Answer

কি ভাবিয়া অন্নপূর্ণার চোখে জল আসিল। চাপিতে গিয়া তিনি চোখ উঁচু করিয়া চালের বাতায় গোঁজা ডালা হইতে শুকনা লঙ্কা পাড়িতে লাগিলেন।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : ব্যাখ্যেয় গদাংশটুকু ত্রিশোত্তর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রূপকার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিরচিত ‘পুঁইমাচা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে ব্রাহ্মণপত্নী অন্নপূর্ণার সন্তান বাৎসল্যের চিত্রটি সুন্দরভাবে অঙ্কন করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : সহায়হরি চাটুয্যের জ্যেষ্ঠা কন্যা ক্ষেন্তি ছিল খুবই ভোজনপটু। পুঁইশাক ছিল তার প্রিয় তরকারি। একদিন ক্ষেন্তি তার অন্য দুটি ছোটবোনকে সাথে করে ওপাড়ার রায়দের বাগানের ফেলে দেওয়া পাকা পুঁইশাকের বোঝা কুড়িয়ে নিয়ে বাড়িতে এলে মা অন্নপূর্ণা তাকে খুব ভর্ৎসনা করলেন। মায়ের আদেশে মেয়েরা পুঁইশাকের আটিটি ছাইয়ের গাদার পাশে ফেলে দিয়ে এল। দুপুর বেলা রান্না করতে গিয়ে অন্নপূর্ণার মাতৃহৃদয় মোমের মতো গলে গেল। তিনি জানতেন তাঁর এই ভোজনপটু মেয়েটি পুঁইশাক কতখানি পছন্দ করে। আজ কত আশা নিয়ে প্রখর রৌদ্রের মধ্য দিয়ে ক্ষেন্তি ওগুলো কুড়িয়ে এনেছে। অথচ রাগ করে তিনি তা ফেলে দিয়েছেন। বাড়িতে তখন কেউ ছিল না। অন্নপূর্ণা উঠে গিয়ে ফেলে দেয়া পুঁইশাকের যতটা পারা যায় সংগ্রহ করে এনে রান্না করলেন। খাওয়ার সময় পাতে পুঁইশাকের চচ্চড়ি দেখে ক্ষেন্তি পুলকিত হলো। সে সাগ্রহে পুঁইশাক খেয়ে শেষ করে ফেলল। অন্নপূর্ণা চেয়ে দেখলেন, ক্ষেন্তির পাতে একটুকরা পুঁইশাকও অবশিষ্ট নেই। আর পুঁইশাক নেবে কি না এই প্রশ্নের উত্তরে, ক্ষেন্তি সোৎসাহে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে অন্নপূর্ণার চোখে জল নেমে এল। সন্তান-বাৎসল্যের প্রাবল্যে তাঁর অন্তর কেঁদে উঠল। চোখের জল গোপন করতে তিনি চোখ উঁচু করে চালের বাতায় গোঁজা শুকনা লঙ্কা পাড়তে উদ্যত হলেন।
মন্তব্য: অন্নপূর্ণার এই আচরণের মধ্য দিয়ে তাঁর মাতৃহৃদয়ের কোমল রূপটি ফুটে উঠেছে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!