বিংশ শতাব্দীর বণিক সভ্যতার কিছুমাত্র স্পর্শ তাহা ব্যাহত করে নাই।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে সংগৃহীত।
প্রসঙ্গ : দীর্ঘ শতাব্দী জুড়ে অপরিবর্তনের ঐতিহ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ নিভৃত গ্রামবাংলার পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে গল্পকার এ বাক্যটি ব্যবহার করেছেন।
বিশ্লেষণ : মাউলতলা দক্ষিণ বাংলার একটি নিভৃত গ্রাম। বাংলাদেশের যে গ্রামগুলো শত শত বছর ধরে সরল এবং সামাজিক ভাঙাগড়াকে উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারায় টিকে আছে মাউলতলা তারই একটি। বিরাট এ দেশের ইতিহাসে রাজ্যের ভাঙাগড়া বহুবার ঘটেছে। ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, দিল্লিতে বহু নতুন নতুন রাজবংশের উত্থান ঘটেছে। মগ, পর্তুগীজ বর্গীর আক্রমণ অনেককেই কাঁপিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এ মাউলতলায় তার কোনই প্রভাব পড়ে নি। বাইরের কোন তরঙ্গ এখানকার জীবন প্রবাহে সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত কোন আলোড়নই জাগাতে পারেনি। এমনকি ইংরেজ সভ্যতার দুর্দমনীয় গতিও যুদ্ধের পূর্বকার পর্যন্ত এ জীবনধারাকে চঞ্চল করে তুলতে পারেনি। বিংশ শতাব্দীর যে বণিক সভ্যতা গোটা পৃথিবীকে আলোড়িত করেছে, ভারতবর্ষের কৃষ্টি সংস্কৃতির মর্মমূল পর্যন্ত নাড়িয়ে দিয়েছে সেই সভ্যতাও এখানে ব্যর্থ হয়েছে সামান্যতম আলোড়ন সৃষ্টিতে। ইংরেজ আমলের শেষ দিকে এসে শহরের সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মাউলতলা তার প্রায় আদিম নিজস্ব জীবনধারা নিয়েই টিকেছিল। এখানকার মৃত্তিকাসংলগ্ন মানুষগুলো কঠোর পরিশ্রমে ক্ষেতে ফসল ফলাত, ভোগের অধিকার নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করতো, জোর করে ধরে আনা নারীকে বিয়ে করে ভালোবাসার সংসার গড়ত, সামান্য উপলক্ষেই মেতে উঠত উৎসব আনন্দে। এ নিজস্ব ধারার জীবন বৈশিষ্ট্য তারা অক্ষুণ্ণ রেখেছিল ইংরেজ আমলের প্রায় শেষ দিক পর্যন্ত। বণিকের মানদ- দেশের রাজদ- হাতে পারলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত পারেনি মাউলতলার জীবনধারায় পরিবর্তন ঘটাতে।
মন্তব্য : যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রাম-জনপদের জীবনধারায় সহজে বদলায় না। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে সাথে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও জীবনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*