ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় যেসব নির্দেশনাবলি রয়েছে তা আলোচনা কর।

অথবা, ইউনিয়ন পরিষদের পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দেশনাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্দেশনাগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার যেসব নির্দেশনাবলি রয়েছে তা বর্ণনা কর।
অথবা, ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নির্দেশনাবলি উল্লেখ কর।
অথবা, ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যেসব নির্দেশনা রয়েছে তা লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : গ্রামীণ পর্যায়ে দায়িত্বশীল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালের বাংলাদেশ স্থানীয় শাসন অর্ডিন্যাস অনুযায়ী কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত প্রতিটি ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের কার্যকাল ৫ বছর।
ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে পরিচলনার নির্দেশনাসমূহ : ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার জন্য আইন, বিধি এবং সার্কুলার জারি করা হলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এসব প্রয়োগে জটিলতা দেখা যায়। এর জন্য নির্বাচিত জন প্রতিনিধি ও কর্মচারীদের অবহেলা যেমন দায়ী তেমনি ভাবে এ প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও তদারককারী কর্তৃপক্ষও দায়ী। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সচিবদের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কিছু নির্দেশনাবলি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১. স্থানীয়ভাবে জনকল্যাণের দৃষ্টিকোণ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্ভব হয়েছে। জনকল্যাণের বিষয়ে চেয়ারম্যানকে সদা সচেতন থাকতে হবে। সে লক্ষ্যে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ভিন্ন প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ অফিস খোলা রাখতে হবে

২. চেয়ারম্যান ও সচিবকে নিয়মিত অফিসে আসতে হবে। চেয়ারম্যান প্রত্যহ অফিসে না আসলে ও সচিবকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিদিন অফিসে আসতে হবে। চেয়ারম্যান সচিবের নিয়মিত হাজিরা নিশ্চিত করবেন। চেয়ারম্যানকে স্থানীয়ভাবে এলাকায় বসবাস করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশ সংবলিত স্মরক নং শা – ৭/ ৪ ইউপি – ২/৮৬/৫৮১ (৫২৪) তারিখ ৩১/৭/১৯৮৬।
৩. চেয়ারম্যান ও সচিবের মধ্যে কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব থাকবে না। সচিব ইউনিয়ন পরিষদে কর্মচারী হিসেবে চেয়ারম্যানের অধীনস্থ। সচিব চেয়ারম্যানের আইনসঙ্গত আদেশ নির্দেশ প্রতিপালন করবেন এবং চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবেন।

৪. ইউনিয়নের মৌলিক তথ্যসমূহ হাল নাগাদ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে।
৫. চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণের জন্য পৃথক দুটি ফাইল সংরক্ষণ করতে হবে যাতে, তাদের জীবন বৃত্তান্ত নির্বাচন, গেজেট, শপথ গ্রহণ, দায়িত্ব গ্রহণ, সম্পত্তির বিবরণ, সম্মানী সংক্রান্ত চিঠিপত্র ইত্যাদি বিষয় থাকবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সচিব চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ হতে তথ্যাদি সংগ্রহ করবেন।
৬. সচিব ও গ্রাম পুলিশের সদস্যদের জন্য দুটি ব্যক্তিগত ফাইল সংরক্ষণ করতে হবে যাতে তাদের জীবন বৃত্তান্ত, নিয়োগ, বদলি, বেতনসহ যাবতীয় বিষয় থাকবে ।
৭. পরিষদ অফিসে বিষয়ভিত্তিক পৃথকপৃথক ফাইল/ নথি সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন : হাট বাজার, পল্লি রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচি, ভিজিডি, ত্রাণ প্রাপ্তি বিতরণ জলমহল, প্রকল্প প্রভৃতি। প্রতিটি বিষয়ের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট ফাইল হতে পরিচালিত হবে।
৮. পত্র প্রাপ্তি প্রেরণ রেজিস্টার পঞ্জিকা বছরের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিক ক্রমিক নম্বর দ্বারা ব্যবহার করতে হবে। রেজিস্টারের কলামসমূহ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৯. সরকারি সার্কুলার, বিধি গেজেট অথবা অন্য যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশাবলি গার্ড ফাইলে বা সার্কুলার ফাইলে সংরক্ষণ করতে হবে।
১০. সঠিকভাবে নিবন্ধন প্রত্যয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
১১. যাবতীয় আদায় রসিদসমূহ পৃথক পৃথক স্টক রেজিস্টারের মাধ্যমে হিসাব রাখতে হবে।
১২. ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক ও বাৎসরিক প্রকৃত আয় ব্যয়ের হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করতে হবে।
১৩. প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদকে ১৫ জুনের মধ্যে পরবর্তী অর্থ বছরের বাজেট প্রণয়ন করে পরিষদের অনুমোদনের সিদ্ধান্তসহ জেলা প্রশাসকের নিকট অনুমোদনের জন্য প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে।
১৪. পরিষদের সকল প্রকার আয় পরিষদ তহবিলে জমা করে তার পর খরচ করতে হবে।
১৫. ইউপি অধ্যাদেশের ৪৫ নং ধারা এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের ২৭/০২/৯৫ তারিখের প্রজেইত / বিবিধ ৩১/ ৯৪/ ১৬৬ নং স্মারকের আদেশ অনুযায়ী হাট বাজার, জলমহাল, ফেরিঘাট প্রভৃতির আয় হতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে।
১৬. পরিষদের যাবতীয় লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে। ক্যাশ বই লেনদেন অনুষ্ঠিত হবার সাথে সাথেই লিখতে হবে। প্রতিমাসে ব্যাংক হিসাবের সাথে ক্যাশ বুকের সমন্বয় করতে হবে।
১৭. ১৯৬০ সালের কর বিধি অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই কর ধার্য করা হয় না। কর বিধি অনুযায়ী কর ধার্য করে বছরের শুরুতেই প্রতিমাসের জন্য আদায় লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে কর আদায় কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হবে।
১৮. হাল সালের কর আদায়ের সাথে সাথে বকেয়া কর আদায় করতে হবে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারগণ নিজেদের কর পরিশোধ করে জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করবেন।
১৯. খোয়াড়, হাট বাজার, জলমহাল ও ফেরিঘাটের জন্য পৃথক পৃথক রেজিস্টার করতে হবে। টেন্ডার পদ্ধতির . মাধ্যমে হাট বাজার, জলমহাল ইজারা দিতে হবে।
২০. ইউনিয়ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের খতিয়ান ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রায়শ লক্ষণীয় প্রকল্পকমিটির সাথে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো যোগসূত্র থাকে না। ফলে ইউনিয়ন পরিষদে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কোনো খতিয়ান থাকে না ।
২১. ইউনিয়ন পরিষদকে কেন্দ্র করে সরকার বিভিন্ন কমিটি গঠন করেন। যেমন : টেন্ডার কমিটি, হাটবাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি ইত্যাদি। যাবতীয় কমিটির কার্যক্রম সময়মতো পরিচালনা করতে হবে এবং কমিটির কার্যক্রমের খতিয়ান ইউনিয়ন পরিষদে থাকতে হবে।
২২. ইউনিয়ন পরিষদের নিকট চাহিদাকৃত তথ্য যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত দিক নির্দেশনাসমূহই ইউনিয়ন পরিষদ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয় । সরকার প্রদত্ত চিঠি, আইন,সার্কুলার যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*