“বাংলা ও বাঙালি” প্রত্যয় দুটি ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ‘বাংলা’ ও ‘বাঙালি’ বলতে কী বুঝায়?
অথবা, বাঙালি ও বাংলা প্রত্যয় দুটি সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর।
অথবা, বাংলা ও বাঙালি ধারণা দুটি সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
অন্যান্য প্রাগ্রসর জাতির মতো বাঙালিরও দর্শনচিন্তার গৌরবময় ঐতিহ্য আছে। বাঙালি দর্শনের সাথে ‘বাংলা’ বা ‘বাঙলা’ এবং ‘বাঙালি’ এ প্রত্যয় দুটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে সম্পর্কিত। বাঙালি দর্শনের পরিচয় জানার সাথে সাথে ভাষা ও ভৌগোলিক এবং জাতিগত পরিচয় জানা আবশ্যক। কেননা বাঙালি দর্শন বলতে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং এ ভূখণ্ডে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর দর্শনকেই বুঝায়।
“বাংলা বা বাঙলা” এবং বাঙালি প্রত্যয় : প্রাচীনকাল থেকেই বাংলা ভূখণ্ডে বাঙালি জাতি বসবাস করছে।সাধারণত বাংলাভাষী জনসাধারণের আবাস ভূমিকে “বাংলা বা বাঙলা” অথবা “বঙ্গদেশ” নামে অভিহিত করা হয় এবং বঙ্গদেশে বসবাসকারী জাতিকে বাঙালি নামে অভিহিত করা হয়। আলোচ্য প্রত্যয় সম্পর্কে যতদূর জানা যায় নিম্নে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. ঐতরেয় আরণ্যক : আধুনিক পণ্ডিতদের মতে, “বাংলা বা বঙ্গদেশ” শব্দটির সর্ব প্রাচীন উল্লেখ রয়েছে ঐতরেয় আরণ্যকে। এখানে বাঙালিকে “বয়াংসি” বা “কাকপক্ষি” বলে অভিহিত করা হয়েছে। ঐতরেয় আরণ্যকে পুণ্ড্র জনপদেরও উল্লেখ রয়েছে।
২. বৌধায়ন ধর্মসূত্র : বৌধায়ন ধর্মসূত্রে বলা হয়েছে বঙ্গ দেশে আর্য ক্রিয়াকলাপ ‘প্রচলিত না থাকায় ধর্মসূত্রে বঙ্গদেশে গেলে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। এ বিধান বাঙালি জাতির প্রতি তাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রকাশ। বৌধায়ন ধর্মসূত্রের বর্ণনা মতে, পুণ্ড্রদের অবস্থিতি ছিল উত্তরবঙ্গ আর বঙ্গদের মধ্য পূর্ববঙ্গে।
৩. রামায়ণ ও মহাভারত : সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ, মহাভারত এবং উত্তরকালীন অন্যান্য কাব্য, পুরাণ ও স্মৃতি ইত্যাদিতে বঙ্গদেশের উল্লেখ আছে।
৪. বঙ্গ ও বঙ্গাল শব্দের ব্যবহার : বঙ্গ ও বঙ্গাল শব্দ সমার্থক কি না সে সম্পর্কে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেন।আবুল ফজলের মতে, ‘বঙ্গ’ শব্দের সাথে ‘আল’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ‘বঙ্গাল’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। জিয়াউদ্দীন বারানি এবং গিয়াসউদ্দীন বলবন ‘বাঙ্গালা’ বঙ্গ অর্থে প্রয়োগ করেছেন।
৫. বঙ্গ ও বাংলার অর্থ : প্রাচীনকাল থেকেই ‘বঙ্গ’ শব্দ দ্বারা এক বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডকে বুঝাত। ভাগীরথী নদীর পূর্বদিকে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, গঙ্গা, নিয়েই প্রাচীন বাংলা গড়ে উঠে।
৬. পণ্ডিতদের অভিমত : বাঙালির উৎপত্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বাঙালিকে একটি আত্মভোলা জাতি বলে অভিহিত করেন। অধ্যাপক বাঙালির উৎপত্তি সম্পর্কে নৃতাত্ত্বিক গবেষণায় বলেন, মঙ্গোল ও দ্রাবিড় জাতির সংমিশ্রণে বাঙালি জাতির উৎপত্তি হয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে আমরা বলতে পারি, বঙ্গ থেকেই বাংলা বা বাঙলা এবং বাঙালি প্রত্যয় এসেছে। বাঙালি দর্শনে “বঙ্গ” বা “বাংলা” বা “বাঙলা” এবং “বাঙালি” প্রত্যয় দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বঙ্গ বা বাঙলা দ্বারা ভূখণ্ড এবং বাঙালি দ্বারা ঐ ভূখণ্ডের অধিবাসীদের বুঝানো হয়। এ বঙ্গ ভূখণ্ডের বাঙালিদের দর্শনকেই বাঙালি দর্শন বলা হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%a5%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6-%e0%a6%a6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*