উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষার সাথে বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞান কিভাবে সম্পর্কযুক্ত? আলোচনা কর।
অথবা, নারী শিক্ষার সাথে কি বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক আছে? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সামাজিক বিজ্ঞান নারী শিক্ষার সাথে কিভাবে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, নারী শিক্ষা ও বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক সম্পর্কে লিখ।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের সাথে বিভিন্ন সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক উল্লেখ কর।
উত্তরায় ভূমিকা :
জ্ঞান চর্চার বিদ্যমান বিভেদাত্মক সংকীর্ণমনতা দূর করে নারী শিক্ষা জ্ঞানের প্রসারতা ঘটায় নারী পুরুষ পরস্পরের সম্পূরক ও পরিপূরক। উভয়কে নিয়ে সমাজ গঠিত। সমাজের অগ্রগতি, সামাজিক শান্তি ও শৃঙ্খলা, সামাজিক ন্যায়বিচার, সামাজিক সাম্য এসবের মূলে নারী পুরুষ উভয়েই। উভয়ের সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুষম সমাজ গঠন এবং সমাজের নারী পুরুষ সমতাভিত্তিক উন্নয়ন সম্ভব। নারী ও পুরুষের সম্পর্কের সমন্বয়, সমঝোতা ও সহযোগিতা, সুষ্ঠু ও সুষম সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাই নারী পুরুষের সঠিক সম্পর্কের ভিত্তিতে সুষম ও সমতাভিত্তিক সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক : সামাজিক বিজ্ঞান একটি সার্বিক বিষয় এবং নারী শিক্ষার ক্ষুদ্রতর অংশ। এক কথায় নারী শিক্ষা হলো সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ। নিম্নে নারী শিক্ষা ও সামাজিক বিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো :
১. উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও ইতিহাস : নারী পুরুষের সমতাই হলো নারী শিক্ষার বিষয়বস্তু। এটি নারী ও পুরুষের সমতার শিক্ষা কেবল নয়, জেন্ডার সম্পর্কেও বিশদ আলোচনা করে থাকে। এছাড়া সেক্সের তাৎপর্য ও পরিধিও আলোচনা করে থাকে। নারী শিক্ষা সমাজের জেন্ডার পরিস্থিতি ও প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করে সামাজিক সমস্যা তুলে ধরে। অপরপক্ষে, অতীতের বা যুগে যুগে নারী পুরুষের বৈষম্য এবং জেন্ডার পরিস্থিতির তথ্য তুলে ধরে ইতিহাস। ঐতিহাসিক ঘটনা, পরিবেশ পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করে থাকে।
২. উইমেন্স স্টাডিস্/নারী শিক্ষা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান : বিশ্ব নারী নেতৃত্ব, জাতীয় নারী নেতৃত্ব নিয়ে নারী শিক্ষা আলোচনা পর্যালোচনা করে থাকে। রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর নেতৃত্ব, প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার এবং পার্লামেন্ট জেন্ডার বৈষম্য, সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে জেন্ডারের প্রতিফলন ইত্যাদি নারী শিক্ষার আলোচ্যবিষয় হয়ে থাকে। সরকারের শাসনব্যবস্থায় নারীর চিত্র ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান হলো সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা। এখানে জনগণ বলতে নারী ও পুরুষ উভয়কে বুঝানো হয়ে থাকে। নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয় একথা যদিও তত্ত্বগতভাবে স্বীকার করা হয়ে থাকে বাস্তবে নারী ও পুরুষের মধ্যে পুঁজিপতি ও শ্রমিকের মধ্যে উঁচু ও নিচু বৈষম্য, সাদা ও কালোর বৈষম্য দেখা যায়। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে বৈষম্য দেখা যায়। কেবল তাই নয়, নারী পুরুষ, শ্রেণি, বর্ণ ও মানবগোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার অসাম্য ও বৈষম্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা করা হয়।
৩. উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও অর্থনীতি : অর্থনীতি জেন্ডার বৈষম্য নিয়ে আলোকপাত করে থাকে। শ্রমশক্তিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব একেবারে নগণ্য থাকে। পুরুষ যে সময় কাজ করে যে মজুরি পায়, নারী সে সময় কাজ করে উক্ত টাকা বা মজুরি পায় না। অর্থনীতিতে এ জেন্ডার বৈষম্য নারী শিক্ষার গবেষণার বিষয়। উন্নয়ন কৌশলে সকল পুরুষের প্রভাব,
উন্নয়নের নীতি ও কৌশল নির্ধারণে নারীর ভূমিকা অনুপস্থিত ও অদৃশ্য। অন্যদিকে, নারী শিক্ষা জেন্ডার সমতা অর্জনের লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণ ও উন্নয়ন কর্মে নিয়োজিত জনগণের মধ্যে নারীর কার্যাবলি সম্বন্ধে নারী পুরুষের সচেতনতা সৃষ্টি করা। জেন্ডার বৈষম্যহীন প্রকল্প প্রণয়ন এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করে থাকে নারী শিক্ষা। নারী শিক্ষা নারীদের সকল ধরনের বৈষম্য দূর করার জন্য চিত্র তুলে ধরে। কেবল তাই নয়, নারীদের মুক্তি ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী হলো যে কোনো সমাজের অর্ধাংশ আর এ অর্ধাংশ মানবগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কোনো সমাজ উন্নতি লাভ করতে পারে না। তাই নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার একই মানবগোষ্ঠীর আদর্শে কাজ করতে হবে। তবেই শ্রমের ও উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
৪. উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞান সমাজের সার্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে থাকে। সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিকীকরণ ও সামাজিক ব্রেণিবিন্যাস নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করে থাকে। তবে এ গবেষণা হয় এককেন্দ্রিক। কেননা, গবেষণার গবেষক বেশিরভাগই পুরুষ হয়ে থাকে। ফলে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষদের প্রাধান্য প্রতিফলিত হয়ে থাকে। এছাড়া সমাজবিজ্ঞানে পরিবার, বিবাহ ও সামাজিক সংগঠন প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে। অন্যদিকে, নারী শিক্ষা পরিবারে নারী ও পুরুষের জেন্ডার সম্পর্ক, জেন্ডার বৈষম্যের মাধ্যমে শ্রমবিভাগ প্রভৃতি বিষয়ে পর্যালোচনা করে সাম্যের মূল্যায়ন করে থাকে। পরিবারে নারীদের প্রতি যে বৈষম্য করা হয় তার চিত্র তুলে ধরে সমাজকে সচেতন করে তোলে। আবার বিবাহের সামাজিক সমস্যা ও এর সমাধান নিয়ে পর্যালোচনা ও সুপারিশ করা হয়ে থাকে।
৫. উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও নৃবিজ্ঞান : নৃবিজ্ঞান হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা। নৃবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্যবিষয় হলো মানববিদ্যা। মানব প্রকৃতি, মানবসমাজের গতিবিধি, মানবগোষ্ঠীর উদ্ভব, সমাজ গঠন, সভ্যতার বিকাশ সবকিছুই নৃবিজ্ঞানের গবেষণার বিষয়বস্তু। বিবাহ ও পরিবার সম্পর্কিত আলোচনাও নৃবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। অপরপক্ষে, সমাজবিজ্ঞান নৃবিজ্ঞানের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ। অতীতে সমাজ বিকাশের প্রাথমিক অবস্থা থেকে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজ করেছে। নারী পুরুষকে বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যে কোনো সমস্যায় দেয় সহানুভূতির আশ্বাস। ফলে আদিকাল হতে সমাজবিকাশে নারীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারী শিক্ষা হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অংশ বা বিভাগ। নারীদের স্বাবলম্বী করা ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী শিক্ষা নারী পুরুষ উভয়কে একই মানবগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে দেখে থাকে। নারীদের শ্রমের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য করা হয় তা দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। সমাজের অংশ হিসেবে তাদেরও পুরুষের মতো শিক্ষার, শ্রমের, নেতৃত্বের, মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। তবে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা ছাড়া সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নশীল দেশে নারীর করুণ অবস্থা বিরাজ করছে। এর মূলে রয়েছে নারীদের আর্থিক অসচ্ছলতা। এ অবস্থার আশু সমাধানের মাধ্যমে নারী জাতির দুর্দশা লাঘব করতে হবে। তাহলে দেশ, সমাজ, জাতি উপকৃত হবে এবং সমাজের উন্নয়ন ঘটবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*