নারী উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ব্যাখ্যা কর।

অথবা, নারী উন্নয়ন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নির্যাতন বন্ধ, নারী পাচার প্রতিরোধ, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা বিধান এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল স্রোতোধারায় নারীর পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ নারীর সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা নিম্নরূপ :
১.জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০১৩ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন জেলা পর্যায়ে মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (WTC) সমূহের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মক্ষমতার কার্যালয় বিদ্যমান মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উন্নয়ন ও বৃত্তিমূলক আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দরিদ্র মহিলাদের (১৬-৪৫ বছর) দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৪৩০ লক্ষ টাকা।
২. ট্রেনিং ফর ডিজএডভানটেজ ওমেন অন রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) জিরানী, গাজীপুর প্রকল্পের আওতায় প্রতি দুই মাস পর পর আবাসিকভাবে ৩২ জন করে প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করছে এবং তাদের বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জানুয়ারি ২০১১ হতে ফেব্রুয়ারি ২০১২ পর্যন্ত ১৫৩ জন প্রশিক্ষণার্থী চাকরি পেয়েছে। ২০১১-২০১২ অর্থবছরে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ১৩০ লক্ষ টাকা।
৩. দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারি অর্থানুকূল্যে তথ্যপ্রযুক্তি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষিত, বেকার মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান এবং কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি করে অর্থনৈতিক
উন্নয়নের অবদান রাখার লক্ষে জুলাই ২০০৮ থেকে জুন ২০১২ পর্যন্ত মেয়াদে বাংলাদেশ সরকারের ১৬৭৫.৪৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলা ভিত্তিক মহিলা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট ৩০টি জেলায় বছরে ৪৮০০ জন মহিলাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ২০১২-১২ অর্থবছরে এডিপিতে প্রকল্পের অনুকূলে ৩৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
৪.শহর অঞ্চলের দরিদ্র, বেকার, বিত্তহীন মহিলাদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মক্ষম ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা এবং প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে অক্টোবর ২০০৯ হতে সেপ্টেম্বর ২০১৩ মেয়াদে ১৮৮১.৯৬ লক্ষ টাকা ব্যয় সংবলিত নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় ৪৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ২৭,৬০০ জন মহিলাকে বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং সম্ভাবনাময় প্রশিক্ষণার্থীদের জাতীয় মহিলা সংস্থা পরিচালিত আবর্তক ঋণ তহবিলের অর্থ থেকে ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। ২০১১- ১২ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে ১৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
৫. ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মাহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্পের (২০১১- ১৪) এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সুবিধাদি সম্পর্কে মহিলাদের সচেতন করে তথ্য জগতে তাদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে সহায়তা করা। প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত দশটি উপজেলায় ১০ টি তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। উক্ত ১০টি তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মহিলাদের জন্য বছরে ১২০টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রকল্প মেয়াদকাল সর্বমোট ১ লক্ষ মহিলাকে উক্ত সুবিধা প্রদানের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১১-১৩ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে ১৬৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
৬.অগ্রসর, অবহেলিত, বেকার মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার লক্ষে জাতীয় মহিলা সংস্থা দর্জি বিজ্ঞান, এমব্রয়ডারি, ব্লক-বাটিক, চামড়াজাত শিল্প ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। জাতীয় মহিলা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমির মাধ্যমে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৯৪ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এডিপেতে এর অনুকূলে ১৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
৭.খাদ্য জীবিকার নিরাপত্তার লক্ষে গৃহীত ফুড এন্ড লাইভলিহুড সিকিউরিটি (FLS) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো উত্তর বঙ্গের তিনটি জেলার অতি দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনমানের উন্নয়ন সাধন। প্রকল্পটি নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ২২টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির উপকারভোগী ৮০, ০০০ জন অতি দরিদ্র নারী। ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে ৪,৭২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
৮.প্রমোশন অব জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ওমেন্স এম্পাওয়ারমেন্ট প্রকল্পের আওতায় মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও সচেতন করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা, সম্মেলন এবং সহায়তা সেবার মাধ্যমে আইন সংক্রান্ত, স্বাস্থ্য সহায়তা এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো সামাজিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈষম্যমূলক আচরণ রোধকল্পে নারী পুরুষের মধ্যে সমতার জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ এবং জন স্বাস্থ্য ও জন অধিকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ক্ষমতায়ন। ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ৪৯৬ লক্ষ টাকা।
৯. পলিসি লিডারশীপ অ্যান্ড এ্যাডভোকেসি ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি (প্লাজ-২) প্রকল্পটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েরGender Responsive Budget এবং Gender Responsive Planning উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলছে। জেন্ডার রেসপনসিভ প্ল্যানিংকে মেইনস্টিমিং করার লক্ষে জাতীয় পরিকল্পনা উন্নয়ন একাডেমির কারিকুলামে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি জুলাই ২০০৬ থেকে জুন ২০১২ মেয়াদের বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের এডিপিতে এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৫৯৮ লক্ষ টাকা।
১০. চাকরি বিনিয়োগ তথ্য কেন্দ্র : এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত, স্বশিক্ষিত, দক্ষ, অদক্ষ সকল শ্রেণির মহিলাদের নাম নিবন্ধসহ চাকরি প্রাপ্তিতে সহায়তাকরণ কার্যক্রম চালু হচ্ছে।
১১. নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল দেশের দুস্থ, অসহায় ও নির্যাতিত নারীদের কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে পারিবারিক সমস্যা/বিবাদ মীমাংসা, পারিবারিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, স্ত্রী ও সন্তানের ভরণপোষণ ও দেন মোহরানা আদায় করা হয়।
উপসংহার : মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ও নারী ও শিশু উন্নয়নে বিবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশের নারী সমাজকে উৎপাদনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার লক্ষে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য ৬টি বিভাগীয় সদরে ৬টি মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৬টি ট্রেডে দুই শিফটে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলু রয়েছে। উল্লিখিত কেন্দ্রসমূহ থেকে প্রতি বছর ৪,৩২০ জন মহিলাকে প্রদান করা হচ্ছে। ফলে দেশে-বিদেশে দক্ষ ও আধা দক্ষ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এছাড়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মিরপুর হতে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান উপযোগী হাউস কিপিংসহ বিভিন্ন ট্রেডে বছরে প্রায় ১০ হাজার জন যুবমহিলা বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ করছে। অন্যদিকে নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বৈষম্যমূলক আইনসমূহ সংশোধন, কর্মক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা বিধান, নারী- কর্মবান্ধব পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*