একজন রাজা, হাতে রাজদণ্ড, আরেক জন সত্য, হাতে ন্যায়দণ্ড।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু বাংলা সাহিত্যের বিদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ শীর্ষক অভিভাষণ থেকে গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ন্যায়দণ্ডের সাথে রাজদণ্ডের পার্থক্য নির্দেশ করতে গিয়ে কবি উদ্ধৃত বাক্যে ন্যায়দণ্ডকেই সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছেন।
বিশ্লেষণ : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিভূ রাজার হাতে রয়েছে রাজদণ্ড। রাজা রাজ্যের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, রাজদণ্ডের মালিক। তিনি প্রয়োজন মতো রাজদণ্ডের পরিবর্তন সংশোধন বা বিয়োজন করে নিতে পারেন। তাঁর সুবিধা মতো তিনি তা নিজের পক্ষে প্রয়োগ করতে পারেন। শাসন ও শোষণের স্বার্থে রাজা তাঁর রাজদণ্ডের স্বেচ্ছাচারিতা নির্ধারণ করে দিতে পারেন, ব্যবহার করতে পারেন অত্যাচার নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে। রাজা ন্যায়দণ্ডকে ভয় পান। তাই ন্যায়দণ্ডের প্রয়োগ নিজ স্বার্থবিরোধী মনে করেন। কারণ তাতে রাজার সমস্ত অন্যায় ও মিথ্যা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। স্রষ্টার কাছে ন্যায়দণ্ড মুক্তির বাণী, মানুষের কল্যাণের বাণী। আপামর মানুষের মুক্তির জন্য, কল্যাণের জন্য স্রষ্টা কবির কণ্ঠের মাধ্যমে ন্যায়দণ্ডের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কেননা, ন্যায়দণ্ড ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। রাজদণ্ড কখনো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারে না। সেখানে পক্ষপাতিত্ব এবং পক্ষালম্বনের সম্ভাবনা থাকে। সত্য ও ন্যায় পাশাপাশি চলে। সত্য নিশ্চিত হলে ন্যায়ও নিশ্চিত হয়। স্রষ্টা সত্য ন্যায় ও সুন্দরের প্রতিভূ। তাঁর কাছে মিথ্যা, অন্যায়, অসুন্দর পরাভূত হয়। পরাভূত হয় রাজদণ্ডের স্বেচ্ছাচারিতা, অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহার। ফলে অনিশ্চয়তা দূর হয়। রাজবন্দী কবি সে সত্যের বীণা, সে ন্যায়ের সমর্থক। কাজেই রাজদণ্ডের বিচারে তিনি রাজবন্দী হলেও ন্যায়দণ্ডের কাছে তিনি মুক্ত ও স্বাধীন। তাই রাজার সাময়িক নির্যাতন তিনি মেনে নিয়েছেন। কেননা তিনি জানেন ন্যায়বিচারে তিনি অভিযুক্ত নন।
মন্তব্য: সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা কবিকে সাহসী, প্রতিবাদী ও অকুণ্ঠ সত্যের প্রকাশে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। তাই তিনি নির্দ্বিধায় রাজা ও রাজদণ্ডের সমালোচনা করে সত্য ও ন্যায়দণ্ডকে সমুন্নত রাখতে পেরেছেন।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*