বাংলাদেশে পলি উন্নয়নের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।

অথবা, পল্লি উন্নয়নের সূচনার ইতিহাস পর্যালোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে পল্লি উন্নয়নের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে পল্লি উন্নয়নের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশে পল্লি উন্নয়নের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্রতম দেশ। ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে এদেশের প্রায় ৬০% লোক দারিদ্র্যের শিকার। তাই এদের আর্থাসামজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও গ্রামভিত্তিক উন্নয়ন প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পল্লিউন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নের অংশ। কারণ পল্লিউন্নয়নই এসব উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় উন্নয়নের মাত্রা ও হার নির্ধারণ করে দেয়। তাই বাংলাদেশে পল্লিউন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
পল্লি উন্নয়নের ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ : বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশে পল্লিউন্নয়ন প্রক্রিয়া একদিনের নয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ হতেই কিছু ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠান পল্লি উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। যেহেতু পল্লিউন্নয়নকে উৎসাহিত করা এবং বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় সেহেতু পল্লিউন্নয়নমূলক কর্মসূচিগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল । তাই এগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আকারে দেখা গিয়েছিল। নিম্নে এর সূচনার ইতিহাস সংক্রান্ত আলোচনা করা হলো :
১. ব্রিটিশ আমল : মুঘল শাসনামলে বা তার পূর্বে মানুষ যেখানে বসবাস করত সেখানে চাষাবাদ করতো। পরবর্তী ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে জমিদার তথা জমির মালিককে খাজনা প্রদানের মাধ্যমে চাষাবাদ করার প্রথা চালু করা হয়। এ আইনের দ্বারা তৎকালীন ভারতবর্ষে কৃষকরা নির্যাতিত ও শোষিত হতো। পরবর্তীতে ১৮৫৯ সালে ‘The Rent Act of 1869’ প্রণয়ন করা হয়। এটিতে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যায় ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘Local Self Government Act’ পাস করেন। এর পর ১৯১৯ The Village Government Act’ এর মাধ্যমে সার্কেল অফিসারের তত্ত্বাবধানে ইউনিয়ন বোর্ডকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয় এবং গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য ‘Rural Reconstruction Development’ চালু করা হয়। এ. কে. ফজলুল হকের প্রচেষ্টায় পল্লি উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ব ভারতী (শান্তি নিকেতন) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পল্লি উন্নয়নের পল্লি মঙ্গল চালু করেন।গুরুসদয় দত্ত, নুরুন্নবী চৌধুরী, এন.এইচ. এক ইসহাক প্রমুখ আইসিএস নানা কার্যক্রম গ্রহণ করেন। মহাত্মা গান্ধী ‘Village Republic’ ব্যবস্থা চালু করার কথা বলেন। তিনি বলেন, “গ্রাম স্বনির্ভর হলে দেশ স্বনির্ভর হবে।”
২. পাকিস্তান আমল : পাকিস্তান শাসনামলে পল্লি উন্নয়নের জন্য ব্রিটিশ প্রদত্ত আইনগুলোর সংস্কার সাধন করা হয়। “The East Bengal Estate Acquisilion and Tenancy Act’ এর মাধ্যমে জমিদার প্রথা উচ্ছেদ করা হয় এবং এর মাধ্যমে সংস্কারের দ্বারা কৃষকদের স্বার্থকে সংরক্ষণ করা হয়। গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য আমেরিকার আর্থিক সহায়তায় V-Aid (1953-61) কর্মসূচি চালু করা হয়। কিন্তু আমেরিকার সহায়তা বাদের কারণে এর কার্যক্রম বন্ধ হয়। এরপর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করলে পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লায় এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পেশোয়ারে দুটি V-Aid কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। কিন্তু এটাও বাধাগ্রস্ত হলে তৎকালীন আইসিএসপি অফিসার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভূতপূর্ব অধ্যক্ষ ড. আখতার হামিদ খানের নেতৃত্বে কুমিল্লার কোতোয়ালী থানায় স্থাপন করা হয় কুমিল্লা মডেল।
৩. বাংলাদেশ আমল : কুমিল্লা মডেলকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে পল্লি উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি হাতে নেয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ‘IRDP (Integrated Rural Development Program’ কে জাতীয় কর্মসূচিতে রূপায়ণ করে যার কৌশল ছিল কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকদের সংগঠিত করা এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন নিশ্চিত করা। পরবর্তী ১৯৮২ সালে IRDP কে BRDB বা ‘Bangladesh Rural Development Board’ এ রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে BRDB অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশেষ করে গ্রামীণ কৃষি, সেচ ব্যবস্থা, খাদ্য উৎপাদন, বীজ, সার প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচি প্রদান করার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে আঞ্চলিক উন্নয়ন নিশ্চিত করছে। পল্লি উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের থানা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পল্লিউন্নয়ন যে কোনো দেশের জন্য বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশের জন্য অপরিহার্য। আর এ দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য এ প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ এ দেশের ৮৫% লোক এখনো গ্রামে বসবাস করে যাদের ৮০% প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত। তাই পল্লিউন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*