষয়বস্তুর প্রণেতা সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য :
ক. রাজনৈতিক ও সামরিক সংবাদ তথ্য নিরাপদ করা ।
খ. বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা নির্ধারণ করা।
গ. বিভিন্ন যোগাযোগ স্থাপকের বৈশিষ্ট্য ও অভিপ্রায় চিহ্নিত করা
ঘ. রটনার অস্তিত্ব ও সন্ধান করা।
৪. বিষয়বস্তু পাঠক সংশ্লিষ্ট উদ্দেশ্য :
ক. মনোযোগের লক্ষ্য স্থির করা।
খ. বিভিন্ন দলগত জনসংখ্যার আগ্রহ, মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ প্রতিফলিত করা ।
গ. যোগাযোগের প্রতি বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটাচ্ছে। তাই যোগাযোগের মাধ্যমের উপযোগিতা ও ক্ষতিকর প্রভাব সমাজ জীবনে কতটা ভূমিকা রাখছে তা নিরূপণ করার জন্য সমাজ গবেষকগণ বর্তমানে এ পদ্ধতির দিকে বেশ ঝুঁকে পড়েছেন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*