উইমেন্স স্টাডিসের পরিধি আলোচনা কর।

অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের ক্ষেত্রসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের পরিসর আলোচনা কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের পরিধির বর্ণনা দাও।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের ক্ষেত্রসমূহ সম্পর্কে যা জান উল্লেখ কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের ক্ষেত্রসমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, উইমেন্স স্টাডিসের পরিসরের বিস্তারিত বিবরণ দাও।
উত্তরঃ ভূমিকা :
মানবজাতির অর্ধাংশ নারীকে অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমানে টেনে তুলতে তাকে যবনিকার অন্তরাল থেকে বাইরে এনে সামাজিক স্বীকৃতি দানে উইমেন্স স্টাডিসের আবশ্যকতা মেনে না নিয়ে উপায় নেই। রোমের তথাকথিত গণতান্ত্রিক পদসমূহ থেকেও নারী বঞ্চিত ছিল। এমনকি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে পশ্চিমা দেশে নারীর ভোটাধিকার ছিল না। গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারী ভোটাধিকার লার্ভ করে ১৯২০ সালে। ১৯২০ সালে ভোটাধিকার অর্জনের পিছনের ইতিহাস নারীর কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। এ সংগ্রামে সংকল্প, শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল নারী শিক্ষার প্রবক্তারা। উইমেন্স স্টাডিসের পরিধি/ক্ষেত্র/পরিসর : উইমেন্স স্টাডিসের ব্যাপক নারী শিক্ষা ও অধ্যয়নে নারীবিষয়ক আলোচনা করে সমাজের বিভিন্ন দিক ও নারী নির্যাতনের কারণগুলো তুলে ধরে। নিম্নে নারী অধ্যয়নের বা উইমেন্স স্টাডিসের পরিধিগুলো আলোচনা করা হলো :
১. উইমেন্স স্টাডিস বা নারী ও পরিবার : নারী ও পরিবার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে নারী অধ্যয়ন শাস্ত্র পরিবারের বিভিন্ন দিকগুলো তুলে ধরে নারী সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিচার, বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করে।
২. উইমেন্স স্টাডিস বা নারী অধ্যয়ন ও ইতিহাস : একদেশদর্শী ইতিহাসকে নারী পুরুষের সমদর্শী ইতিহাসে রূপান্ত রকরণই উইমেন্স স্টাডিসের বিষয়বস্তু। ঐতিহাসিক অতীতে জেন্ডার গোষ্ঠীর অস্তিত্ব ও রূপ এবং সেক্সের তাৎপর্য ও পরিধি, বিভিন্ন সময়ে নারী পুরুষের সেক্স ভূমিকা এবং সেক্স প্রতীকতা পিতৃতন্ত্র ও পিতৃতন্ত্রের পূর্ববর্তী অবস্থা, যুগে যুগে জেন্ডারের রকম এবং সমাজে জেন্ডারের অবস্থিতি ও প্রভাব এসবই নারী অধ্যয়নের বিষয়বস্তু।
৩. উইমেন্স স্টাডিস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান : ক্ষমতার বৈষম্য জেন্ডারে শুরু হয়ে শ্রেণি, বর্ণ ও নরগোষ্ঠী বৈষম্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। কাজেই উইমেন্স স্টাডিস বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বৈষম্যের স্বরূপ ছাড়া কিছু নয়। তাদের উৎপত্তির কারণ, তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য, তাদের আপেক্ষিক ভূমিকা এবং মিথস্ক্রিয়া ও ফলশ্রুতিতে রাষ্ট্র ক্ষমতার উপর বিভিন্ন শ্রেণির প্রভাব আলোচনা করে।
৪. উইমেন্স স্টাডিস/নারী শিক্ষা ও অর্থনীতি : শ্রম শক্তিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব নগণ্য। নারীকে যে কেবল নারীসুলভ ঘর গৃহস্থালির কাজে বিনা বেতনে গৃহে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাই নয়, গুটিকতক নারী ঘরের বাইরে বেতনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। তাদের নারীসুলভ গৃহকর্মের বিস্তারিত রূপ এমন কতিপয় কর্মের মধ্যে সীমাদ্ধ করে রাখা হয়েছে। যেমন- কেরানি, গোপনীয় সহকারী, একান্ত সচিব, ধাত্রী, সেবিকা, সমাজকল্যাণ কর্মী ইত্যাদি।
৫. নারী ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : উন্নয়নশীল দেশগুলো সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ । একটি উচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা কমিশনের তত্ত্বাবধানে উন্নয়ন নীতিনির্ধারণ, উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং প্রকল্পের ফলাফল মূল্যায়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম কৌশল।
৬. সমাজবিজ্ঞান ও নারী অধ্যয়ন/উইমেল স্টাডিস : সমাজবিজ্ঞান সমাজ ও সামাজিক সম্পর্ক, সামাজিকীকরণ, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা করে। মানবজাতি ও সমাজের অর্ধাংশ নারীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট সমাজবিজ্ঞানের মতবাদ ও থিয়োরিগুলোকে জেন্ডার সমতার সূত্র ধরে পুনঃপর্যালোচনা করা উইমেন্স স্টাডিসের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত।
৭. নৃবিজ্ঞান ও নারী শিক্ষা/উইমেন্স স্টাডিস : নৃবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান সমাজ ও মানুষ নিয়ে গবেষণা করে। তবে নৃবিজ্ঞানের আলোচ্যবিষয় অতীতের সমাজ, সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টি বর্তমান সমাজের দিকে। কিন্তু অতীত ইতিহাস পর্যালোচনায় নৃবিজ্ঞানের পরিধি পুরুষে সীমাবদ্ধ, নারী নৃবিজ্ঞানের গবেষণা থেকে অদৃশ্য। অদৃশ্য নারীকে দৃশ্যপটে আনার দায়িত্ব উইমেন্স স্টাডিসের।
৮. নারী ও আন্তর্জাতিকতা : দুনিয়া আজ বিশ্বায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বিশ্বায়নের প্রক্রিয়ায় নারীকে কিভাবে সংযুক্ত করা যায়, বিশ্বায়নকে কিভাবে জেন্ডার সমতা বৃদ্ধিতে কার্যকর করা যায় তা উইমেন্স স্টাডিসের গবেষণার বিষয়বস্তু।
৯. গবেষণা ও নারী : অনুসন্ধানের সকল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নারী অধ্যয়নে প্রযোজ্য এবং স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সকল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গবেষক ও তার গবেষণার লক্ষ্যবস্তুর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি পরস্পরের অংশগ্রহণের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে ভাব, ভাষা ও তথ্যের দ্বিমুখী আদানপ্রদান ঘটে। ফলে ষণার ফল ও সিদ্ধান্ত বস্তুনিষ্ঠ এবং জীবনের কাছাকাছি এসে যায়। নারী শ্রমিকদেরও গবেষণার সম্মুখীন হতে হয় এবং ভাব আদানপ্রদান করতে হয়।
১০. নারী ও কৃষি শিল্প : নারী অধ্যয়ন জ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে জড়িত এবং এর পরিধি অন্য সব শাখাকে ছুঁয়ে যায়। নারী কেবল কৃষি ও শিল্প উন্নয়নে ভূমিকা রাখে না, তারা এগুলোর প্রতি কর্মসম্পাদন করে থাকে। কৃষিতে বাহ্যিক দিক থেকে পুরুষের ভূমিকা থাকলেও আন্তঃসম্পর্কে নারী অবদান রেখে থাকে। তাছাড়া বর্তমান শিল্প ব্যবস্থায় নারীর সম্পর্ক রয়েছে। নারী কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে নারী অধ্যয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নারীর কৃষি ও শিল্প সম্পর্কিত কার্যাবলি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জ্ঞানের যেসব শাখায় নারী সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রসঙ্গক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, উইমেন্স স্টাডিসে জেন্ডারের উপর তা আলোকপাত করা হয়। তাছাড়া জেন্ডার সমতাকে যেসব সমস্যা ও পরিবেশের সমাধানে মুখ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা যায় নারী শিক্ষা তা নিয়ে গবেষণা করে। এ প্রসঙ্গে পুঁজি গঠন ও পুঁজি বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তরে নারীর শ্রমকে কিভাবে বিশ্ব বাজার ব্যবস্থায় সমন্বয় করা হয় তা নারী শিক্ষায় পর্যালোচনা করে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf-%e0%a6%90%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%b8%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%93/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*