বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করার উপায়গুলো আলোচনা কর।

অথবা, কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করা যায়? আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করার উপায় বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করার উপায়সমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, কীভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করা যায়? এ সম্পর্কে
বিবরণ দাও ।
অথবা, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জেন্ডার সমস্যা সমাধান করার উপায় বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ কম। তারা আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেক। সেই তুলনায় সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। এ কারণে সংসদে জেন্ডার ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে জেন্ডার ইস্যুও। আর এ ইস্যুগুলো সমাধান করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করার উপায় : জেন্ডার ইস্যু সমাধান করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। নিম্নে জেন্ডার ইস্যু সমাধানের উপায়গুলো আলোচনা করা হলো :
১. সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা : জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধানের একটি বড় পদক্ষেপ হলো সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটা সরাসরি নির্বাচিত ও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সাংসদের মধ্যে দূরত্ব কমে সমতা আনবে। ফলে প্রতিষ্ঠিত হবে জেন্ডার ভারসাম্য । এটা জেন্ডার ইস্যু সমাধান করবে।
২. রাজনৈতিক দলে নারী প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করা : সংসদের আরেকটি জেন্ডার ইস্যু হলো রাজনৈতিক দলে নারী প্রতিনিধিত্বের কম উপস্থিতি। এটা সমাধানের একমাত্র পথ হলো রাজনৈতিক দলে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এটা যত তাড়াতাড়ি করা যাবে ততোই মঙ্গল। কারণ দলে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে।
৩. নারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা : জাতীয় সংসদে কাজ করতে হলে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। আইন প্রণয়ন একটি জটিল বিষয়। এটাও একটি জেন্ডার ইস্যু বা সমস্যার কারণ। এজন্য এ কাজে নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কারণ প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কেননা প্রশিক্ষিত নারীরাই জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে পারবে।
৪. সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বৃদ্ধি করা : সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন হলো ৫০জন। ৩০০জন সদস্যবিশিষ্ট সংসদে এটা খুব কম। এজন্য এটা একটি বড় ইস্যু, এজন্য এই ইস্যু সমাধানের জন্য সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। কারণ নারীরা জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এজন্য সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে এ
সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৫. সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা : সংসদে জেন্ডার ইস্যু বা সমস্যা সমাধানের জন্য সরাসরি নির্বাচিত অভিজ্ঞ নারী সদস্যদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত সদস্যদের সহযোগিতা করতে হবে। উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক সংসদকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলবে। এটা ধীরে ধীরে সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে। এর ফলে জেন্ডার বৈষম্য হ্রাস পাবে এবং জেন্ডার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে।
৬. প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত নারী সাংসদগণের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা : প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত ও পরোক্ষভাবে নির্বাচিত নারী সাংসদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করতে হবে। এটা তাদের মধ্যে সুম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে। এটা জেন্ডার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ তখন সকল নারী ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করবেন।
৭. সংসদে নারীর অধস্তনতা কমাতে হবে : সংসদে নারী প্রতিনিধিদের হার জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এবং জেন্ডার বৈষম্যের কারণে নারীরা অধস্তন। এজন্য জেন্ডার বৈষম্য কমাতে হলে নারী আসন বাড়াতে হবে এবং জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতায়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও কাজ করতে হবে।
৮. নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে : জেন্ডার ইস্যুর একটি বড় কারণ হলো নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর শিক্ষা, উন্নতি, প্রগতি ও ক্ষমতায়নের বিরোধী। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারীর রাজনীতি চর্চা একটি বড় কঠিন কাজ। সমাজ থেকে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে দূর হবে জেন্ডার সমস্যা।
৯. রাজনৈতিক দলে নারীর প্রান্তিক অবস্থা দূর করতে হবে : রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায় ও নীতি নির্ধারণী কর্মকাণ্ডে নারীদের উপস্থিতি কম। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলে তাদের অবস্থান প্রান্তিক। এই কারণে সংসদে তাদের সংখ্যা নগণ্য। তাই সংসদে জেন্ডার ইস্যু সমাধান করতে হলে সংসদে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
১০. সংসদে নারী সাংসদগণের মধ্যে দলগত বিভাজন কমানো : সংসদে জেন্ডার ইস্যু বা সমস্যা দূর করার আরো একটি পদক্ষেপ হলো সংসদে নারীদের দলগত বিভাজন কমাতে হবে। তারা বিভিন্ন দলের হয়ে কাজ করলেও জেন্ডার প্রশ্নে তাদের ঐক্যমত থাকতে হবে। এটা তাদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করবে।
১১. অভিজ্ঞ নারী সাংসদ নির্বাচন করা : সংসদে জেন্ডার ইস্যু বা সমস্যা সমাধানের আরেকটি উপায় হলো সরাসরি- নির্বাচনের মাধ্যমে অভিজ্ঞ নারী সাংসদ নির্বাচন করা। কেননা এটা ধীরে ধীরে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করবে।
১২. নারীর প্রতি পুরুষ প্রতিপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন : নারীদের প্রতি পুরুষের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একটি বড় জেন্ডার ইস্যু । আধুনিক সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। এই পুরুষতান্ত্রিক প্রভাব কমাতে না পারলে জেন্ডার ইস্যু দূর করা যাবে না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয় সংসদে জেন্ডার ইস্যু আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা। তাই রাজনৈতিক সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি বাড়িয়ে জাতীয় সংসদে জেন্ডার বা সমস্যার সমাধান করতে হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*