গ্রামীণ উন্নয়নের উপাদানসমূহ কী কী?

অথবা, গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো কোনো উপাদান ভূমিকা রাখে?
অথবা, পল্লি উন্নয়নের উপাদানগুলো কী কী?
অথবা, পল্লি উন্নয়নের উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, গ্রামীণ উন্নয়নের উপাদানসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, গ্রামীণ উন্নয়নের উপাদানসমূহের বর্ণনা দাও।
উত্তর।। ভূমিকা :
উন্নয়ন হচ্ছে এমন একটি চলমান প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে দেশ বা সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আর্থসামাজিক, মানবিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। গ্রামীণ জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে গ্রামীণ বা পল্লিউন্নয়ন। পল্লির সম্পদসমূহের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে পল্লির জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নই হলো পল্লিউন্নয়ন বা গ্রামীণ উন্নয়ন।
গ্রামীণ উন্নয়নের উপাদানসমূহ : গ্রামীণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কতকগুলো উপাদান বিশেষভাবে কার্যকরী।নিম্নে গ্রামীণ উন্নয়নের উপাদানসমূহ উল্লেখ করা হলো।
১. জনগণের মৌলিক চাহিদা : গ্রামীণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কোনো চাহিদাগুলো জনগণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পূরণ করা দরকার তা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসার নিরাপত্তা ছাড়াও তাদের চাহিদাগুলো প্রাধান্য পেতে পারে।
২. গ্রামীণ উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ : গ্রামীণ উন্নয়ন করতে হলে এর লক্ষ্য নির্ধারণ জরুরি। বর্তমান সরকার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নত করা হবে। নিঃসন্দেহে এটি দারিদ্র্য দূরীকরণে বা গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য একটি গুরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানো বা লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য কী কী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে সেসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
৩. জনগণকে সংগঠিতকরণ : গ্রামীণ উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে সংগঠিত জনগণ। জনগণকে সংগঠিত করে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সুদৃঢ় করতে পারলে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অনেকটা সহজতর হয়।
৪. সমন্বিত ও বহুমুখী কর্মসূচি : গ্রামীণ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে সমন্বিত এবং বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আবশ্যক। সরকার বেসরকারি সংস্থা (NGO) বিদেশি সাহায্য সংস্থা কিংবা স্থানীয় পরিষদে কারো কোনো একক কর্মসূচি দ্বারা গ্রামীণ বা পল্লিউন্নয়ন সম্ভব নয়। গ্রামীণ বা পল্লিউন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং নিশিচত করতে হলে উল্লিখিত সবাইকে সমন্বিত এবং বহুমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে।
৫. উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ : গ্রামীণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে তাদের অভাব, অভিযোগ দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।
৬. কাজের সুযোগ সৃষ্ট : দেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭৩ শতাংশ গ্রামে বাস করে কিন্তু গ্রামে কাজের সুযোগ ক্রমশ সীমিত হয়ে আসছে। শুধু কৃষিক্ষেত্রে এত বিরাট সংখ্যক মানুষের কাজ করার সযোগ নেই। গ্রামীণ উন্নয়নের স্বার্থে গ্রামের মানুষকে গ্রামেই কর্ম নিযুক্ত হতে হবে। অকৃষি খাতের সম্প্রসারণ আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি পুঁজির সংস্থান প্রভৃতি গ্রামীণ উন্নয়নকে সহজ ও দ্রুততর করে।
৭. কৃষির উন্নয়ন : গ্রামীণ জনগোষ্ঠী কৃষি সংশ্লিষ্ট এবং কৃষির উপর নির্ভরশীল। এছাড়া ও জনসংখ্যার তুলনায় কৃষি ভূমির স্বল্পতা রয়েছে। তাই কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন এবং গ্রামে কৃষি ভিত্তিক কুটির ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন ত্বরান্বিত ও ফলপ্রসূ হতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত উপাদানসমূহ গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, ভূমি ও সম্পদের সুসম বণ্টন, বস্তুগত এবং অবস্তুগত প্রভৃতিও কার্যকরী উপাদান।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a7%87%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*