মানুষ খুন করিতে যাহার ভালো লাগিত সে আজ ভিক্ষা না দিয়া চলিয়া গেলে পথচারীকে একটু টিকারি দেওয়ার মধ্যে মনের জ্বালা নিঃশেষ করে।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাগৈতিহাসিক’ গল্পের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : এখানে ভিক্ষারত ভিখুর মানসিক যন্ত্রণার কারণ প্রশ্ন করতে গিয়ে মন্তব্যটি করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : ভিখু অতীত জীবনে ছিল দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার। ভাগ্যদোষে তাকে আজ ভিক্ষা করে জীবিকানির্বাহ করতে হচ্ছে। অথচ এক সময় কী উদ্দাম ঘটনাবহুল জীবন ছিল তার। তাড়ির দোকানে গিয়ে ভাঁড়ে ভাঁড়ে তাড়ি গিলে সে হল্লা করতো। টলতে টলতে বালীর ঘরে গিয়ে উন্মত্ত রাত কাটাত। স্ত্রীর সামনে স্বামীকে বেঁধে মারত আর মায়ের সামনে ছেলের শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়ে সে উল্লাসে ফেটে পড়ত। এ সময় স্ত্রী ও মায়ের মুখের যে ভয়ার্ত ছবি সে দেখতে পেত তা ছিল তার কাছে চরম উন্মাদনাকর। পুলিশের ভয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়িয়ে আর বনে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকেও তখন সে সুখী ছিল। তার দলের অনেকেই একাধিকবার জেল খেটেছে। কিন্তু একবারের বেশি পুলিশ তার নাগাল পায়নি। একা সে কতবার গৃহস্থ বাড়ির ঘরের বেড়া কেটে চুরি করেছে, দিনদুপুরে পুকুর ঘাটে গৃহস্থবধূর মুখ চেপে ধরে গলার হার হাতের বালা খুলে নিয়েছে। সর্বশেষ বসন্তপুরের বৈকুণ্ঠ সাহার গদিতে ডাকাতি করতে গিয়ে ভিখু তার মেজো ভাইয়ের মাথাটা এক কোপে ধড় থেকে নামিয়ে দিয়েছিল। পালাবার সময় ডান কাঁধে বর্শার যে খোঁচাটা সে খেয়েছিল তারই ফলে পঙ্গু হয়ে তাকে আজ ভিক্ষা করে বাঁচতে হচ্ছে। যেসব পথচারী ভিক্ষা না দিয়ে চলে যায়। ভিখু মনে মনে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু সে ভিক্ষুক বলেই পূর্বের মতো জোের দেখাতে পারে না। তাই একসময় মানুষ খুন করতে যার ভালো লাগত সে আজ ভিক্ষা না দিয়ে চলে যাওয়া লোকের উদ্দেশ্যে সামান্য টিকারি ছুঁড়ে দিয়ে মনের ঝাল মেটায়।
মন্তব্য: মানুষ খুন করা যার অভ্যাস ছিল, অসহায় অবস্থায় আজ তাকে কেবল কটুকাটব্য করে মনের ক্ষোভ মিটাতে হয়।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!