বিভিন্ন ধর্মে নারীর অবস্থা বর্ণনা কর। ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা কর
অথবা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? আলোচনা কর।
অথবা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ মূল্যায়ন কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। নারীরা এখন আর শুধু অন্তপুরবাসী নয়, বরং পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমাজের উন্নতি সাধনে কাজ করেছে। এছাড়া মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতেও পুরুষের পাশাপাশি সহায়তা করে নারী। এজন্য দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাতে করে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ : নারী মুক্তি আন্দোলন এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. নারী শিক্ষার প্রসার : একটি জাতির উন্নয়ন ও শিক্ষিত হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো সে জাতির নারীদের শিক্ষিত করে তোলা। বাংলাদেশ সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি যথাযথভাবে অনুধাবন করে নারী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। এবং নারী উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন,
ক. ছাত্রী উপবৃত্তি প্রকল্প : নারী শিক্ষা সম্প্রসারণ, নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছেন। একটি করে মহিলা কলেজ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
খ. মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা : নারীদের উচ্চশিক্ষা আরো সম্প্রসারিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রতিটি উপজেলায়।
গ. এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন প্রতিষ্ঠা : নারীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মান অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন প্রতিষ্ঠা করেছে।
২. নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন : নারীর প্রশাসনিক ক্ষমতায়ন তথা উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীকে সম্পৃক্ত করার প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ১৯৭২ সালে। সরকারি চাকরিতে দশভাগ কোটা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা হয়।
৩. নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন : নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন শুরু হয় ১৯৭৩ সালে দুজন নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে। জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন নারী। এভাবে নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে।
৪. নারীর অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি : জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নারীর অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশে সরকার বিভিন্ন মানব বন্ধন ও সেমিনার এর ব্যবস্থা করে।
৫. নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা নির্মূল করা : নারী ও শিশু পাচার বন্ধ করাসহ নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা নির্মূল করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া।
৬. নারীর কাজকে দৃশ্যমান করা ও স্বীকৃতি দেয়া : অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার প্রাপ্তি প্রয়োজনীয় তথ্য, দক্ষতা ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বিষয়ক পার্থক্য কমিয়ে আনা এবং নারীর কাজকে দৃশ্যমান করা ও স্বীকৃতি দেয়া ভার ইস্যু নিয়ে পরিচালনা করা :
৭. জেন্ডার ইস্যু নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করা, জেন্ডারকে মূলধারা করতে সহায়তার জন্য প্রকল্প কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সকল স্তরে সক্ষমতা গঠন করা এবং জেন্ডার সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সকল পর্যায়ে গণতৎপরতা বৃদ্ধি করা।
৮. নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা : নারী পুনর্বাসন বোর্ডের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৯৭৪ সালে এ বোর্ডকে পুনর্গঠিত করে আইনের মাধ্যমে ‘নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ এ উন্নীত করা। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় নারীদের জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়ন মন্ত্রণালয় গণশিক্ষার কার্যক্রম চালু করে।
৯. নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য গৃহীত সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপ : ১৯৯৭ সালের ৮মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা অনুমোদন নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় অর্জন। এই নীতিমালা স্থানীয়, জাতীয় ও পারিবারিক পর্যায়ে নারী ইস্যুকে মূল ধারায় নিয়ে আসার উপর গুরুত্বারোপ করেছে।
১০. সাংগঠনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ : ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডকে নারী পুনর্বাসন ও কল্যাণ ফাউন্ডেশন করার পর ১৯৭৮ সালে মহিলা বিষয়ক স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। এছাড়া ১৯৭৬ সালে জাতীয় মহিলা সংস্থা গঠন হয়। এছাড়া সরকারের গৃহীত নারী উন্নয়ন কার্যক্রমকে বেগবান করার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে মহিলা বিষয়ক পরিদপ্তর এবং এ পরিদপ্তরকে ১৯৯০ সালে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়।
১১. আইনি পদক্ষেপ : নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার বিভিন্ন রকম আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন :
→ মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ ১৯৬১।
→ বিবাহ ও তালাক নিবন্ধীকরণ আইন১৯৭৪।
→ যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০।
→ বাল্যবিবাহ ১৯২৯।
→ নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ১৯৯৫।
→ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০।
→ জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ ঘোষণা।
১২. গণমাধ্যমসমূহের প্রচারণার কৌশলগত পরিবর্তন : গণমাধ্যম হলো একটি জাতির চিন্তাধারা দৃষ্টিভঙ্গি এবং জনমত গঠনের ধারক ও বাহক। এক কথায় গণমাধ্যমের শক্তি অপরিসীম। শক্তি যার অসীম দায়িত্ব তার ততোধিক। তাই গণমাধ্যমের দায়িত্ব আজ নারী চরিত্রের তথা নারীরা সার্বিক ভূমিকার প্রকৃত মূল্যায়ন করা এবং একে সঠিকভাব উপস্থাপনের মাধ্যমে জনগণের চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা।
উপসংহার : পরিশেষে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারী ক্ষমতায়নের ধারণা বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সরকার নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং তা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%85/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*