ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ওজোন স্তর ক্ষয়ের নেতিবাচক প্রভাব আলোচনা কর।
অথবা, ওজোন স্তর ক্ষয়ের কারণে কোন ধরনের ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানবসভ্যতার দ্রুত অগ্রগতির পাশাপাশি কিছু পরিবেশগত ঝুঁকিও মারাত্মক আকার ধারণ করছে, যারা মানবসভ্যতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ পরিবেশগত বিপর্যয়ের মধ্যে ওজোন স্তরের ক্ষয় অন্যতম। দ্রুত শিল্পায়ন ও শহরায়ন প্রক্রিয়া ওজোন স্তরের ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করেছে। তবে বিশ্বব্যাপী মানুষ বর্তমানে এ বিষয়ে সচেতন হতে শুরু করেছে। তাই তারা ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ওজোন স্তর ক্ষয়ের প্রভাব : বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা এবং পরিবেশের উপর উপসর্গ থেকে বর্তমানে ওজোন স্তর ক্ষয়ের ক্ষতিকর দিক সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলেও সার্বিকভাবে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের উপর কি কি প্রভাব পড়তে পারে এখনও মানুষ তার অনেক কম তথ্যই জানে। তথাপি ওজোন স্তর ক্ষয়ের নিম্নোক্ত প্রভাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়।
১. মানব স্বাস্থ্যের প্রভাব (Impact on human health) : ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির অধিক পরিমাণ ভূপৃষ্ঠে আসতে শুরু করবে যা মানুষের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করবে। এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো :
ক. চোখের ছানি পড়া, খ. ত্বকের ক্যান্সার, গ. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস, ঘ. ফুসফুসের নানা ক্ষতিকর উপসর্গ দেখা দিতে পারে ।
এক গবেষণায় দেওয়া যায়, ওজোন স্তর ১% হ্রাস পেলে চোখে ছানি পড়ার পরিমাণ ০.৬%-০৮% বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য চোখে ছানি পড়া ও ত্বকের ক্যান্সার এ দু’টি রোগ দঃ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এবং দঃ আফ্রিকা ও পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে যাদের বয়স ৬৫ এর বেশি তাদের ৭৫% এর মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। (জনকণ্ঠ-২২-০৯-২০০১)
২. উদ্ভিদের প্রভাব (Impact an plants) : অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উদ্ভিদ ও ফসল মুক্ত নয়। সয়াবিন, শীম, বরবটি, বাদাম, স্কোয়াম, তরমুজ, বাঁধাকপি গোত্রের সবজি এ অতি বেগুনি রশ্মির দ্বারা সর্বাপেক্ষা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ওজোন হ্রাসের কারণে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত, পাতা ছোট, বীজের উৎকর্ষতা নষ্ট হয় এবং ফসলের আগাছা, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়ে উদ্ভিদের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। পরীক্ষা থেকে দেখা গেছে যে, ওজোন লেভেল ২৫% হ্রাস পেলে সয়াবিনের মতো প্রোটিন সমৃদ্ধ ফসলের উৎপাদন ২০-২৫% কমে যাবে।
৩. সমুদ্র ও জীবন্ত প্রাণীর উপর প্রভাব (Impact in Ocean Organism) : অতি বেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সামুদ্রিক প্রাণীও মুক্ত নয়। সামুদ্রিক ক্ষুদ্র প্রাণী তথা উদ্ভিদ প্লাংটনের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে সমুদ্রের Ecosystem খাদ্যচক্র ব্যাহত হবে। পাটাগোনিয়া অঞ্চলে বর্তমানে অনেক অন্ধ Salmon মাছ ধরা পড়ছে। আবার ওজোন স্তর ২৫% হ্রাস পেলে প্লোটোপ্লাংটন এর উৎপাদন হ্রাস পাবে ৩৫%। (The Daily Bangladesh Observe, 02-03-2003)
৪. পৃথিবীর আবহাওয়াগত প্রভাব (Impact on Global Climate Change) : ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে সৌর রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে পড়ার কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পৃথিবীর আরহাওয়া বদলে যাচ্ছে। আবার এ uv- radiation এর জন্য সবুজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া হওয়ার কারণে বাতাসে CO এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যা বিভিন্ন পরিবেশগত বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করেছে।
ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধে গৃহীত ব্যবস্থা : ১৯৭০ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম উল্লেখ করেন যে, CFC ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে । ১৯৭৪ সালে রোনাল্ড ও মালিনা নামের দু’জন বিজ্ঞানী জানান যে, CFC ক্রমবর্ধমান হারে বায়ুমণ্ডলেযোগ হচ্ছে। কেবল যুক্তরাষ্ট্রই তখন এর বার্ষিক উৎপাদন ছিল ৩৮০ মিলিয়ন । এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র স্প্রে-ক্যান
এ CFC এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রে CFC এর ব্যবহার একইভাবে চলতে থাকে । ১৯৮৭ সালে কানাডার মন্ট্রিলে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ ২৪টি দেশ একত্রিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলে CFC এর
মাত্রা অপরিবর্তিত রাখার মানসে তারা এক চুক্তি স্বাক্ষর করে বা ‘মন্ট্রিল প্রটোকল’ নামে পরিচিত। এ মন্ট্রিল প্রটোকলে২০০০ সাল CFC এর ব্যবহার ৩৫ ভাগ কমিয়ে আনার কথা বলা হয়। ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসের ১ম সপ্তাহেল ন্ডনে অনুষ্ঠিত এক ১২০ জাতি আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্মেলনে আরো ২০টি মন্ট্রিল প্রটোকলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন
করতে সম্মত হয়। তবে এটা যথেষ্ট নয়। কেননা, কোন কোন CFC যা আজকে বাতাসে প্রবেশ করল তা পরবর্তী ১০০ বছরও টিকে থাকতে পারে। ইউরোপীয় কম্যুনিটিভুক্ত দেশসমূহ মার্চ ১৯৮৯ ও ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা ২০০১ সাল নাগাদ ইউরোপে CFC এর ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করবে। যুক্তরাষ্ট্রও তা করতে সম্মত হয়েছিল। উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশ জানিয়েছে যে, এটা তাদের জন্য সম্ভব হবে না, যতক্ষণ তারা CFC এর সহজলভ্য ও সস্তা বিকল্প না পাচ্ছে। তাদের মতে, CFC এর ব্যবহার বন্ধ করলে তাদের উন্নয়ন ব্যাহত হবে। ফ্রিজের মতো জরুরি ঘরোয়া দ্রব্য মানুষের কাছে করা সম্ভব হবে না এবং সিএফসি নির্ভর কম্পিউটার, রেফ্রিজারেটর এবং ইলেকট্রনিক শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে মার্কিন সংস্থা ডুপন্ট ও ব্রিটিশ আইসিআই প্রতিষ্ঠান দু’টি সিএফসি এর সস্তা বিকল্প অধিকারের চেষ্টায় গবেষণা পরিচালনা করছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বায়ুমণ্ডলের চতুর্থতম স্তর হচ্ছে ওজোন স্তর, যা মানুসের ‘জন্য অপরিহার্য। মানবসৃষ্ট কারণে ওজোন স্তর আজ হুমকির সম্মুখীন, তাতে দেখা দিয়েছে ফাটল । ফলশ্রুতিতে মানুষ আজ চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*