পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কী?
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ বলতে কী বুঝ?
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাকে বলে?
অথবা, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রাচীন যুগে যখন মানুষ সবেমাত্র পশুপালন ও চাষাবাদ শুরু করেছিল, পুরুষেরা তখন পশুপালন করতো আর মেয়েরা ফলমূল সংগ্রহ ও উচ্ছিষ্ট খাবার বসবাসের স্থানের চারপাশে ছড়িয়ে চাষাবাদ আরম্ভ করে। তখনকার সমাজে নারীদের প্রাধান্য থাকলেও ধীরে ধীরে লাঙল, চাকা প্রভৃতি আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এগুলো পুরুষের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। কারণ নারীর পক্ষে এগুলো চালানো সম্ভব ছিল না। বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে নারীরা সমাজে শষের অধস্ত ন হয়ে পড়ে। বর্তমান পৃথিবীর সামান্য কিছু স্থানে মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেও তা অত্যন্ত দুর্বলভাবে টিকে আছে।
পিতৃতন্ত্র : পিতৃতন্ত্র শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো পিতা বা পিতৃতুল্য কোন ব্যক্তির কর্তৃত্ব, পিতার ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ। পিতা এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত, শুধু জনক রূপে নয়। প্রথমদিকে পিতৃতন্ত্র বলতে বুঝানো হতো বিশেষ এক পুরুষের আধিপত্যের অধীন পরিবার যে পরিবারে থাকে নারী এবং অন্যান্য কম বয়সী পুরুষ, শিশু, চাকর বাকর, দাসদাসী ইত্যাদি। ব্যাপক অর্থে অনেকে পিতৃতন্ত্রকে অভিহিত করেন পুরুষতন্ত্র বলে। আমাদের চারপাশে দেখা যায় সব ধরনের পুরুষ আধিপত্যই এ ধারণার অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন নারীবাদী তাত্ত্বিকেরা নানাভাবে এ পিতৃতন্ত্র বা পুরুষতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করেছেন।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক ও নারীবাদী দার্শনিক পিতৃতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকজনের সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলো :
প্রখ্যাত নারীবাদী মনস্তাত্ত্বিক জুলিয়েট মিচেলের মতে, “পিতৃতন্ত্র এমন একটি সম্পর্কিত ব্যবস্থা যেখানে নারী- পুরুষের হাতে বিনিময়ের দ্রব্য মাত্র।” তিনি মনে করেন, এ ব্যবস্থায় পিতার এক প্রতীকী ক্ষমতা থাকে, যে প্রতীকী ক্ষমতাই নারীর হীনমন্যতার জন্য দায়ী। অপর নারীবাদী তাত্ত্বিক সিলভিয়া ওয়ালবির বলেছেন, “পিতৃতন্ত্র সামাজিক কাঠামো ও রীতিনীতির এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে নারীকে নিয়ন্ত্রণ ও শোষণ করে পুরুষ।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পিতৃতন্ত্র এমন একটি মতাদর্শ বা পুরুষকে নারীর তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী বলে মনে করে। নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য অনুমোদন করে এবং নারীকে পুরুষের সম্পত্তি বলে গণ্য করে।