বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণের উপায় আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণে বাধাসমূহ দূরীকরণের উপায়সমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশর রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের সমস্যাসমূহ দূর করার উপায় তুলে ধর।
অথবা, রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণে বাধাসমূহ দূরীকরণের উপায়সমূহ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের সকল পর্যায়েই নারীরা অধস্তন। রাজনীতিও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। যদিও ১৯৭২ সালের সংবিধানে সকল প্রকার অধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার প্রতিশ্রুতি ঘোষিত হয়েছিল তথাপিও নানাবিধ প্রতিকূল অবস্থা এবং পুরুষতন্ত্রের কবলে নারীর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া আশানুরূপ হয়নি। ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, মানসিকতা, ঐতিহ্য সবকিছুই নারীকে রাজনীতি বিমুখ করে রাখতে বাধ্য করেছে। এমনকি রাজনৈতিক।দলগুলোতেও নারীরা যতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ততটা প্রাধান্য দলের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত নয়। তাই নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা প্রয়োজন। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণের উপায় : বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের উপায়সমূহ নিম্নরূপ :
১. রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা : সরকার ও বিরোধী উভয় দলের নেতৃত্বেই নারী প্রধান হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। নারী ক্ষমতায়নের জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়।পর্যন্ত সকল স্তরেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন।
২. নারী বৈষম্য আইন পরিবর্তন : যেসব আইন নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে, সেসব আইন পরিবর্তন করতে।হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ CEDAW এর তিনটি ধারা রক্ষিত রেখে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। বাংলাদেশ সরকারের CEDAW সনদের এ তিনটি ধারা সংরক্ষণ প্রত্যাহার করা উচিত।
৩. ধর্মীয় সংস্কার : নারীকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনিবার্যভাবে ধর্মীয় রক্ষণশীলতা, কূপমণ্ডূকতা ও অপব্যাখ্যার আমূল সংস্কার সাধন করতে হবে। উপকাঠামো হিসেবে ধর্মের অপব্যাখ্য রোধ করা গেলে কিছুটা হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা দূর করা যাবে।
৪. ফতোয়াবাজদের দৌরাত্ম হ্রাস করা : ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকারী ফতোয়াবাজদের নির্মূলকরণ ছাড়া বাংলাদেশে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিত করা অসম্ভব। তারা ‘ইসলামে নারী নেতৃত্ব স্বীকৃত নয়’ একথা বলে ফতোয়া জারি করে। এগুলো দূর করতে হবে।
৫. পেশিশক্তির অবসান : রাজনীতিকে পেশিশক্তি মুক্ত করতে হলে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য সকলকে পেশিশক্তির অবসানের লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলে নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথ সুগম হবে।
৬. শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি : শিক্ষা ও প্রচারমাধ্যম মারফত পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটিয়ে নারীকে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা ও কার্যক্রমের দিকে প্রণোদিত করতে হবে এবং সমাজে উপযুক্ত ও ইতিবাচক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীর শিক্ষা ও পেশাগত সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও প্রবেশের পথ সুগম করতে হবে।
৭. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি : রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি পর্যায়ে বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাতে হবে। বিভিন্ন সেমিনার, সভা ও মিছিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে নারীদের সচেতন করে তুলতে হবে। তাহলে তারা নিজেদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসবে।
৮. পারিবারিক চিন্তাধারার পরিবর্তন : ইস্পাত কঠিন প্রাচীর ভেঙে সময়োপযোগী ও যুগোপযোগী পারিবারিক কাঠামো নির্মাণ আজ একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এ প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে আজকের তরুণ সমাজকে এগিয়ে।আসতে হবে। তবেই নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া সহজতর হবে।
৯. গণমাধ্যমের ভূমিকা : গণমাধ্যমগুলো দ্বারা নারীর সঠিক মর্যাদা ও অবদান তুলে ধরতে হবে এবং রাজনীতিতে নারীদের উদ্বুদ্ধকরণে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রচারাভিযান চালাতে হবে।
১০. সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা : সমাজে মূল্যবোধের যে অবক্ষয় পরিদৃষ্ট হচ্ছে, তাতে নারীর বাইরের জগতের সাথে একাত্মতা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। তাই লেখক, বুদ্ধিজীবী সকলকে সমাজের এ মূল্যবোধের।অবক্ষয় ঠেকানোর লক্ষ্যে হস্ত প্রসারিত করতে হবে। আর তাহলেই একটি সুষ্ঠু পারিপার্শ্বিক ধারার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ সহজ হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, আজ পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে একাত্মতা ঘোষণার।প্রয়োজনে এবং দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে নারীমুক্তির লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিষয়টি অত্যন্ত।জরুরি হয়ে পড়েছে। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত বলেছিলেন, “আমরা সমাজের অর্ধ অঙ্গ। আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কী রূপে? কোনো ব্যক্তির এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? অকর্মণ্য পুতুল জীবন বহন করিবার জন্য সৃষ্টি হই নাই।” আজ তাঁর সেই গভীর আত্মোপলব্ধি আমাদের হৃদয়কেও স্পর্শ।করেছে এবং সময়ের প্রয়োজনে পুরুষের পাশাপাশি ও সমগতিতে পথ চলার তাগিদটি অতি স্পষ্ট।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*