বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের সুপারিশসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, নারী উন্নয়নকল্পে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের স্বপক্ষে প্রস্তাবগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের সুপরিশমালা বর্ণনা কর।
অথবা, নারী উন্নয়নকল্পে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের স্বপক্ষে প্রস্তাবগুলো আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ একেবারে স্বল্প না হলেও যথেষ্ট নয়। যারা রাজনৈতিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি ও অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছেন তারাও কাঙ্খিত বা উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছেন। এর পশ্চাতে কতিপয় কারণ ক্রিয়াশীল। রাজনৈতিক দল, দলের গঠনতন্ত্র, সমাজব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালা ও মূল্যবোধ, শিক্ষার স্তর, উদারতার অবস্থা প্রভৃতির কারণে নারীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছেন না বা করলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই এক্ষেত্রে বিভিন্ন নারী সংগঠন কতিপয় সুপারিশ পেশ করেছেন যা বাস্তবায়ন জরুরি।
১. রাজনীতিতে অধিক হারে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রচারমাধ্যমসহ রাজনৈতিক দলসমূহকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
২. নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে Nomination দেয়ার সময় নারী ও পুরুষের অনুপাত সমান করতে হবে।
৩. নারীর রাজনৈতিক অধিকার অর্জন ও প্রয়োগ এবং এর সুফল সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।
৪. রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণে তাগিদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে নারী সংগঠনসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রচার অভিযান গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
৫. স্থানীয় সরকার পদ্ধতিতে সকল পর্যায়ে বর্ধিত সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৬: জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত রেখে সেখানে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৭. সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ স্তর মন্ত্রিপরিষদে সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারার অধীনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী নিয়োগ করা।
আলোচ্য সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো জরুরি ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে। যথা :
১. নারী উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠন : নারীর সমতা, উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় অবকাঠামো যেমন- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে হবে।
২. জাতীয় মহিলা উন্নয়ন পরিষদের কার্যাবলি বাস্তবায়ন : নারী উন্নয়ন নীতি নির্ধারণ, উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার জন্য ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট যে জাতীয় মহিলা উন্নয়ন পরিষদ গঠন করা হয়েছে, তার কার্যপরিধি নিম্নরূপে হতে পারে :
ক. আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন।
খ. মহিলাদের আইনগত অধিকার এবং মহিলাদের নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়াবলি সম্বন্ধে নীতি প্রণয়ন।
গ. সকল প্রকার কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের স্বার্থসংরক্ষণ, অংশগ্রহণ ও তাদের ভাগ্য উন্নয়ন সম্পর্কে গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ ।

৩. সংসদীয় কমিটি : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক নারী উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় স্থানীয় কমিটি গঠন করতে হবে, যা নারী উন্নয়ন কর্মসূচির পর্যালোচনা করে নারী অগ্রগতির লক্ষ্যে সরকারকে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ প্রদান করবে।
৪. থানা ও জেলা পর্যায় : নারীর অগ্রগতি এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ের প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, স্থানীয় সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দপ্তর ও এনজিওদের কার্যক্রমের সমন্বয়সাধন ও নারী উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
৫. তৃণমূল পর্যায় : তৃণমূল পর্যায়ে গ্রাম ও ইউনিয়নের নারীকে স্বাবলম্বী দল হিসেবে সংগঠিত করতে হবে। এ দলসমূহকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার আওতায় নিবন্ধকৃত সংগঠন হিসেবে রূপ দেয়া যেতে পারে।
৬. নারী উন্নয়নে NGO ও সামাজিক সংগঠনের সাথে সহযোগিতা : প্রকৃত নারী উন্নয়ন একটি ব্যাপক কাজ। সরকারের একার পক্ষে এ কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা কার্যত অসম্ভব। তাই এ কাজে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াস নেয়া যেতে পারে।
৭. নারী ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক গবেষণা : নারী উন্নয়ন ও সমতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা পরিচালনার জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নারী উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন এবং নারী শিশুদের অধিকার সম্পর্কিত গবেষণা উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
৮. নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান : ঢাকায় নারী উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণসহ বিভাগ, থানা ও জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।
৯. সামাজিক সচেতনতা : নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে সামাজিক সচেতনতা কর্মসূচির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
১০. নারীনির্যাতন প্রতিরোধে কঠিন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন : নারী উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীনির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসূচির উপরও বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ উদ্দেশ্যে সুপরিকল্পিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রকে নির্যাতন বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপসহ বিভিন্ন ধরনের নারী নির্যাতনকারীদের জন্য বাংলাদেশের শাস্তির বিধান বেশ কঠিন থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আইনকে আরো কঠোর করতে হবে এবং প্রয়োজনে উন্মুক্ত ময়দানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান প্রচলন করতে হবে।
১১. সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা : নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায় থেকে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, যুগে যুগে নারীরা অবহেলিত হয়েছে। নারীরা পুরুষের ভোগের সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে তাদেরকে অনেকটা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সমাজ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের প্রতি সকল ধরনের বৈষম্য বিলোপের লক্ষ্যে প্রণীত নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রয়াস কেবল তখনই সফলতা অর্জন করবে যখন সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ জাতিসংঘ গৃহীত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের (CEDAW) সবকয়টি এবং ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনে তা বাস্তবায়িত করবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*