বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুসারে নারীদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে আলোচনা কর ।

অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামি আইন ও অনুশাসনের ভিত্তিতে নারীদের অধিকার সম্পর্কে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, বাংলাদেশে মুসলিম বিধান অনুসারে নারীদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে ইসলামি আইন অনুসারে নারীদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের মুসলিম নারীরা কী কী আইনগত অধকার ভোগ করে থাকে? আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামি আইন অনুসারে নারীর আইনগত অধিকার সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী। যদিও নারীরা অধিকার ভোগ করে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা বৈষম্যমূলক। কেননা নারীদের জীবনের অধিকাংশ অধিকার ভোগের বেলায় দেখা যায় ধর্মীয় আইনের ব্যাপক প্রভাব। আর রাষ্ট্রীয় আইন এবং ধর্মীয় আইনের মধ্যে যে পার্থক্য বিদ্যমান তা নারী উন্নয়নের পথে বাধা
হিসেবেই কাজ করে। ইসলাম ধর্মে নারীদের অন্যান্য ধর্মের চেয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বেশি অধিকার দেয়া হয়েছে।

ইসলাম বা মুসলিম ধর্ম মতে নারীর আইনগত অধিকার : বাংলাদেশের নারীরা পুরুষদের তুলনায় কেবল পিছিয়েই নেই বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে তারা পুরুষের উপর নির্ভরশীল। এদেশের নারীসমাজ নানারকম নির্যাতন, অত্যাচার, বৈষম্য মুখ বুজে সহ্য করে। যৌতুকের নির্মম অত্যাচারে বিয়ে হয় না অনেক নারীর, আর বিবাহিত নারী প্রতিনিয়তই নির্যাতিত হচ্ছে এ ভয়ানক কু-প্রথার কারণে। কারণ আইনে কি কি অধিকার দেয়া হয়েছে তা তারা জানে না। যদিও কিছু নারী এ সম্পর্কে অবগত কিন্তু এ আইন কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় সে ব্যাপারে তারা প্রায়ই অজ্ঞ। বাংলাদেশে মুসলমানদের বিবাহ, দাম্পত্য সম্পর্ক ও দাম্পত্য জীবনে নারী অধিকার ইসলামি শরিয়ত আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। তবে ইসলামি বিধানের মূল প্রেরণাকে অক্ষত রেখে পরিবর্তিত সময়ের সাথে সংগতিপূর্ণ করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আইন প্রণীত হয়েছে। যেমন-
১. মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) (১৯৩৭);
২. বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, (১৯২৯);
৩. মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, (১৯৩৯);
৪.মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ (১৯৬১);
৫.মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রিকরণ আইন, (১৯৭৯);
৬. মুসলিম পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, (১৯৮৫)।
কাজেই মুসলিম আইনে বিবাহ ও নারীর অধিকারের বিষয়টি এসব আইনে আলোচনায় আনা প্রয়োজন। বাংলাদেশে মুসলিম নারীদের ধর্ম মতে যেসব পারিবারিক আইনগত অধিকার রয়েছে, তা আলোচনা করা হলো :
ক. বিবাহ বা বিয়ে : মুসলিম আইনে বিবাহকে বলা হয়েছে, একটি সামাজিক চুক্তি। এটা ধর্মাচারের কোন অঙ্গ নয়। সুতরাং ইসলামে বিবাহ বা বিয়ে বলতে বুঝায় আইনসিদ্ধ শর্তের মাধ্যমে পুরুষ ও মহিলার বৈধভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সামাজিক দাম্পত্য জীবনযাপন চুক্তি। ইসলামি বিধান অনুসারে বিয়ের জন্য নিম্নলিখিত শর্তাবলির প্রয়োজন হয়-
২. দেনমোহর নির্ধারণ ও প্রদান,
৪. বিয়ের রেজিস্ট্রেশন,
১. বর ও কনের সম্মতি,
৩. দু’জন পুরুষ সাক্ষী,
৫. বর ও কনের বয়স।
খ. ইসলামি আইনে দেনমোহর : বিবাহের পণস্বরূপ যে অর্থ বা সম্পত্তি স্বামী স্ত্রীকে দেন বা দিতে অঙ্গীকার করেন সেই অর্থ সম্পত্তিকে ইসলামি আইনে দেনমোহর বলা হয়। বিবাহে দেনমোহর দেয়ার কথা না থাকলেও ইসলামি আইন স্ত্রীকে দেনমোহর পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে না। স্ত্রীর প্রতি মর্যাদার চিহ্নস্বরূপ স্বামীর উপর ইসলামি আইনে এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। দেনমোহর দু’প্রকার নির্ধারিত ও উপযুক্ত বা স্থগিত দেনমোহর। বিয়ের চুক্তিতে যে দেনমোহর নির্ধারিত হয় তা নির্ধারিত দেনমোহর এবং বিবাহে কোন দেনমোহরের পরিমাণ ধার্য না করা হলে তা স্থগিত দেনমোহর। উপযুক্ত দেনমোহর হিসাবের সময় স্ত্রীর শারীরিক সৌন্দর্য, পরিবারিক অবস্থান, স্বামীর সম্পদ ও যোগ্যতা ইত্যাদি দেখা হয়। পরিশোধের সময় অনুসারে দেনমোহরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয় :
১. তাৎক্ষণিক বা তলবি দেনমোহর এবং
২. বিলম্বিত দেনমোহর।
গ. মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ : মুসলিম বিবাহ একটি চুক্তি এবং অন্যান্য চুক্তির মতো যুক্তিসংগত কারণ থাকলে মুসলিম বিবাহ চুক্তিটিও ভাঙা যায়, যাকে আইনের ভাষায় বিবাহবিচ্ছেদ বলা হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ইসলামে বিবাহবিচ্ছেদ স্বীকৃত। বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অধিকার সমান নয়।
স্বামীর পক্ষে বিচ্ছেদ : স্বামীর পক্ষে বিচ্ছেদ সাধারণত স্বামী আদালতের মাধ্যম ছাড়া স্বেচ্ছায় বা নিজ ইচ্ছায় বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। তবে তাকে সুস্থ মাথায় এ কাজ করতে হবে। এভাবে সংঘটিত বিবাহবিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়।
স্ত্রীর পক্ষে বিচ্ছেদ : স্ত্রী যদি যুক্তিসংগত কারণে বিবাহবিচ্ছেদ নেয়া দরকার মনে করেন, তাহলে আদালতে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ এনে বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করতে হবে। যদি আদালতের কাছে অভিযোগটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে আদালত স্ত্রীর পক্ষে বিচ্ছেদের ডিক্রি দেবেন। নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার দিয়েছে-
১. চার বছর যাবৎ স্বামীর খোঁজখবর না থাকলে;
২. দুই বছর পর্যন্ত স্বামী ভরণপোষণ না করলে বা ভরণপোষণে অবহেলা করলে;
৩.স্বামীর ৭ বছর বা তারও বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ড হলে;
৪. স্বামী নপুংসক বা পুরুষত্বহীন হলে;
৫.কোন মেয়ের অভিভাবক যদি ১৮ বছর হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেন, তাহলে মেয়েটি ১৯ বছর হওয়ার আগে বিবাহ অস্বীকার করে বিবাহ ভেঙে দিতে পারে, তবে যদি মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত না হয়ে থাকে কেবল তখনি বিবাহ অস্বীকার করে আদালতে বিচ্ছেদের ডিক্রি চাইতে পারে।
৬.নিষ্ঠুর ব্যবহার করে স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ করে তুললে এবং তা যদি শারীরিক আঘাত না হয় তবুও
৭. স্বামী যদি স্ত্রীকে অসামাজিক জীবনযাপনে বাধ্য করে;
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রচলিত মুসলিম আইনে নারী, পুরুষের অধিকারে যে বৈষম্য বিদ্যমান, তা দূর করা উচিত। মুসলিম দেশ মরক্কো তাদের দেশে মুসলিম আইন সংস্কার করে উত্তরাধিকার, বিয়ে, তালাক সবক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দিয়েছে। বাংলাদেশে এরকম করা উচিত যাতে নারীরা তাদের অধিকার পুরোপুরি অর্জন করতে পারে। অধিকার অর্জিত হলে তা নারী সালিশি উন্নয়ন, নারী মুক্তির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*