রাজনৈতিক নেতৃত্ব বলতে কী বুঝ? নেতৃত্বের প্রকারভেদ আলোচনা কর।

অথবা, রাজনৈতিক নেতৃত্ব কী? রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকারভেদ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
নেতৃত্ব একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিটি ক্রিয়াশীল সংগঠনে অপরিহার্য। রাজনীতি হলো ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে সদস্য সংগ্রহ ও সমর্থন আদায় করার এক বিশেষ প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়ায় নেতৃত্বের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির অংশগ্রহণেরও ভূমিকা পালনের উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় নেতৃত্বের মাধ্যমে। তাই রাজনৈতিক নেতৃত্ব হলো বিচ্ছিন্ন ও বিভিন্ন প্রবণতা ও প্রত্যাশা পোষণকারী ব্যক্তির মধ্যে ঐক্য আনয়ন করা এবং তাদেরকে কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনে পরিচালিত করা। এ কারণেই Keith Davis তাঁর Human Relations at Work গ্রন্থে বলেছেন, “নেতৃত্ব ছাড়া সংগঠন হলো মানুষ ও যন্ত্রের এক বিশৃঙ্খল সমাবেশ।”
রাজনৈতিক নেতৃত্ব : রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শকে আশ্রয় করে। যখন কোন দেশ বা অঞ্চলের জনগণ নেতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে তখনই রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকাশ ঘটে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তার ত্যাগ, নৈতিকতা ও প্রেরণা দিয়ে জাতিকে সুসঙ্ঘবদ্ধ ও উদ্বুদ্ধ করে জনগণের আস্থা অর্জন করেন। ভারতে মহাত্মাগান্ধী, নেহেরুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলাদেশে মওলানা ভাসানী, এ. কে. ফজলুল হক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে জাতীয় আন্দোলন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একটি বলিষ্ঠ দৃষ্টান্ত।
নেতৃত্বের প্রকারভেদ : একই সময়ে বিভিন্ন ধরনের নেতা সমাজে থাকতে পারে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
১. একনায়কতন্ত্রমূলক বা স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্ব : এ ধরনের নেতৃত্বে নেতারা জনগণের মতামতকে তোয়াক্কা না করে অন্যের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। অর্থাৎ, এ ধরনের নেতৃত্বে জনগণকে গুরুত্বহীন মনে করা হয়। জনগণ নেতার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত থাকেন না, তারা নেতাকে ভয় পান এবং নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে এ ধরনের নেতৃত্বের গুণাবলি নিম্নরূপ :
ক. এ ধরনের নেতারা বিশ্বাস করেন যে, নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আনুগত্য ও সম্মান প্রদর্শন।
খ. তিনি বিশ্বাস করেন যে, যিনি ক্ষমতা ধারণ করেন তিনিই নেতা। নেতা তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে খুবই অনুগত থাকেন এবং অধস্তনদের কাছে হয়ে উঠেন বেশ প্রভাবশালী ।
গ. চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে তিনি গণ্ডীবদ্ধ থাকেন না। চিন্তার ক্ষেত্রে তার স্বাধীনতা থাকে এবং তিনি নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২. গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব : গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে জনগণের মতামতের গুরুত্ব সর্বাধিক। এখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় বলে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বে সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ক্ষমতা নির্দিষ্ট থাকে। এ নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :
ক. দলীয় আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ।
খ. প্রত্যেক সদস্যকে মতামত প্রদান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান গুরুত্ব প্রদান।
গ. ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া।
ঘ. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
৩. অবাধ নেতৃত্ব : অবাধ নীতি অনুসরণের ফলে এ ধরনের নেতৃত্বে নেতা দলের অধীনস্তদের উপর খুব কম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। অনেক সময় দেখা যায় যে নেতা তার লক্ষ্য নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে অধীনস্তদের উপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েন ও অনুসারীদের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হন। এক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থ সমষ্টির স্বার্থের চেয়ে প্রধান হয়ে পড়ে এবং যত্ন ও মনোযোগের অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নেতৃত্ব হলো এক ধরনের সামাজিক গুণ। সুষ্ঠু নেতৃত্ব ছাড়া কোন গোষ্ঠী, সমাজ বা রাষ্ট্রই উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারে না, বরং অযোগ্য নেতৃত্বের কবলে পড়ে একটি জাতি অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা ভেবেই নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর নেতৃত্বকে কখনই মেনে নেওয়া উচিত নয়। সঠিক পথ প্রদর্শন এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে উন্নতির চূড়ায় পৌঁছে দেওয়াই হতে হবে নেতৃত্বের একমাত্র লক্ষ্য । জাতীয় ঐক্য ও জাতীয় সংহতি সংরক্ষণে যোগ্য নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*