কবি আল মাহমুদ বিরচিত ‘সোনালী কাবিন : ৫’ কবিতার মূলবক্তব্য নিজের ভাষায় লিখ।

উত্তর৷ ভূমিকা : আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী কবি আল মাহমুদ। তাঁর বিস্ময়কর সৃষ্টি সোনালী কাবিন’। ‘সোনালী কাবিন : ৫’ তাঁর ‘সোনালী কাবিন’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত একটি কবিতা। স্বাধীনতা উত্তর বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট তাঁর কবিতার ক্ষেত্র পৃথক স্থান দখল করে নেয়। এটি তার প্রেমমূলক কবিতা। মূলত এ কবিতার মাধ্যমে নর- নারীর প্রেমের এক অপূর্ব বিন্যাস ঘটিয়েছেন।
প্রেমচেতনা : ‘সোনালী কাবিন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রেমিকাকে গুঞ্জার মালা পরে আহ্বান করেছেন। কবি অশরীরী প্রেমকে আহ্বান করেননি। নর-নারীর দেহজ প্রেমের জয়গান করেছেন। কবি তাঁর প্রেমিকাকে কানে কার্পাসের ফুল, গলায় গুঞ্জার মালা, সাথে মহুয়ার বোতল নিয়ে শবরী যেভাবে সজ্জিত হয়, সেভাবে সাজতে বলেছেন।
সময়ের যুগল বন্ধন : কবি ‘সোনালী কাবিন : ৫’ কবিতায় হাজার বছরের বাঙালির ঐতিহ্য ধারণ করেছেন। তিনি ফিরে গেছেন চর্যাপদের যুগে, ব্যাধ নর-নারীর শরীরী উন্মাতাল যুগে। ব্যাধ নর-নারীর প্রেমকে নিজের প্রেমিকার সাথে কল্পনা করে বলেছেন-


‘গলায় গুঞ্জার মালা পরো বালা, প্রাণের শবরী
কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতল।


নিসর্গ চেতনার স্বরূপ : কবি নিসর্গ প্রেমভাবনাকে বাণী রূপ দিয়েছেন। চর্যাপদের শবর-শবরী নিসর্গ সৌন্দর্যের মধ্যে মহুয়া ফলের রস পান করে প্রেম কেলিতে মত্ত হতো। নর-নারীর এ প্রেমভাবনা কবি প্রকৃতি থেকে শিখেছেন। কামনা ও প্রেমভাবনা কবি নিসর্গ থেকেই পেয়েছেন-


‘নিসর্গের গ্রন্থ থেকে, আশৈশব শিখেছি এ পড়া
প্রেমকেও ভেদ করে সর্বভেদী সবুজের মূল ।’


লোকজ প্রেম : লোকজ গার্হস্থ্য জীবনের আঙ্গিকে প্রেম অনুভূতিকে আল মাহমুদ ‘সোনালী কাবিন : ৫’ এ উপস্থাপন করেছেন। নগর জীবনকে উপেক্ষা করে কবি তাঁর প্রেমিকাকে নিয়ে নির্মগের কাছে ফিরে গেছেন। নিসর্গের প্রেমের নিকট নগর জীবনের প্রেমের তুলনা করা যায় না। হাজার বছরের গার্হস্থ্য জীবনের প্রেমের কাছে কবি আত্মসমর্পণ করেছেন। কৃষিভিত্তিক লোক সমাজে খনার অনিবার্য উপস্থিতি তাই কবি অস্বীকার করেননি-


‘প্রকৃতির ছদ্মবেশ যে মন্ত্রেই খুলে দেন খনা
একই যাদু আছে জেনো কবিদের আত্মার ভিতরে।


শরীরী প্রেমের চিরন্তনতা : জীবন ক্ষণস্থায়ী। তেমনিভাবে সভ্যতাও চিরকাল স্থায়ী নয়। পৃথিবীর সবকিছু পরিবর্তনশীল ইজিপ্ট গ্রিস-এর বিশাল সভ্যতা বিলীন হয়েছে। কিন্তু নর-নারীর দেহজ প্রেম চিরজাগ্রত।


‘কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতল
নিয়ে এসো চন্দ্রালোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করি।’


কালের ক্ষণস্থায়ী রূপ : কাল দ্রুত প্রবহমান। কালের আবর্তে সবকিছু বিলীন হয়ে যায়। কাল গ্রাস করেছে মিসর, গ্রিক কিংবা সেরাসিন সভ্যতাকে। কিন্তু কালের স্রোতে ভেসে যায়নি নর-নারীর জৈবিক কামনাধারা। এ কামনা আবহমান কাল ধরে প্রবহমান। কেউ অস্বীকার করতে পারেনি, কবিও পারেননি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, কবি আল মাহমুদ তাঁর কবি স্বভাবের স্বাতন্ত্র্যকে ‘সোনালী কাবিন : ৫’ কবিতায় তুলে ধরেছেন। কবির প্রেমের স্বীয় ভাবনা ভাষা ও শব্দ গাঁথুনীর নিজস্বতা কবিতাটিকে কেবল শিল্পোত্তীর্ণই করেনি, করেছে স্বমহিমায় মহিমান্বিত। তাই এ কবিতাটি কবি আল মাহমুদের একটি অনবদ্য সৃষ্টি।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b2%e0%a7%80-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a8-%e0%a7%ab-%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a6%be-%e0%a6%86%e0%a6%b2-%e0%a6%ae%e0%a6%be/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*