অথবা, কিভাবে বাংলাদেশে নারী আন্দোলন সফল করা যায়? আলোচনা কর ।
অথবা, বাংলাদেশে নারী আন্দোলন সার্থক করার উপায়সমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে নারী আন্দোলন সফল করার উপায়সমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : পশ্চাৎপদ নারী সমাজে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনের একমাত্র উপায় হলো নারীদের সংগঠিত উপায়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা। বাংলাদেশের নারী সমাজ এক্ষেত্রে পাশ্চাত্যদেশ থেকে বহুদূরে এমনকি উপমহাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ও অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। এখানে নারীরা যে সংগঠিত নয় বা আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করছে না তা নয়। প্রকৃতপক্ষে যে মাত্রায় ও যে প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর নারী সংগঠন সৃষ্টি করা প্রয়োজন ও যে মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সামাজিক বাধাগুলো দূরীভূত করা প্রয়োজন, তা এখানে অনুপস্থিত। সে কারণেই স্বাধীনতার ৪০ বছরেও বাংলাদেশে নারী আন্দোলন সফল বা স্বার্থক হয়নি। নারী আন্দোলনকে সার্থক করে তুলতে হলে অবশ্যই কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতি জরুরি ।
নারী আন্দোলন সার্থক করার উপায় : নারী আন্দোলনের বিভিন্ন Issue গুলোকে সার্থক করার জন্য বাংলাদেশের নারী সংগঠনসমূহ বহু দাবি উত্থাপন করেছে। নিম্নে সেগুলো আলোকপাত করা হলো :
১. সংবিধানের ঘোষিত সমঅধিকার বাস্তবায়ন : বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যেসব নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে, তার সঠিক বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেসব আইন সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে, সেগুলো সংশোধন করতে হবে।
২. জাতিসংঘ ঘোষিত নারী অধিকার সনদের বাস্তবায়ন : নারীর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে জাতিসংঘের ঘোষিত সনদের প্রতি সরকারের পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. শিক্ষাক্ষেত্রে সমানাধিকার : নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিষ্ঠান চালু করতে হবে। শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সময় নারী শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে।
৪. চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকার : চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মেয়েদে জন্য গেজেটেড আসনে ১০% কোটাকে ১৫% এ উন্নীত করতে হবে। গেজেটেড, নন-গেজেটেড সকল ক্ষেত্রে কোটা নির্ধারিত চাকরি মেয়েদের দ্বারা অবিলম্বে পূরণ করতে হবে। জেলাভিত্তিক কোটায় যদি যথেষ্ট সংখ্যক মহিলা না পাওয় যায়, সেক্ষেত্রে অন্য জেলার মহিলা প্রার্থী দিয়ে সে আসন পূরণ করতে হবে। উপজাতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাকরির জন্য নির্ধারিত কোটার শতকরা ১৫ ভাগ পদ উপজাতীয় মহিলাদের দ্বারা পূরণ করতে হবে।
৫. সম্পত্তিতে সমানাধিকার : মুসলিম উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন এবং বাবার সম্পত্তিতে ছেলেমেয়ের সমান অধিকার দিতে হবে। স্বামীর সম্পত্তি বেশি হারে স্ত্রীকে দিতে হবে।
৬. নারীনির্যাতন রোধ : যুগ যুগ ধরে নারীর প্রতি নানা ধরনের নির্যাতন চলে আসছে। পরিবারে তারা বিভিন্ন সময়। শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়। এসিড নিক্ষেপ, নারীদের উপর ধর্ষণসহ নানা প্রকার নির্যাতন করে থাকে। এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীসমাজকে রুখে দাঁড়ানোর জন্য নারীবাদী অনেক সংগঠন বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন করে যাচ্ছে।
৭. নারী সচেতনতা বৃদ্ধি : নারীকে সচেতনভাবে গড়ে তোলার জন্য নারীবাদী সংস্থাগুলো বিভিন্ন আন্দোলন করে আসছে। তারা নারীদের সচেতন করে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা পাওয়ার জন্য আন্দোলন করে সরকারের পক্ষ থেকে নারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সচেষ্ট হয়েছে। শিক্ষাদীক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীদেরকে সচেতন করে তোলা জন্য নানা ধরনের আন্দোলন করে যাচ্ছে।
৮. নারীর অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন : নারীরা যেসব কাজ করে তার তেমন কোন অর্থনৈতিক মূল্যায়ন হয় না। কিন্তু পারিবারিক পর্যায়ে নারীরা যে পুরুষের চেয়ে বেশি কাজ করে তার মূল্যায়ন করার জন্য নারী সংগঠনগুলোর প্রকার দাবির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ নারীর কাজকর্মের আর্থিক বিষয় বিবেচনা করে তার মূল্যায়ন করতে সচেষ্ট হয়েছে ব্যাপারে নারী আন্দোলনকারীদের আরো গতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
৯. নারীদের অবরুদ্ধ রাখার প্রয়াস বন্ধ রাখা : পরিবার ও ব্যক্তির মধ্যে নারীকে অবরুদ্ধ রাখার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। ফলে বাংলাদেশের রক্ষণশীল সমাজের মেয়েদের প্রগতি বড় কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় নারীদেরকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
১০. নারীদেরকে পণ্য হতে দেয়া যাবে না : সিনেমা, যাত্রা, পত্রিকা, T.V. রেডিওসহ সকল প্রচার মাধ্যমে নারীদের পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে। এ ধরনের ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করার মাধ্যমে সুস্থ নারী প্রগতির ধারা সৃষ্টি করতে হবে।
১১. ফতোয়াবাজদের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে : এখন আমাদের দেশে গ্রামেগঞ্জে ফতোয়াবাজদের দৌরাত্ম্য একচেটিয়া। তারা বিভিন্ন ধরনের ফতোয়ার মাধ্যমে নারীদের উপর নানা ধরনের নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কথায় কথায নারীদের তালাক দেয়া, সামাজিক অপরাধের কথা বলে নারীদের দোররা মারা হয়। গ্রামাঞ্চলে কেউ যদি রাগের বসে স্ত্রীকে তিন তালাক বলে ফেলে সেক্ষেত্রে ফতোয়াবাজরা খুবই বাড়াবাড়ি করে। তাই ফতোয়াবাজদের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য
নারীবাদী সংগঠনগুলোকে আরো বেশি তৎপর হতে হবে।
১২. যৌতুকের বিরুদ্ধে আন্দোলন : যৌতুক প্রথা অনেক নিঃস্ব পরিবারকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। যৌতুকের কারণে অনেক ঘর ভেঙে গেছে। যৌতুকের কারণে পুরুষরা তাদের স্ত্রীর উপর নানা ধরনের অত্যাচার করতে থাকে। কিন্তু যৌতুক একটি সামাজিক অপরাধ, আর এ বোধকে সবার মধ্যে জাগরিত করে তুলতে হবে।
১৩. CEDAW সনদের পূর্ণ সম্মতি প্রদান : বাংলাদেশ সরকার ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদে’ কয়েকটি ধারা সংরক্ষণ করে স্বাক্ষর করে। এতে নারীর প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে। তাই সরকারকে CEDAW সনদের সবগুলো ধারাকে সম্মতি দিতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ক্রমশ গতিশীল হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান এতই নিম্ন পর্যায়ে এবং নারী আন্দোলনের পথের বাধা এতই জটিল যে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য। যদিও বাংলাদেশ সরকার নারীদের উন্নয়নের ব্যাপারে যথেষ্ট সোচ্চার। বিভিন্ন Issue নিয়ে নারী সংগঠনগুলো বিভিন্নভাবে অর্থাৎ সভা, মিছিল, সমাবেশ, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ অধিকার বাস্তবায়নে জন্য আন্দোলন করলেও অধিকাংশ Issue গুলোই বাস্তবায়িত হচ্ছে না। নারীদের উপযুক্ত হারে ক্ষমতায়ন, জাতিসংঘ ঘোষণাগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, CEDAW সনদের প্রতিষ্ঠা ও নারী উন্নয়নে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাগুলো যত দ্রুত দূর করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে এবং সমাজে তাদের অবদান শক্তিশালী করতে পারবে।
বাংলাদেশে নারী আন্দোলন সার্থক করার উপায়সমূহ আলোচনা কর।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079
Leave a Reply