বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পলি উন্নয়নের গুরত্ব আলোচনা কর।

অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পল্লিউন্নয়ন কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ বলে তুমি মনে কর? আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পল্লি উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পল্লি উন্নয়নের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পল্লি উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পল্লি উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
“A policy of rural development is a policy of national development.” -Julias Nyrer.
প্রায় ৮৫ হাজার গ্রাম বাংলার দেশ বাংলাদেশ। এদেশের ৮০% লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত।প্রাকৃতিক সম্পদের শতকরা ৬০ ভাগ আসে কৃষি থেকে এবং সমগ্র রপ্তানির শতকরা ৯০ ভাগ পাওয়া যায় কৃষি অথবা কৃষিজাত দ্রব্যাদি থেকে, যার উৎস এদেশের গ্রাম ও গ্রামীণ জনগণ। তাই পল্লিউন্নয়ন এদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত অপরিহার্য। কারণ পল্লির জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে জাতীয় উন্নয়ন কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। পল্লির জনগণকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যথার্থরূপে অংশগ্রহণ করাতে হবে এবং পল্লির আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে হবে, তবেই জাতীয়
উন্নয়ন (National development) সম্ভব হবে।
পল্লি উন্নয়নের গুরুত্ব : বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ । ৮৫% লোকই গ্রামে বসবাস করে। গ্রামই এদেশের প্রাণ।এজন্য বাংলাদেশকে সম্প্রসারিত গ্রামও বলা হয়। ৮৫ হাজার গ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। এ ধরনের স্লোগানের মধ্যেই দেশের সার্বিক উন্নয়নে পল্লি উন্নয়নের গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পল্লি উন্নয়নের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো :
১. কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির সাথে এদেশের অধিকাংশ লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল । কৃষিই এখানকার অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র । আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে কৃষি থেকে। কৃষি উন্নয়নের হ্রাসবৃদ্ধির সাথে সাথে জাতীয় আয়ও উঠানামা করে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে পল্লির অবদান অনেকটা কৃষির মাধ্যমেই। পল্লি → কৃষি → বাংলাদেশ এভাবে একে অন্যের স্বার্থে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এ অবস্থাতে পল্লিউন্নয়ন ব্যতিরেকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব।
২. শিল্পোন্নয়ন : পল্লিউন্নয়ন দেশের শিল্পোন্নয়নকে প্রভাবিত করে। আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে পল্লি উন্নয়নের গুরুত্ব অপরিসীম, যা শিল্পোন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
৩. খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি : উন্নয়নশীল দেশে চাহিদা মোতাবেক খাদ্যশস্যের যোগান একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই খাদ্যের যোগান বৃদ্ধির জন্য পল্লিউন্নয়ন তথা কৃষি উৎপাদনের উপর বিশেষ জোর দেয়া প্রয়োজন। নতুবা দেশ খাদ্য সরবরাহে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
৪. রপ্তানিজাত দ্রব্যের মাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে : উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার অভাব সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু দেশগুলোর সার্বিক উন্নয়নে বেশি বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের কোনো বিকল্প নেই। এসব দেশ মূলত কৃষিপ্রধান ও শিল্পে অনুন্নত ৷ তাই কৃষিজাত দ্রব্য যেমন- পাট, চা, তামাক ইত্যাদি রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। চিংড়ি, শাকসবজি, গার্মেন্টস, চামড়াজাত দ্রব্য প্রভৃতি রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। তাই এগুলোর সফলতা প্রমাণ করে যে, পল্লিউন্নয়ন সম্ভব হলে দেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আরও এগিয়ে যাবে।
৫. কর্মসংস্থানের সৃষ্টি : একটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মোট শ্রমশক্তির সিংহভাগ পল্লি অঞ্চলে নিয়োগ লাভ করে। এদেশের ৮৫% লোকই পল্লি অঞ্চলে বসবাস করে। কৃষিই মোট বেসামরিক পুরুষ শক্তির ৭৪%ও মহিলা শ্রমশক্তির ৪৮% কর্মসংস্থান দেয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ বহু বছর ধরে বাড়তি বেসামরিক শ্রমশক্তিকে পল্লি অঞ্চলেই কর্মসংস্থানের জন্য নির্ভর করতে হবে।
৬. কুটির শিল্পের প্রসারণের ক্ষেত্রে : বাংলাদেশের কুটির শিল্প অর্থনীতির ক্ষেত্রে প্রাণকেন্দ্র। আর বাংলাদেশের কুটিরশিল্প বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই কুটিরশিল্পের উন্নয়নের জন্য পল্লিউন্নয়ন অপরিহার্য। কারণ পুঁজির অভাবে এসব শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা। তাই কুটির শিল্পের উন্নয়নের জন্য পল্লিউন্নয়ন নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
৭. সম্পদের যথাযথ ব্যবহার : একটি দেশের উন্নয়নের জন্য সরকারের পর্যাপ্ত মূলধন থাকা আবশ্যক। আমাদের দেশের
পল্লি অঞ্চল মানব সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। পল্লির এ সম্পদকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগিয়ে সরকার যথেষ্ট মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। পল্লি থেকে পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ করতে হলে পল্লির দিকে বিশেষ নজর দেয়া অপরিহার্য।
৮. মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে : একটি দেশের মৌলিক চাহিদা পূরণ সে দেশের সরকারের অপরিহার্য কাজ। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি মৌলিক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে পল্লিউন্নয়ন প্রক্রিয়া বেশ সহায়ক।কারণ এখানে সিংহভাগ লোক গ্রামে বসবাস করে। তাই গ্রামীণ উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়।
৯. দেশের সার্বিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে : পল্লিউন্নয়নকে একটি আংশিক ধারণা হিসেবে গণ্য না করে
একে একটি ব্যাপক ধারণা হিসেবে গণ্য করাই শ্রেয়। কারণ পল্লি প্রধান বাংলাদেশে সবকিছুই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত। তাই সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পল্লিউন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১০. অবকাঠামোগত উন্নয়ন : একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উপর।পল্লি প্রধান দেশের সার্বিক দ্রব্যাদি আসে গ্রাম থেকে। যদি অবকাঠামোগত তথা রাস্তাঘাট, পরিবহন ব্যবস্থা প্রভৃতির উন্নয়ন না হয় তবে দ্রব্যাদি স্থানান্তর করা সম্ভব হবে না। ফলে উন্নয়ন সম্ভব হবে না। যেমন- কুষ্টিয়াতে যদি মরিচের কেজি ৪০ টাকা হয় হবে ঢাকাতে তার দাম দ্বিগুণ হতে পারে, যদি তা যথাযথভাবে ঢাকায় স্থানান্তর না করা যায়। তাই অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে পল্লিউন্নয়ন অপরিহার্য।
১২. জাতীয় আয় বৃদ্ধি : কোনো দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পল্লিউন্নয়ন আবশ্যক। বাংলাদেশে পল্লি উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষির উন্নতি হলে দেশের মোট জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, পৃথিবীর সকল দেশের জন্য পল্লিউন্নয়ন নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বিশেষ করে পল্লি প্রধান বাংলাদেশের জন্য তো বলাই বাহুল্য। পল্লিকে পাশ কাটিয়ে কোনো ধরনের উন্নয়নের আশা করা নিতান্ত বোকামিমাত্র। তাই পল্লির জনগোষ্ঠীকে যথাযথ স্থাপন ও পুনর্গঠন নিশ্চিতকল্পে পল্লিউন্নয়ন কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জাতীয় উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে পল্লিউন্নয়ন অপরিহার্য একটি বিষয় ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*