CEDAW কী? এটি কি নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ হিসেবে গৃহীত?

অথবা, CEDAW বলতে কী বুঝ? CEDAW নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ
হিসেবে গৃহীত হয়েছে। ব্যাখ্যা কর।
অথবা, CEDAW কী? CEDAW সনদের নারী পুরুষের সমতা সম্পর্কিত ধারাগুলো আলোচনা কর।
অথবা, CEDAW কী? CEDAW সনদের প্রধান প্রধান ধারাগুলো আলোচনা কর।
অথবা, CEDAW কী? CEDAW সনদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
১৯৪৬ সালে নারী মর্যাদা কমিশন, ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন, ১৯৭৫ এ বিশ্ব নারী সম্মেলন ও পরবর্তীতে ১৯৭৬-৮৫ সাল পর্যন্ত নারী দশক ঘোষণা ও আরও অসংখ্য দলিলের উপর ভিত্তি করে ১৯৭৯ সালের ৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘ CEDAW (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women) ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ প্রণয়ন করে। ১৯৮০ সালের ১ মার্চ থেকে এ সনদে স্বাক্ষর শুরু হয় এবং ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সনদটি কার্যকর হয়। উল্লেখ্য যে, ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ’ বা CEDAW কে নারীর জন্য ‘ম্যাগনা কার্টা’ এবং ‘বিল অব রাইস’ বলা হয়।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ এ সনদটি নিজ নিজ দেশে বাস্তবায়নে অঙ্গীকার বা চুক্তিবদ্ধ ।
CEDAW এ স্বাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা : ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের মোট ১৬৫টি রাষ্ট্র এ সনদ অনুমোদন করে স্বাক্ষর করেছে।
CEDAW : নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করা এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সনদ বা চুক্তি হচ্ছে CEDAW. CEDAW সনদের মূল বাণী হলো মানবসমাজ, সভ্যতার বিকাশ ও উন্নয়নে যুগ যুগ ধরে নারীসমাজ যে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করে আসছে তার যথাযথ স্বীকৃতি দান। মানুষ হিসেবে নারীর নিজের উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করা। CEDAW সনদের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের মৌলিক অধিকার, মর্যাদা ও মূল্যবোধের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতার নিশ্চয়তা বিধানের আবশ্যকীয়তা এবং নারীর অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দান। CEDAW’ এর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এতে প্রয়োজনীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। CEDAW অনুমোদনকারী রাষ্ট্রসমূহকে স্বাক্ষরদানের দু’বছরের মধ্যে তাদের দেশের নারীর বর্তমান অবস্থা, নারী উন্নয়নের বাধা এবং সনদের নীতিমালা অনুসরণের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি Report পাঠাতে হবে। সনদে শরীক রাষ্ট্রসমূহ কর্তৃক ব্যক্তি যোগ্যতায় নির্বাচিত বিশেষজ্ঞদের ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কার্যকরী কমিটির দায়িত্ব হলো এসব Report পরীক্ষা করা ও CEDAW নীতিমালা বাস্তবায়নে যথাযথ সুপারিশ করা।
CEDAW এর ধারা : CEDAW সনদে রয়েছে মোট ৩০টি ধারা। এ ধারাগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। যথা :
ক.১ থেকে ১৬ ধারা- নারী-পুরুষের সমতা সম্পর্কিত।
খ. ১৭ থেকে ২২ ধারা- CEDAW কর্মপন্থা ও দায়িত্ব বিষয়ক।
গ.২৩ থেকে ৩০ ধারা- CEDAW প্রশাসন সম্পর্কিত 1
নারী-পুরুষের সমতা সম্পর্কিত ধারাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. নারীর প্রতি বৈষম্য : এ সনদে ‘নারীর প্রতি বৈষম্য’ বলতে বুঝায় নারী-পুরুষভেদে কোনো প্রকার বিভেদ সৃষ্টি করা। এর ফলশ্রুতিতে নারীকে পুরুষের তুলনায় অধস্তন বা ছোট করে দেখা হয় এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়।
২. রাষ্ট্রসমূহের সংবিধান ও আইনসমূহে নারী-পুরুষের সমতার নীতি অনুসরণ : এ সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে এবং নারী-পুরুষের সমতার নীতি অনুসরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখবে :
ক. রাষ্ট্রসমূহ সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট আইনসমূহে নারী-পুরুষের সমতার নীতি অন্তর্ভুক্তি ও তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে।
খ. নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার লক্ষ্যে আইনগত ও অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
গ. জাতীয় আদালত এবং অন্যান্য আইন, বিচার বিভাগীয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা ও
তা সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।
ঘ. সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ যেন নারীর প্রতি সমতার নীতি অনুযায়ী কাজ করে তা নিশ্চিত করবে।
ঙ. ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানসমূহ যেন নারীর প্রতি সমতার নীতি অনুযায়ী কাজ করে তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চ.যেসব আইন, বিধি, প্রথা ও অভ্যাস নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে রাষ্ট্রসমূহ সেগুলো সংশোধন বা বাতিল করবে এবং প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়নসহ সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ছ.যেসব দণ্ডবিধান নারীর প্রতি বৈষম্য সৃষ্টি করে, সেগুলো বাতিল করবে।

৩. নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ : নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে নারীর মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকসহ সকল ক্ষেত্রে নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সনদে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৪. নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাময়িক বিশেষ ব্যবস্থা :
ক.নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা ও সমতা প্রতিষ্ঠা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্রসমূহ কিছু বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে
পারে।
খ.নারীর মাতৃত্বের সাথে যুক্ত যেসব অধিকার, সেসব অধিকার রক্ষার জন্য রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। নারীর এ ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ বৈষম্য বলে বিবেচিত হবে না। রাষ্ট্র এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নিলে তা বৈষম্য বলে বিবেচিত হবে না।
৫. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথার ইতিবাচক পরিবর্তন
ক.যেসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে, সেগুলো দূর করার লক্ষ্যে নারী-পুরুষের ভূমিকা ও আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে।
খ. নারীর মাতৃত্ব একটি সামাজিক কাজ এবং সন্তান প্রতিপালনে মা-বাবা হিসেবে নারী-পুরুষের সমান দায়িত্ব ও ভূমিকা
রয়েছে। সনদ অনুযায়ী এ ধরনের লিঙ্গভিত্তিক শ্রমবিভাজন দূর করতে হবে এবং পরিবার ও সন্তান প্রতিপালনে মা- বাবা উভয়ের ভূমিকা ও দায়িত্বের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
৬. নারী পাচার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ : নারীদের নিয়ে পতিতাবৃত্তি, পাচার, ক্রয়বিক্রয় বা অন্য যে কোন অবৈধ ব্যবসায় বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্রসমূহ আইন প্রণয়নসহ সকল প্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ এ ধরনের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জন্য কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৭. রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নারীর সমান অংশগ্রহণের ব্যবস্থা : রাষ্ট্রসমূহ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে:
ক.সকল নির্বাচন ও গণভোটে ভোটাধিকার এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারীর অংশগ্রহণের অধিকার সকল নির্বাচন ও গণভোটে ভোটাধিকার এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নারীর অংশগ্রহণের অধিকার
খ. সরকারের বিভিন্ন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নারীর অংশগ্রহণ এবং সকল পর্যায়ে সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার ।
গ. সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত বেসরকারি সংস্থা ও সমিতিতে নারীর অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা।
৮. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীর সমান অংশগ্রহণের ব্যবস্থা : রাষ্ট্রসমূহ সমতার ভিত্তিতে নারীদেরকেও আন্তর্জাতিক
পর্যায়ে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সুযোগ দিবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় যাতে নারীরা অংশগ্রহণ করতে
পারে তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
৯. নারী এবং তার সন্তানের জাতীয়তা : এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে :
ক. জাতীয়তা অর্জন, পরিবর্তন বা বজায় রাখার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অধিকার সমান। রাষ্ট্রসমূহ নিশ্চিত করবে যে, কোনো নারীর স্বামীর ভিন্ন জাতীয়তা হওয়ার কারণে বা বিদেশির সাথে তার বিবাহ হলে, তার জাতীয়তা সহজাতভাবে বা এমনিতেই পরিবর্তিত হবে না। রাষ্ট্র নারীকে তার জন্মসূত্রে অথবা স্বেচ্ছায় গৃহীত বা অর্জিত জাতীয়তা সংরক্ষণে নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
খ. সন্তানের জাতীয়তার ক্ষেত্রেও মা-বাবা হিসেবে নারী-পুরুষের অধিকার সমান।
১০. শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার : শিক্ষা ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেপ্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে : সকল ধরনের শিক্ষায় নারী-পুরুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এ অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত
ক. গ্রাম ও শহরে সর্বত্র পেশাগত, কারিগরি ও উচ্চতর শিক্ষাসহ সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষকে সমান সুযোগ প্রদান করবে।
খ.নারী-পুরুষকে বৃত্তি বা যে কোনো শিক্ষা মঞ্জুরীর ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান করবে।
গ.পাঠ্যপুস্তক ও বিদ্যালয় কর্মসূচি সংশোধনসহ উপযুক্ত শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে নারী ও পুরুষের ভূমিকা সম্পর্কে সুযোগ প্রদান করবে।
ঘ: নারী-পুরুষকে একই পাঠ্যসূচি, একই যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষা, একই মানের পরীক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা লাভের সুযোগ প্রদান করবে।
ঙ.বয়স্ক ও কর্মমুখী শিক্ষা কর্মসূচিতে নারী-পুরুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করবে।
চ.বিদ্যালয় থেকে নারীদের ঝরে পড়ার হার কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ ও প্রয়োজনে ঝরে পড়া নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্তা গ্রহন করবে।
ছ.খেলাধুলা, শরীরচর্চা ও শারীরিক শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের সমান সুযোগ প্রদান করবে।
জ. পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন ও স্বাস্থ্য শিক্ষায় নারী-পুরুষকে সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান করবে।
১১. কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার : কর্মক্ষেত্রে সকল প্রকার নিয়োগ প্রদানের সময় সমতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে :
ক. কর্মসংস্থান সকল মানুষের মৌলিক অধিকার।
খ.কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অধিকার সমান।
গ. নারীর স্বাধীনভাবে পেশা বেছে নেওয়া এবং পদোন্নতি, প্রশিক্ষণ, বেতনসহ ছুটি ও চাকরির নিরাপত্তাসহ সকল সুবিধা ভোগ করার অধিকার।
ঘ.নারীর কাজের মান মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমান আচরণ, সমান পারিশ্রমিক ও সমানভাবে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার।
ঙ.কর্মস্থলে নারীর নিরাপত্তার অধিকার।
চ.বেকারত্ব, বার্ধক্য, অসুস্থতা বা অন্য যে কোনো ধরনের অক্ষমতার ক্ষেত্রে নারীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা এবং বেতনসহ ছুটি ভোগের অধিকার।
১২. বিবাহ অথবা মাতৃত্বজনিত নারীর প্রতি বৈষম্যরোধ : বিবাহ অথবা মাতৃত্বের জন্য নারীর প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। এ অধিকার নিশ্চিতকরণে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করবে :
ক. গর্ভধারণ অথবা মাতৃত্বজনিত ছুটি এবং বৈবাহিক কারণে নারীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা। সন্তান জন্মদানের সময় সামাজিক সুবিধাদি নিশ্চিত করা এবং বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রবর্তন করা। চাকরিজীবী পিতা-মাতাদের শিশুর পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় ও উপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
গর্ভাবস্থায় যেসব কাজ মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর, গর্ভকালে নারীকে সে ধরনের কাজ থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করা।
১৩. নারীর স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও পুষ্টির অধিকার : এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ নিশ্চিত করবে :
ক. সমতার ভিত্তিতে নারী ও পুরুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত সেবা নিশ্চিত করা।
খ.প্রয়োজনে গর্ভাবস্থায় ও সন্তান জন্মদান পরবর্তীকালীন সময়ে নারীর জন্য বিনামূল্যে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ ওউপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করা।
১৪. নারীর জন্য সমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ সুবিধা : এ বিষয়ে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে :
ক.পারিবারিক কল্যাণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
খ.ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ সুবিধা অর্জনে নারীকে সমান সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
গ.বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের সমান
অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
১৫. পল্লিউন্নয়ন কাজে নারীর অংশগ্রহণ :
১ .এ ধারায় পল্লি এলাকার নারীরা সাধারণত যেসব কাজ করে থাকে, সেসব কাজের গুরুত্ব ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করার ব্যাপারে 2.স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ অঙ্গীকার করেছে। স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করবে :
ক.সকল পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়নে নারীর অংশগ্রহণ।
খ . নারীর জন্য পর্যাপ্ত সমাজসেবাসহ পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে তথ্য, পরামর্শ ও সেবা লাভের সুযোগ সৃষ্টি ।
গ.নারীর জন্য সকল প্রকার সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি থেকে সরাসরি সুবিধা লাভের সুযোগ সৃষ্টি ।
ঘ. আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সকল ধরনের শিক্ষালাভের সুযোগ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীর কারিগরি
ঙ. আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন সুবিধা লাভের জন্য নারীকে সংগঠন বা সমিতি করার সুযোগ প্রদান ।
চ.সকল প্রকার সামাজিক কাজে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান।
ছ.সকল প্রকার ঋণ, কৃষিকর্ম, উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ ও উপযুক্ত প্রযুক্তি সুবিধা এবং ভূমি ও কৃষি
সংস্কার ও পুনর্বণ্টনে নারীর সমান অধিকার লাভ ।
জ.গৃহায়ন, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা এবং পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নারীর জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা সৃষ্টি।
১৬. নারীর আইনগত ও নাগরিক অধিকার : এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহ নিম্নলিখিত বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে :
১.রাষ্ট্রসমূহ আইনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে।
২.সকল প্রকার নাগরিক বিষয়ে নারী ও পুরুষের আইনগত ক্ষমতা সমান।
৩.স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ নারীর আইনগত অধিকার সীমিত করে, এমন সকল চুক্তি বা ব্যক্তিগত দলিল বাতিল করবে।
৪.রাষ্ট্রসমূহ স্বাধীনভাবে চলাচল ও বসতি স্থাপনের স্থান বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার দিবে।
১৭. বিবাহ ও সকল পারিবারিক বিষয়ে নারী-পুরুষের সমান অধিকার : এক্ষেত্রে রাষ্ট্রসমূহ নারী-পুরুষের সমতার ভিত্তিতে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ নিশ্চিত করবে :
ক. বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার একই অধিকার।
খ.স্বাধীনভাবে স্বামী বা স্ত্রী বেছে নেওয়ার এবং উভয়ের পূর্ণ সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার।
গ.বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর সমান অধিকার ও দায়িত্ব।
ঘ.সন্তানের ব্যাপারে (বিবাহিত ও বিবাহবিচ্ছেদ অবস্থায়) পিতা-মাতার সমান অধিকার ও দায়িত্ব। সন্তানের ব্যাপারে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শিশুর মঙ্গল ও কল্যাণই প্রধান বিষয় বলে বিবেচিত হবে।
ঙ.সন্তান গর্ভধারণে ও জন্মদানে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার এবং নারীর জন্য এ সংক্রান্ত তথ্য ও শিক্ষালাভের সুযোগ সৃষ্টি।
চ. অভিভাবকত্ব, দত্তক গ্রহণ, ট্রাস্টশীপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অধিকার ও দায়িত্ব সমান। তবে এস ব্যাপারে শিশুর স্বার্থই হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
ছ.পারিবারিক নাম ও পেশা পছন্দ করার ক্ষেত্রে উভয়ের অধিকার সমান।
জ, সম্পত্তির মালিকানা অর্জন, ব্যবস্থাপনা, ভোগ ও নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর সমান অধিকার ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যুগ যুগ ধরে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাজমান সব প্রকার বৈষম্য বিলোপ সাধনকল্পে CEDAW এর এ মানবতাবাদী আন্দোলন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। নারীরা যে জন্মগত অধিকার থেকে এতদিন বঞ্চিত ছিল, সেগুলো পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশে আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে স সাথে আমাদের স্মরণ রাখতে হবে যে, নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে CEDAW কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন উপধারাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*