নারী রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব আলোচনা কর।

অথবা, নারী রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্বের তাৎপর্য তুলে ধর।
অথবা, নারী রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে যা জান তা উল্লেখ কর।
অথবা, নারী রাষ্ট্রনেতাদের মতে নারী নেতৃত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা :
স্বাধীনতার ৪০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ প্রায় এক তৃতীয়াংশ সময় নারী নেতৃত্বের অধীনে শাসিত হয়েছে। সামরিক শাসনামল বাদ দিলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। একটি দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ হয়েও ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ ছিল পৃথিবীর ১২তম দেশ, যার শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসেন একজন নারী। আরো একটি বৈশিষ্ট্য ছিল বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যার প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রী উভয়েই মহিলা, যা আজও বহাল আছে। পরবর্তীকালে নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের
অনেক রাষ্ট্রে এ ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকতে দেখা যায়। তাই নারী নেতৃত্ব বিশ্বে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নারী রাষ্ট্র প্রধানদের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব : নারী রাষ্ট্রপ্রধানদের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্বের ভিন্নতা প্রকাশ পায়। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. জনগণের প্রত্যাশা : নারী হয়েও রাষ্ট্রের উচ্চতম নেতৃত্বের দায়িত্ব পাওয়ার অর্থই হচ্ছে, তাদের পূর্বতন সহকর্মীদের তুলনায় তারা অনেক উন্নতমানের। জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণে সাধারণ পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধানের তুলনায় তাদের কর্মে অধিক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সে সাথে মা হওয়ার কারণে কিছুটা সময় পরিবারের জন্য ব্যয় করতে তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন, যা ছিল অত্যন্ত দুরূহ। এরা প্রত্যেকেই মত প্রকাশ করেন যে, অসংখ্য পুরুষের তুলনায় যেহেতু মাত্র ৩০ জন নারী বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে এসেছেন, এজন্য তাদের শাসন পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে কোনো বিশেষ উপসংহারে পৌঁছান সম্ভব নয়।
২. পরিবার ও সমাজে নারীর অবস্থান : পরিবার ও সমাজে নারীর বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতা ভিন্ন হওয়ায় তারা অন্য অনেক বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। এ মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে পশ্চিমের অধিকাংশ নারী রাষ্ট্র পরিচালকের উন্নয়ন এজেন্ডাতে— শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশু পরিচর্যা ইত্যাদি বিষয়কে তারা মনে করেন সমাজ উন্নয়নের পূর্বশর্ত। জো হারলেম বলেছেন, নারীরা এ ধরনের ইস্যুর উপর গুরুত্ব দেয়ায় তাদের ‘সফট ইস্যু’ বা ‘নারীর ইস্যু’ বলে উল্লেখ করার প্রবণতা ছিল” ।
৩. সাপোর্ট বেস তৈরি করা : নারী নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংসদে তার সাপোর্ট বেস তৈরি করা। এর অভাবে আমেরিকার নারী আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতিতে তাদের অনুপ্রবেশ অবস্থান নগণ্য। কারণ সেখানে কংগ্রেসে নারী সদস্যের সংখ্যা মাত্র ৩ শতাংশ ও সিনেটে ২৩ শতাংশ। সংসদে ৩০ শতাংশের অধিক নারী সদস্য থাকায় এবং সংসদে উচ্চ হারে নারী সদস্যের উপস্থিতি থাকায় সামাজিক উন্নয়নের ইস্যু পেয়েছেন সুইডেন, ডেনমার্ক, ‘জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে। এশিয়ার নারী নেত্রীরা পারিবারিক উত্তরাধিকারসূত্রে রাজনীতিতে প্রবেশ করলেও তারা সবাই জাতীয় সংকট ও রাজনৈতিক জটিলতার সন্ধিক্ষণে সমঝোতা প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন। পিতা বা স্বামীর ঐতিহ্য তাদের জন্য রাজনীতির দুয়ার খুলে দিলেও সাথে সাথে তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি করেছে। অধিকাংশ নারীনেত্রীর মধ্যে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে। বেনজির ভুট্টো, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছেন। অং সাং সুচি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নিরলস সংগ্রামে এক দশকের অধিক গৃহবন্দি আছেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পশ্চিমা দেশের নারী নেত্রীর অভিজ্ঞতার সাথে বাংলাদেশের অবস্থা প্রত্যক্ষভাবে তুলনীয় না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌলিক সামঞ্জস্য দেখা যায়। বাংলাদেশে সমস্যা আরো গুরুতর, সমাজ আরো রক্ষণশীল ও গণতন্ত্রায়ন প্রক্রিয়া সুদৃঢ় না হওয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনা অধিক চ্যালেঞ্জপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে, যে কোনো রাষ্ট্র পরিচালকের জন্য সকল ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ব্যাপারটি অত্যাবশ্যকীয়। বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মাহাবুবুল হক বলেছিলেন,
“তৃতীয় বিশ্বের শাসকের জন্য উন্নয়নের সবচেয়ে স্বতঃসিদ্ধ ও স্পষ্টত প্রতীয়মান ইস্যুটি আবিষ্কার করাই হচ্ছে সবচেয়ে দুরূহ, আর তা হলো নারীর ক্ষমতায়ন।” রাজনীতিতে তাদের সাফল্যের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, পুরুষ প্রধান সংসদে ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশ নারীর অংশগ্রহণ ও অবস্থান সুদৃঢ় করা। কিন্তু দৃশ্যত নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ এক শঙ্কাকুল পরিস্থিতিতে এসে দাঁড়িয়েছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*