“সামগ্রিক অতলতা হতে মৃত্যু সুগভীর ডাক উঠে আসে, ঝিমায় তারার দীপ স্বপ্নাচ্ছন্ন আকাশে আকাশে।”— ব্যাখ্যা কর।
উৎস : আলোচ্য অংশটুকু ইসলামের পুনর্জাগরণের কবি ফররুক আহমদ রচিত ‘ডাহুক’ কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে ডাহুকের সুর কবি-চেতনায় যে গভীর তন্ময়তা এনে দিয়েছে সে প্রসঙ্গে আলোকপাত করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ডাহুক গ্রামবাংলার নিভৃতচারী একটি জলজ পাখি। ডাহুকের প্রেমনিষ্ঠা সর্বজনবিদিত। সংগী বা সঙ্গিনী শূন্য এ পাখির হৃদয়বিদীর্ণ করা ডাকে রাত্রির গভীর নিস্তব্ধতা ভেঙে খান খান হয়ে যায়। সাধকের কাছে ডাহুকের এ সুর গভীর একনিষ্ঠতার প্রতীক। সাধকের জীবনের চরম সত্য নিহিত স্রষ্টার অন্তরঙ্গ সান্নিধ্য কামনায়। মানবাত্মার পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকুতি চির শাশ্বত। কিন্তু পরমাত্মার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য যে সুকঠিন অধ্যাত্ম সাধনার প্রয়োজন কবি ব্যক্তিগত জীবনে তা করতেপারেননি। স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের ব্যর্থ সাধনা তাঁর হৃদয়কে দগ্ধ করে। ডাহুকের কণ্ঠে যে অফুরান সুরা ভেসে আসে ভাবলিপ্ত কবির মনে হয় সে ডাক তাঁর হৃদয় সমুদ্রের অতল থেকে ভেসে আসে। এ সুরাপাত্র আর পাখিকে কবির অচেনা মনে হয়। কবি বর্ণে বা দৈহিক রূপে পাখিকে চিনলেও তার সুর কবির কাছে অচেনা। অশরীরী সে সুর সমুদ্রের অতল থেকে উঠে এসে পৌঁছে যায় তারা ভরা আকাশে। সমস্ত প্রকৃতি সে সুরের সুরায় ঝিমাতে থাকে।
মন্তব্য: স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রয়োজন হৃদয়ের গভীর এবং একনিষ্ঠতার তাগিদ। ডাহুকের সুর কবিকে এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।