বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীর রাজনীতির নিহিতার্থ বা বাস্তবতা আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর রাজনীতির মূলবিষয় আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীর রাজনীতির নিহিতার্থ বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর রাজনীতির বাস্তবতা তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর রাজনীতির মূল বিষয়ের বর্ণনা দাও।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর রাজনীতির বাস্তবতা উল্লেখ কর।
উত্তরায় ভূমিকা :
প্রাচীন কাল থেকে সমাজে নারীর মর্যাদা, অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে দেশে দেশে, যুগে যুগে দার্শনিক, সামাজিক ও চিন্তাবিদদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। নিঃসন্দেহে এদের মধ্যে যেমন সাদৃশ্য রয়েছে তেমনি রয়েছে বৈসাদৃশ্য। যে নারী বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেক এবং শ্রমশক্তির এক-তৃতীয়াংশ তার অবস্থা হচ্ছে শৃঙ্খলিত, অবদমিত, পরনির্ভরতা। নারী শোষণ ও বঞ্চনার শিকার। এককথায় বলা যায়, তথাকথিত সভ্যতা, ধর্মীয় অনুশাসন নারীকে নিচু অবস্থানে নামিয়ে অবরুদ্ধ করে। শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের নীতি, বিধিনিষেধ, সমাজ ধর্ম, রাজনীতি ও আইনের নামে এসব চলছে যুগ যুগ ধরে। নারীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, আধিপত্য খাটানোর জন্য সমাজ, রাষ্ট্র, আইন, আশ্রয় নেয় ধর্মীয় অনুশাসনের।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীর রাজনীতির নিহিতার্থ : নারীর অবস্থানের জন্য পুরুষ দায়ী নয়। কিন্তু সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র যে নীতিনির্ধারণ করেছে তাতে পুরুষ এগিয়েছে, নারী রয়েছে পিছিয়ে। কোন ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের
সমতা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এ বাস্তব পরিস্থিতিই আলোচনার সূত্রপাত করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির নিহিতার্থগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ঐতিহাসিকভাবে নারীর অবস্থান : সমাজবিদ ও ইতিহাসবিদরা বলেছেন যে, মানবজাতির ইতিহাসে দাসপ্রথারও আগে নারীর দাসত্ব শুরু হয়েছিল। নারীই প্রথম এ দাসত্বের শৃঙ্খল পড়েছে। যে সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় নীতি স্ত্রী- পুরুষের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা এক অংশকে অন্য অংশের প্রভুত্ব দাঁড় করায় তা খুবই ভুল। মানবীয় উন্নতির এটিই প্রধান একটি বাধা।
২. নানা ধর্মাবলম্বীর বসবাস : বাংলাদেশে নানা ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস। বাঙালি হলেও ধর্মীয় পরিচয়ে নারীর অধিকার সমাজ ও রাষ্ট্রের দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও মুসলিম নারী একই দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অধিকারের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সাম্য নেই। আর সাম্য যেখানে নেই সেখানে বৈষম্য অবশ্যম্ভাবী। এর মূল কারণ ব্যক্তিগত আইন বা ধর্মীয় আইনে নারীর প্রতি যে বিধিনিষেধ আছে সেটা দিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর অধিকার বিবেচিত হয়। প্রত্যেক ধর্মে নারীর অধিকার ভিন্ন রকম।
৩. ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সৃষ্টি : ইংরেজ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় ধর্মের ভিত্তিতে এ ভূখণ্ড স্বাধীন হয়েছিল। ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তানি শাসন নীতি এদেশের নারীর উপর চাপিয়ে দিল বৈষম্য আর অবরোধ। শিক্ষা ও কাজেরঅধিকার ধর্মীয় নিয়ন্ত্রণে আনা হলো। মেয়েদের স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে গেল, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চা নিষিদ্ধ হলো। পারিবারিক আইনে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলল। বাঙালির ভাষা, জাতিসত্তা ও অর্থনীতির উপর আঘাত এল পাক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক। বাঙালি নারীসমাজ পুরুষদের সাথে জেগে উঠল ।
৪. ধর্মভিত্তিক রাজনীতি : ধর্মভিত্তিক রাজনীতি হচ্ছে ক্ষমতার স্বার্থপ্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সরল ধর্মবিশ্বাসকে কৌশলে কাজে লাগানো। ধর্ম শাসনের অন্যতম হাতিয়ার। যুগে যুগে যে কোন শাসনব্যবস্থাই ক্ষমতা বজায় রাখার লক্ষ্যে মানুষের অধিকারকে খর্ব করেছে। নারীর অধিকার ধর্মীয় অনুশাসন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার বলে মানা
হয় না।
৫. নারী শিক্ষায় বাধা : নারী শিক্ষার উদ্যোগের ফলে সমাজে দুটি শ্রেণীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়। গ্রামের জোতদার মহাজন ও শহরের সম্পত্তিবান ধনী শাসকগোষ্ঠী প্রতিক্রিয়াশীল ধ্যানধারণায় পুষ্ট ছিল। ধর্মভয় চাপিয়ে দেয়া হলো পল্লি অঞ্চলের গরিব মানুষের উপর। নারীশিক্ষা সংকোচন ও সংস্কার এবং শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রীদের বিক্ষোভ মিছিলের প্রতিক্রিয়ায় বলা হতো, এসব প্যারেড মুসলিম ঐতিহ্যের পরিপন্থী। পুরুষতান্ত্রিক সমা

নারীদের দমিয়ে রাখতে ধর্মকে ব্যবহার শুরু করলো।
৬. রাজনীতির পরিবর্তন : ১৯৪৭-২০০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে রাজনীতির তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। তবে অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটেছে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। মেয়েরা কাজে বের হচ্ছে। শিক্ষার ব্যাপারে বাধা নেই মেয়েদের। ধর্মভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ছে। মেয়েরা সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের বাইরে থাকতে পারে। তবুও নারীরা লাঞ্ছিত হয়েছে এবং হচ্ছে, এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিশ্চুপ। বলা হয় এসব ঐতিহ্য, বিষয়, সমাজ, দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত। নারীকে নিজেদের অধিকার
নিজেদেরই আদায় করে নিতে হবে।
৭. নারী অধিকার : ১৯৪৭-২০০০ পর্যন্ত সময়ে বহু উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের আইন রচিত হয়েছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের রাজনীতির ধারা এখনো চলছে। নারীর জন্য সাংবিধানিক আইনের অধিকার ও পারিবারিক আইনের অধিকার পরস্পরবিরোধী। কিন্তু কোন সংসদেই এটা দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদেরকে ধর্মীয় ইস্যু টেনে বঞ্চিত করা হচ্ছে বিভিন্ন অধিকার হতে।
৮. ফতোয়া ও নারীর অবস্থান ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দিয়ে নারীদের অংশগ্রহণে দূরে রাখা হয়। এ বিষয় নিম্নে দেয়া হলো :
ক. ধর্মভিত্তিক রাজনীতির একটি নগ্ন হামলা এ ফতোয়া।
খ. ফতোয়ার বিস্তার রোধে রাজনৈতিক উদ্যোগ নেই।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশ পূর্বের থেকে আরো বেশি ধ্যানধারণার পরিবর্তিত হয়েছে। অবশ্য এ কথা সত্য যে, নারীর প্রতি অবমাননাকর নিষ্ঠুর অমানবিক পারিবারিক আইন, অন্যান্য সামাজিক ধর্মীয় বিধিনিষেধ এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে চালু থাকা নারীর প্রতি প্রদর্শিত অবহেলা, বৈষম্য, দৃষ্টিভঙ্গির পশ্চাৎপদতা, সামস্তযুগীয় পুরনো ধ্যানধারণা ও মানসিকতা এসব প্রচলিত আছে। তবুও নারীসমাজ মনে করে সমাজের পশ্চাৎপদ ধ্যানধারণা, ধর্মীয় গোঁড়ামি নারীসমাজকেই তা বেশি ক্ষতি করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*