তাহার মত দীন-দরিদ্রের প্রতি সকলেই ভ্রুক্ষেপহীন। দুই দণ্ড থামিয়া এখানে কেহই তো তাহার কুশলও জিজ্ঞাসা করে না।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে উদ্ধৃত বাক্যটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : গহুরালির শহর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা প্রসঙ্গে কথাগুলো বলা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : মাউলতলা গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত নতুন রাস্তা তৈরি হবার পর গ্রামের পুরুষেরা একে একে প্রায় সকলেই শহর ঘুরে আসে। সাথে নিয়ে আসে নাগরিক জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতার কিছু খণ্ড খণ্ড পরিচয়। গহুরালিও একদিন তার সব ক’টি জামা গায়ে দিয়ে, মুখে মাথায় ভালো করে তেল মেখে শহর দেখতে বেরিয়ে পড়ল। একটানা তিনদিন শহর দেখে বেশ খানিকটা বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা অর্জন করে সে আবার তার গ্রামে ফিরে এল। গহুরালির শহর দেখার অভিজ্ঞতা যেমন খানিকটা রোমাঞ্চকর তেমনি খানিকটা বিষণ্ন। শহরের রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বাড়িঘর দেখে সে বিস্ময়ে অভিভূত হয়। শহরের মানুষজন সম্পর্কে জোনাবালির কাছে শোনা গল্পের চাক্ষুষ প্রমাণটি সে শহরে এসে পেয়ে যায়। এখানকার মানুষের জীবন পদ্ধতির অনেক কিছুই তার কাছে অভিনব বলে মনে হয়। শহুরে মানুষদের তার মনে হয় সুখে, ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ এক ভিন্ন জগতের মানুষ যাদের সাথে কোন মিল নেই গ্রামের মানুষের। এসব মানুষের চালচলন, কথাবার্তা, জীবনরীতি, চলাফেরা সবকিছুই গহুরালির কাছে পরম লোভনীয় বলে মনে হয়। তৃষ্ণার দৃষ্টি নিয়ে সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে এই জীবনকে। তবে এই জীবনের সবটুকুই তার ভালো লাগে না। গ্রামীণ সারল্য ও আন্তরিকতার যে উষ্ণ আবহের মধ্যে তার বসবাস সেই সহৃদয় আন্তরিকতার কোন স্পর্শ সে এখানে খুঁজে পায় না। তারা গ্রামে সবাই সবাইকে চেনে এবং একজন অপরিচিতও সেখানে পায় উষ্ণ সম্ভাষণ। পারস্পরিক প্রীতি ও কুশল বিনিময়ে সেখানে কেউই কোন কার্পণ্য করে না। কিন্তু এই ইট-পাথরের নগরীতে সকলেই যেন সকলের অপরিচিত। কারও দিকে কারও চাইবার যেন সময় নেই। বিশেষ করে গহুরালির মত দরিদ্রজনের দিকে কেউই আত্মীয়তার বা সহানুভূতির দৃষ্টি মেলে তাকায় না। দু’দণ্ড থেমে কেউই তারা সাথে কোন কথা বলে না। এমনকি সামান্য কুশলও জিজ্ঞাসা করে না। গহুরালির কাছে এই অভিজ্ঞতাটুকু অনাকাঙ্ক্ষিত ও নির্মম বলে মনে হয়।
মন্তব্য : ইট-পাথরে গড়া শহরে সুখ-ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য আছে ঠিকই, কিন্তু নেই গ্রামীণ সারল্য ও আন্তরিকতা।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*