বাংলাদেশের নারীদের ক্ষমতায়নে তুমি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে? তোমার মতামত ব্যক্ত কর।

অথবা, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার উপায়সমূহ আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় বলে তুমি মনে কর।
অথবা, নারীর ক্ষমতায়নে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত? বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : নারীর ক্ষমতায়ন একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। এক্ষেত্রে প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর পদচারণা দুর্বল। অথচ রাজনৈতিক পরিমণ্ডলই হচ্ছে ক্ষমতায়নের প্রধান উৎস ও বিচরণ ক্ষেত্র। ১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনে গৃহীত ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনায় চিহ্নিত হয়েছে ১২টি বিশেষ ক্ষেত্র, যেখানে নারীর অনগ্রসরতা, পশ্চাৎপদতা তীব্রমাত্রায় বিরাজমান। নারীর রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের বিষয়ে বিশ্ব নারী সম্মেলনের বক্তব্যও বিশ্লেষণ প্রণিধানযোগ্য।
নারীর ক্ষমতায়নের পদক্ষেপসমূহ : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। জেন্ডার কর্মবিভাজনের আমূল পরিবর্তন করতে হবে। আমি মনে করি, নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গৃহীত হলে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। যথা :
১. নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টিকারী আইন পরিবর্তন : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন করতে হলে নারীর প্রতি বৈষম্য।সৃষ্টিকারী আইনের পরিবর্তন করতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদের তিনটি ধারায় আপত্তির মধ্যে ১৩ (ক) এবং ১৬/১ (চ) ধারায় আপত্তি প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ সরকার।
(ক) ধারায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে এ অধিকার বিশেষ করে পারিবারিক কল্যাণের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের অপরাপর ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
২. সর্বজনীন পারিবারিক আইনের বাস্তবায়ন : বাংলাদেশের নারীসমাজের অন্যতম দাবি হলো নারী পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ,।জাতিসত্তা ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে সমতার আইন চালু করা। বাংলাদেশে বসবাসকারী ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, শ্রেণি ও সংস্কৃতি।নির্বিশেষে সকল নারীর পারিবারিক জীবনে সমঅধিকার, সমদায়িত্ব, সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং ভয়াবহ নারী নির্যাতন বন্ধের জন্য সর্বজনীন পারিবারিক আইন চালু করা দরকার।
৩. নারীনির্যাতন প্রতিরোধ : নারীনির্যাতন প্রতিরোধের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন করা যায়। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা, পানীয়জল, পয়ঃনিষ্কাশন ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা।কমিটিগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বিচার, সালিশ ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে।নারী সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া এ নারীদের নির্যাতনের মাধ্যমে নারীনির্যাতন প্রতিরোধসহ নারীর ক্ষমতায়নের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
৪. নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত।সকল স্তরেই নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ নিজেদের বিষয়ে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্তরে না থাকলে নারীর।ক্ষমতায়ন সম্ভব নয় । গ্রামীণ নারী হিসেবে এরা গ্রামীণ নারীদের প্রয়োজন ও অবস্থার কথা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে।
৫. রাজনীতির গণতন্ত্রায়ণ : মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ না করলেও রাজনীতির গণতন্ত্রায়ণে মৌলবাদীরা।স্বাভাবিকভাবেই পিছিয়ে পড়বে। রাজনীতির গণতন্ত্রায়ণের ফলে সমাজের বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে রাজনীতিতে নানাভাবে।অংশ নেয়া সম্ভব হবে এবং রাজনীতি তখন বিশেষ কারও করতলগত হয়ে থাকবে না। মৌলবাদীদের এককেন্দ্রিক তথ্য ও বিশ্লেষণ প্রবাহ থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে পারবে।
৬. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীর অভিগম্যতা বৃদ্ধি। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ ও অভিগম্যতা কম। ফলে এসব নীতিনির্ধারণী স্থানে নারী সম্পর্কিত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত কমই গৃহীত হয়। নারী প্রতিনিধিত্ব থাকে না বলে নারীদের সেখানে কিছু করার থাকে না।
৭. গৃহস্থালি কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ : গৃহস্থালি কাজের দায়িত্ব এককভাবে নারীর কাঁধে চেপে যাওয়ায় নারী অন্য কাজে যোগ দিতে পারছে না। পুরুষ গৃহস্থালি কাজে অংশ নিলে একদিকে নারীর পক্ষে বাইরের কাজে অংশগ্রহণ করা সহজ হতো। অন্যদিকে, গৃহকাজে অংশ নিয়ে পুরুষ নারীর গুরুত্বও উপলব্ধি করতে পারত। ফলে নারী তার কাজের স্বীকৃতি অনায়াসেই পেত।
৮. নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বন্ধ : নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন বন্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আইনের চেয়ে মূল্যবোধের ভূমিকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর গণমাধ্যম এ মূল্যবোধ তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমে যেভাবে নারীকে প্রতিফলিত করা হয় তা অবমাননাকর, নেতিবাচক ও সনাতন।
৯. নারীর কাজের স্বীকৃতি : বাংলাদেশে নারীর কাজের স্বীকৃতির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব। নারী যে সকল প্রকার কাজ করতে পারে সমাজ ও পরিবেশের এ ধারণা সৃষ্টি হওয়া দরকার, যা নারীকে মর্যাদাবান করবে। সকল ধরনের কাজে নারীর অভিগম্যতা থাকলে তার ক্ষমতাবান হওয়ার পথ সম্প্রসারিত হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, যে, উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সম্ভব হবে। স্থানীয় পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ার জন্য ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, জাতীয় পর্যায়ে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে তেমনি পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বত্র মতামত প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে পারলে দারিদ্র্য, মৌলবাদ, এমনকি নারীদের অদক্ষতা ও নারীর ক্ষমতায়নে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। প্রয়োজন কেবল সদিচ্ছা, অঙ্গীকার আর সুনীতির।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*