পরিকল্পনা কী? স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনাসমূহআলোচনা কর।

অথবা, পরিকল্পনা কাকে বলে? স্থানীয় সরকারকে সফল করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, পরিকল্পনা বলতে কী বুঝ? স্থানীয় সরকারকে সফল করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পরিকল্পনার সংজ্ঞা দাও। স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনা সম্পর্কে বিবরণ দাও ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার জন্য আত্ততাধীন সম্পদের সুষম বণ্টনের নিমিত্তে ভবিষ্যাৎ কার্যাবলির সুশৃঙ্খল পদক্ষেপই হচ্ছে পরিকল্পনা। যে কোনো দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিহার্য। পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ সুষ্টুভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব।
পরিকল্পনা : বর্তমান বিশ্বে পরিকল্পনা বা Planing শব্দটির ব্যাপক প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। যে কোনো প্রশাসনের জন্য পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বর্তমান জটিল সমাজব্যবস্থায় একটি দক্ষ এবং কার্যকরী প্রশাসন ব্যবস্থা সুষ্ঠু পরিকল্পনা বাতীত অচল। জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিকল্পনা অত্যাবশ্যক। বহু সংখ্যক অভীষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে থেকে সর্বাধিক প্রয়োজনীয় লক্ষ্যসমূহ নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট সকল বিকল্পসমূহ যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং লক্ষ্য অর্জনে সীমিত সম্পদের যুক্তিগ্রাহ্য বিভাজনই হচ্ছে পরিকল্পনা।
পরিকল্পনার সংজ্ঞা : পরিকল্পনা সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সংজ্ঞা প্রদান করেছে। নিম্নে তার
কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :
বার্কার (Barker) এর মতে, “পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ, সেগুলো অর্জনের বিভিন্ন পন্থার মূল্যায়ন এবং উপযুক্ত কার্যক্রমের সুচিন্তিত বাছাই প্রক্রিয়া।
জন ডি. ডিলেট (Johan D. Dillett) বলেন, “Planning is the process of determining the adjective of administrative effort and of devising the means calculated to achieve them.”
ওয়াল্টার (Walter) এর মতে, “পরিকল্পনা হচ্ছে প্রাকচিন্তা, অভ্যন্তরীণ চিন্তা, বাহ্যিক চিন্তা এবং সামগ্রিক চিন্তা।”
সেকার হাডসন (Secker Hudson) এর ভাষায়, “পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কর্মধারার ভিত্তি উদ্ভাবনের এক বিশেষ স্থানীয়।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, অতীত ও বর্তমান অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যৎ কার্য সম্পাদনের বিজ্ঞানসম্মত উপায় নির্ধারণ, যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সুচিন্তিত ও কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে পরিকল্পনা।
স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ : যে পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং স্থানীয় সম্পদের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জনগণের অংশগ্রহণ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাই স্থানীয় পরিকল্পনা। স্থানীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রামীণ জনসাধারণের উন্নয়ন ও কল্যাণ সাধন হয়। বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় উন্নয়নের নিমিত্তে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে যুগ-উপযোগী করার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে চলেছে। নিম্নে স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. জনগণকে সচেতন করা : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে সফল করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো গ্রামীণ জনগণকে সচেতন করা। গ্রামীণ জনগণ সচেতন হলে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে জন-অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। যা সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
২. মাঠ প্রশাসনের ব্যাপক পরিবর্তন : স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি পরিকল্পনা হলো মাঠ প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন সাধান করা। বিশেষ করে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার নীতির বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসকের প্রয়োজন। দক্ষ ও যোগ্য প্রশাসকের মাধ্যমেই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সঠিক ভূমিকা পালনে সফল হবে।
৩. মানব সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে : বাংলাদেশে সরকার স্থানীয় উন্নয়নের জন্য যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মানব সম্পদ উন্নয়নের পরিকল্পনা। বাংলাদেশে জনবহুল দেশ। এ দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই মানব সম্পদকে উন্নয়ন করতে হবে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এছাড়া আরো প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
৪. পরিকল্পনার সনাতনী নীতি পরিহার : বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দ্বি-বার্ষিকী পরিকল্পনা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, বিশেষ পরিকল্পনা প্রভৃতি। বলা যায় যে, বাংলাদেশে সরকার সময়ে সাথে তাল মিলিয়ে সনাতনী নীতির পরিহার ও যুগ- উপযোগী নীতি গ্রহণ করেছে যা স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষ্যেই গ্রহণ করেছে।
৫. বহুমুখী উন্নয়ন কাঠামো তৈরি : বহুমুখী উন্নয়ন কাঠামো প্রস্তুত স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। বহুমুখী উন্নয়ন কাঠামো প্রস্তুতের মাধ্যমে স্থানীয় উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়।
৬. জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা : স্থানীয় সরকারকে সফল করার জন্য বাংলাদেশ সরকার যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি পরিকল্পনা হলো জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ ও তা জাতীয় পর্যায়ে সরবরাহ করে থাকে। যার ফলে জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ সহজতর হয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে এ তথ্য বিশেষ কাজে লাগে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিলকল্পনা গ্রহণ করেছে। যা জাতীয় ও আঞ্চলিক পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে থাকে।
৭. কারিগরি শিক্ষাকে যুযোগপযোগী করার পরিকল্পনা : প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতির বলয় থেকে বের হয়ে আসার জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের মধ্যে দিয়ে জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার মধ্যে দিয়ে পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব। কারিগরি জ্ঞানে প্রসারের মধ্যে দিয়ে জনগণের নিরক্ষরতা ও বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। আর নিরক্ষরতা ও বেকারত্ব দূর করতে পারলেই উন্নয়নের সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব।
৮. কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি : স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সফল করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে স্থানীয় সরকারের যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। এলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা স্থানীয় উন্নয়নে সহায়ক।
৯. স্থানীয় সরকারের সমস্যাসমূহ চিহ্নিতকরণ : স্থানীয় সরকারকে সফল করার লক্ষে বাংলাদেশ সরকার যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি পরিকল্পনা হলো স্থানীয় সরকারের বাধা বা সমস্যা চিহ্নিত করা। স্থানীয় সরকার যে সকল বাধা বা সমস্যায় বিদ্যমান তা চিহ্নিত করে বাধাসমূহ দূর করতে পারলেই স্থানীয় সরকারের সফলতার দ্বার উন্মোচিত হবে। তাই স্থানীয় সরকারের সমস্যাসমূহ বা বাধাসমূহ চিহ্নিত করা একান্ত অপরিহার্য একটি বিষয়।
১০. স্বনির্ভরশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে : বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে আজ পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বেশির ভাগ নির্ভর করছে বৈদেশিক সাহায্যের উপর। এই পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হলো সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় উন্নয়নের জন্য নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন : শিল্প কলকারখানা স্থাপন, কারিগরি শিক্ষা প্রদান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রভৃতি।
উপসংহার : উপরের আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় উন্নয়নের জন্য যে সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা সত্যিই যুগোপযোগী। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নয়ন সাধন হবে। এর ফলে স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*