আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পটিতে ইনাম, ফেকু ও সুহাস তিনটি নষ্টচরিত্র হলেও এদের সমন্বিত ‘নষ্ট সমাজ’ একটি মুখ্যচরিত্র হিসেবে গল্পে ভূমিকা পালন করেছে।”— আলোচনা কর।

অথবা, আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পটিতে একদিকে জীবনযুদ্ধে পরাজিত বৃদ্ধের হাহাকার, অপরদিকে নষ্ট সমাজের নষ্ট তরুণের পাশবিক ভয়ংকর মদমত্ত উল্লাস স্পষ্টভাবে উৎকীর্ণ।”- উক্তিটির যথার্থতা বিশ্লেষণ কর।
উত্তরয় ভূমিকা :
বর্তমান সময়ের বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাকার হাসান আজিজুল হক (জ. ১৯৩৯-) ছোটগল্পের ধারায় সংযোজন করেছেন একটি স্বতন্ত্র মাত্রা। প্রধানত, উত্তর-বাংলার গ্রামীণ জীবন ও জনপদ তাঁর ছোটগল্পের কেন্দ্রীয় শিল্প- উপাদান। বস্তুবাদী জীবনদৃষ্টির আলোয় তিনি উন্মোচন করেছেন সমাজজীবনের বহুমাত্রিক অবক্ষয়, শোষিত দলিত মানুষের হাহাকার, নিম্নবর্গের দ্রোহ ও সংক্ষোভ কখনো বা তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কাহিনি। বস্তুত, হাসান আজিজুল হক হচ্ছেন সেই ব্যতিক্রমী গল্পকার, যাঁর বেশ কিছু গল্প সমগ্র বাংলা ছোটগল্পের ধারায় নির্দ্বিধায় প্রথম পংক্তিতে আসন পাবার যোগ্য। উত্তর-বাংলার গ্রামীণ জনপদের ভাঙন, মূল্যবোধের ধস, সামাজিক শোষণ, কখনো প্রতিবাদ, বাঁচার সংগ্রাম- এসব কথা নিয়ে হাসানের গল্পজগৎ। সামাজিক অবক্ষয় এবং মূল্যবোধের বিপর্যয় ধরতে তিনি ব্যক্তিমানুষের যৌনজীবনের পদস্খলনকেই তাঁর গল্পের
শিল্প-উপাদান হিসেবে নির্বাচন করেছেন প্রাক-সত্তর গল্পপর্বে। কিন্তু ক্রমে তিনি বগাহন করছেন রাঢ় বাংলার বৃহত্তর জনজীবন সাগরে, এবং সেখান থেকে এনেছেন বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী সুধা, দ্রোহ-বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের সূর্যদীপ্ত বাণী। আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ হাসান আজিজুল হকের একটি অসামান্য নির্মাণ। অভিন্ন নামের গল্প-সংকলন ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ (১৯৬৭) গ্রন্থে এটি গ্রথিত। উদ্বাস্তু ছন্নছাড়া এক শরণার্থী বৃদ্ধের জীবনযাপনের মর্মদাহী এক বৃত্তান্ত আত্মত্মজা ও একটি করবী গাছ’। বস্তুতপক্ষে, বক্ষ্যমাণ গল্পে তেমন কোনো কাহিনি নেই। গ্রামের তিন বখে যাওয়া যুবক দেশছাড়া এক বুড়োর কন্যাকে ভোগের আকাঙ্ক্ষায় বেরিয়েছে, পৌঁছেছে তারা বুড়োর বাড়িতে এবং অর্থের বিনিময়ে স্ত্রীকে শাসন করে বুড়ো দুই যুবককে পাঠিয়ে দিলো আত্মজার ঘরে-এই-ই হচ্ছে বক্ষ্যমাণ প্রতিবেদনের মৌল ঘটনাংশ। ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পের ঘটনাস্রোত এগিয়ে চলেছে চরিত্রের মনোলোকে-কখনো এনাম-ফেকু-সুহাস, কখনো-বা কেশো বুড়োর মনোলোকের ক্রমভঙ্গুর ভাবনায় এগিয়ে চলেছে শিল্পিতা পেয়েছে আলোচ্য গল্পের ঘটনাংশ। ইনাম, ফেকু ও সুহাস তিনটি নষ্টচরিত্র হলেও এদের সমন্বিত চরিত্র নষ্ট সমাজ’ একটি একটি মুখ্যচরিত্র হিসেবে গল্পে ভূমিকা পালন করেছে। এদের কতোপকথনে এদের জীবনযাপন, কর্মপদ্ধতি ও সামাজিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র ব্যক্ত হয়। এরা সবাই কৈশোরোত্তীণ উঠতি যুবক। ইনাম ফেকু-সুহাস-তিনজনই বখে যাওয়া যুবক, অর্থের বিনিময়ে কেশো বুড়োর আত্মজা রুকু-কে ভোগ করতে তারা রাতের আঁধারে বেরিয়েছে, উদ্দেশ্য তাদের কেশো বুড়োর বাড়ি। কিন্তু যাত্রাপথে সে-কথা কেউ-ই বলছে না, বলছেন না লেখকও। বরং উল্টোভাবে দেখি নানা ভাবনায়, কখনো এককভাবে, কখনো সম্মিলিত স্রোতে ভগ্নক্রম বিন্যাসে সময় এগিয়ে চলে, এগিয়ে চলে তিন যুবকের শীতরাত্রির অভিসার। রুকুকে ভোগ করার জন্য তিন যুবকের যাত্রা তাদের ভাবনায় কখনোই ধরা দেয়নি-নাকি কৌশলে তাদের মনস্তাত্ত্বিক উত্তেজনা দূর করতে চেয়েছেন ভগ্নক্রম কথা-বুননের ছলে? ইনাম-ফেকু-সুহাস কথা বলছে পরস্পরের সঙ্গে-কিন্তু কেউ-ই শুনছে না অন্যের কথা, কারণটা তাদের অন্তর্গত উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা, নাকি সুখ-কল্পনা? ভগ্নক্রম বিন্যাসে, চূর্ণ-চূর্ণ ছবির মাধ্যমে লেখক তুলে ধরেছেন ইনাম-ফেকু-সুহাসের অন্তর্গত ভাবনা- ক. ইনামের বিকেলের কথা মনে পড়ে, হাটবারের কথা, মাছের কথা। থেকে নদী। নদী এখন প্রায় শুকনো, চড়া গেছে। গরুর গাড়িতে লোকে বালি আনছে নদী থেকে। বাঁকের কাছে কাশ হয়েছে। এ পাড়ে স্কুলবাড়ি, বড় সজনে গাছে ফিঙে, তার লম্বা লেজের দুলুনি। স্কুলের পেটা ঘড়ি ভেঙে গেলে এক টুকরো রেল ঝুলিয়ে লোহার ডা-ায় যনাৎ যনাৎ আওয়াজ- হুড়মুড় করে হেডমাস্টার, শালার জোকার একডা, বই বগলে মাস্টার তারাপদ, তার পাকানো চাদর, আধভাঙ্গা দাঁত আর মুখে কথার ফেনা। এসব মনে পড়ল। ঝর ঝর করে ছবিগুলো এলো।
খ. ছবিগুলো পেরিয়ে যেতেইে খেয়াল হয় সুহাস সেই গল্পটা আরও তোড়জোড় করে বলছে, ছোট মামার বিয়ের বরযাত্রী যাবার
গল্প। ওর একটা কথাও শুনছে না ফেকু, সে দাঁড়িয়ে পড়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিল-চাঁদের আলোর মধ্যে দেশলাই-এর আগুনটা দেখালো ম্যাড়মেড়ে আর ফেকুর বিতিকিছি মুখটা দেখা গেল, কপালের কাটা দাগটা, মুরগীর মত চোখ, নিচে ঝোলানো ঘোড়ার মতো কালো ঠোঁট উপরের ‘ক’ সংখ্যক উদ্ধৃতিতে ইনামের ভগ্নক্রম ভাবনায় এবং ‘খ’ সংখ্যক উদ্ধৃতিতে ফেকুর অমনোযোগের মাধ্যমে হাসান আজিজুল হক, ধারণা করি, সামাজিক সম্পর্কহীনতা ও আন্তঃমানবিক বিচ্ছিন্নতার দিকেই অঙ্গুলি-নির্দেশ করেছেন। কেশো-বুড়ো উদ্বাস্তু মানুষ, দেশ-ছাড়া অসহায় এক পিতা। চরিত্রসমূহের ভাষা থেকে বোঝা যায়, এদের বাস উত্তরবঙ্গে। গল্প। দেশবিভাগ মানুষকে, বাংলার জনসাধারণকে যে-ভাবে বিপন্ন উন্মুলিত লাঞ্ছিত করেছে, তারই যেন প্রতীকী রূপ কেশো-বুড়ো। দেশ-ত্যাগের ফলে শূন্য হয়ে গেছে তার ভিতর বাহির-আত্মজাকেও তাই তার কাছে মনে হয়েছে বিষবৃক্ষের বীজ। দেশত্যাগের এই মর্মদাহী যন্ত্রণাকথা উঠে এসেছে কেশো-বুড়োর অন্তর্গত ভাবনায়- “কে আর আসবে এখানে মরতে। জেগেই তো ছিলাম। ঘুম হয় না মোটেই-ইচ্ছে করলেই কি আর ঘুমানো যায়-তার একটা বয়েস আছে-অজস্র কথা বলতে থাকে সে-মনে হয় না, বাজে কথা বকবক করেই যায়। এসো বড্ড ঠাণ্ডা হে, ভেতরে এসো। কিন্তু ভেতরে কি ঠাণ্ডা নেই? একই রকম। দেশ ছেড়েছে যে তার ভেতর বাইরে নেই। সব এক হয়ে গেছে। তোমরা না থাকলে না খেয়ে মরতে হোত এই জংগুলে জায়গায়-বুড়ো বলছে, বাড়ির বাগান থেকে অন্ন জোটানো আবার আমাদের কম-হ্যাঃ। ও তোমরা জানো। আমরা শুকনো দেশের লোক বুইলে না-সব সেখানে অন্যরকম, ভাবধারাই আলাদা আমাদের। এখানে না খেয়ে মারা যেতাম তোমরা না থাকলে বাবারা।” সংসার নির্বাহের জন্য কেশো-বুড়ো আত্মজাকে তুলে দিয়েছে ভোগবিলাসী যুবকদের কাছে। রুকু কোনো প্রতিবাদ করেছে কিনা, তার স্বাক্ষর নেই গল্পে। কিন্তু রুকুর মা যে প্রতিবাদ করেছে, মেনে নেয়নি এই অনাচার, তা বোঝা যায় কেশো-বুড়োর এই ভর্ৎসনা থেকে—‘চুপ, চুপ, মাগী চুপ কর, কুত্তী-এবং সমস্ত চুপ হয়ে যায় সন্দেই নেই, বেঁচে থাকার জন্য আত্মজাকে এভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে কেঁপে উঠতো কেশো-বুড়োর মর্মলোক। তাই তিন যুবক ঘরে প্রবেশের সময় করবী গাছের বর্ণনা দেন লেখক এই প্রতীকী ভাষ্যে- …. সবাই ভিতরে আসতে করবী গাছটার একটা যাল ঝটকানি দেয়।’ অজা ও একটি করবী গাছ’ একটি প্রতীকী গল্প। করবী গাছটাই এখানে আত্মজার প্রতীক। করবী গাছে যে বিচি হয়, তা বিষের আধার, −রুকুও তো পিতা কেশো-বুড়োর কাছে চিরায়ত এক বিষকাণ্ড। তাই ঘুরে ঘুরে এ গল্পে আসে করবী গাছের কথা-গল্পের নামকরণ থেকে পরিণতি পর্যন্ত। করবী গাছটাই যে হয়ে ওঠে যন্ত্রণার উৎস, ওটাই যে রুকুর মর্মদাহী অস্তিত্ব কেশো বুড়োর হার্দিক বয়ানে তা উঠে এসেছে ভয়ানকভাবে !… এখানে যখন এলাম-আমি প্রথমে একটা করবী গাছ লাগাই … জন্যে নয়, বুড়ো বলল, বিচির জন্যে, বুঝেছ করবী ফুলের বিচির জন্যে। চমৎকার বিষ হয় করবী ফুলের বিচিতে।’ ফুলের বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে দেশ-বিভাগের ঝাপটায় মানুষের জীবনে বিপন্নতা দেখা দিয়েছিল নানাভাবে, দেখা দিয়েছিল মূল্যবোধের ভয়াবহ ধস। ইনাম-ফেকু-সুহাসের আচরণে, ভাষা ও ভাষ্যে এই ধসের ছবিই প্রকাশিত। অর্থের বিনিময়ে পিতা-মাতার সামনে কোনো নারীর ঘরে যেতে তাদের বাধে না, যখন-তখন তারা অশ্লীল কথা বলে, তাদের মুখ দিয়ে বের হয় এসব টুকরো রুচিহীনতা- ক. সকালে সূর্য উঠতি মধুমতী ঝকঝক করিতেছে, জ্যাঠামশাই ধপ করে কাদায় পড়িলো লঞ্চ থেকে নামতি গিয়ে আর মামীর বোনেরা যা সোন্দার সে কথা আর কলাম না। তোর মামার বাড়িটা কোয়ানে, শালীরা বেড়াতি আসলি কস আমাকে-ফেকু কথা না বললেই নয়, তাই বলে। সেটি হচ্ছে না, বুজিচো—চোখ বন্ধ করে মনের আরামে বলল সুহাস। ও, তাই তুমি মাসে পাঁচবার কর ছোটমামার শ্বশুরবাড়ি বেড়াতি যাচ্ছো, বুজিচি, ও খেনে তো পয়সা কড়ি লাগে না-আরামেই আছো দেখা যায়- খ. সুহাস থুথু ফেলে বলে, শালা খ্যাল গাতিছে-বলেই চাবি বন্ধ করে এবং তুমি যে আমার জীবনে এসেছ ধরে দেয়। গ. করবটা কি কতি পারিস? লেহাপড়া শিখলি না হয়। লেহাপড়ার মুহি পেচ্ছাপ-ইনাম বলল। আবার অসহ্য লাগল ওর। তাহলি-ফেকু ভেবে চিন্তে বলল, উঁচো জায়গায় দাঁড়ায়ে সবির ওপর পেচ্ছাপ। —উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিগুচ্ছ থেকে সুহাস, ফেকু ও ইনামের মনোলোকের রুচিহীনতা সহজেই অনুধাবন করা যায়। অপরদিকে, একই
সঙ্গে এখানে আছে পুরুষতান্ত্রিকতার ইঙ্গিত। তিন যুবক কথায় কথায় ‘শালী’ শব্দ উচ্চারণ করে, অর্থাৎ অনবরত বিয়ে করতে চায়। অন্যদিকে কেশো-বুড়ো, ক্ষমতাহীন কপর্দকশূন্য কেশো-বুড়ো কেবল পুরুষ বলেই স্ত্রীকে বলতে পারে ‘মাগী চুপ কর, কুত্তী’ কিংবা আত্মজার উপর বিস্তার করতে পারে পুরুষতান্ত্রিক দাপটতা। সামাজিক ধস আর অবক্ষয়, দেশবিভাগজনিত মানবিক বিপন্নতার পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিকতার কাছে নারীর এই লাঞ্ছনাও বক্ষ্যমাণ গল্পটিকে করে তুলেছে কালোত্তীর্ণ। কেশো-বুড়ো নিম্নবর্গের মানুষ-আত্মজাকে গ্রামীণ যুবকদের কাছে বিক্রি করে তাকে নির্বাহ করতে হয় সংসার। সুহাস-ফেকু- ইনাম—এরাও নিম্নবর্গ। সুহাসকে নারী-ভোগের জন্য বড় ভাইয়ের পকেট মারতে হয়, ইনাম ভিড়ের মধ্যে মানুষের পকেট মারতে গিয়ে ধরা পড়ে, ফেকুকে দু’টাকা জোগাড় করতে গলদঘর্ম হতে হয়। টাকা নেই বলে ইনাম যেতে পারে না রুকুর ঘরে-এসবই বলে দেয় ওই চরিত্রগুলোর অবস্থান নিম্নবর্গে। লক্ষণীয়, এসব ক্ষমতাহীন পুরুষ অসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে নারীর কাছে। নিম্নবর্গের সমাজ বাস্তবতায় নারী যে আরো নিম্ন-অবস্থানে, তারা যে ‘তলের তল’ সেকথা রুকু কিংবা তার মায়ের অবস্থা ও অবস্থান অনুধাবন করা যায়। গল্পের অন্তিমে কেশো-বুড়োর অন্তঃসংলাপে, তার বিক্ষিপ্ত মনোকথনে, তার অসহনীয় যন্ত্রণাভাষ্যে, তার বেদনার্ত তার আত্মজার অপমানে দেশ কি কথা বলে উঠে না। কেঁদে কি উঠে না দেশ-মাতা? তা না হলে অন্তিমে কেন লেকক নির্মাণ করবেন অসামান্য এই ভাষ্য- “আমি যখন এখানে এলাম, সে গল্প করেই যাচ্ছে, আমি যখন এখানে এলাম, হাঁপাতে হাঁপাতে, কাঁপতে কাঁপতে বলছে, বুঝলে যখন এখানে এলাম। তার এখানে আসার কথা আর কিছুতেই ফুরোচ্ছে না-সারারাত ধরে সে বলছে, এখানে যখন এলাম—আমি প্রথমে একটা করবী গাছ লাগাই-তখন হু হু করে কে কেঁদে উঠল, চুড়ির শব্দ এলো, এলোমেলো শাড়ীর শব্দ আর অনুভবে নিটোল সোনারঙের দেহ-সুহাস হাসছে হি হি হি-আমি একটা করবী লাগাই বুঝলে-বলে থামলো বুড়ো, কান্না শুনল, হাসি শুনল-ফুলের জন্যে নয়, বুড়ো বললো, বিচির জন্যে, বুঝেছ করবী ফুলের বিচির জন্য। চমৎকার বিষ হয় করবী ফুলের বিচিতে। আবার হু হু ফোঁপানি এলো আর এক কথা বলে গল্প শেষ না করতেই পানিতে ডুবে যেতে, ভেসে যেতে থাকল বুড়োর মুখ-প্রথমে একটা করবী গাছ লাগাই বুঝেছ, আর ইনাম মনে মনে তেতো তেতো-এ্যাহন তুমি কাঁদতিছ? এ্যাহন তুমি কাঁদতিছ?”
উপসংহার : সার্বিক আলোচনার মাধ্যমে বলা যায় যে, ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ গল্পে একদিকে জীবনযুদ্ধে পরাজিত বৃদ্ধের হাহাকার, অপরদিকে নষ্ট সমাজে নষ্ট তরুণের পাশবিক লালসা, জান্তব জীবনযাপন ও অসামাজিক কর্মই সমকালীন সমাজের অস্থিতিশীল চালচিত্রের প্রকাশক। এ গল্পের অপর মুখ্য চরিত্র ভারত থেকে আগত ‘বৃদ্ধ’। সে সুস্থ ও নিশ্চিত জীবনযাপনের লক্ষ্যে ভারত থেকে পূর্বপাকিস্তানে আসে কিন্তু অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও জীবনযুদ্ধে ক্রমাগত পরাজয়ের ফলে সমাজের ভ্রষ্ট চরিত্রদের অনুকম্পায় তাকে বেঁচে থাকতে হয় ‘করবীর গাছের বিষ-যন্ত্রণায়’ ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*