সোনিয়া গান্ধীর পরিচয় এবং তাঁর রাজনৈতিক কর্মজীবন সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সোনিয়া গান্ধীর মূল্যায়ন কর।
অথবা, সোনিয়া গান্ধীর পরিচয় দাও। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে মূল্যায়ন কর।
অথবা, সোনিয়া গান্ধী কে? তার রাজনৈতিক কর্মজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত লিখ।
উত্তর ভূমিকা :
ইন্দিরা গান্ধীর পরে ভারতের নারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা বলতে গেলে যার নাম চোখের সামনে ভেসে উঠে তিনি হলেন সোনিয়া গান্ধী। ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর অবদানও অসামান্য। রাজিব গান্ধীর মৃত্যুর পর কংগ্রেসের দুররস্থা এবং নেতা কর্মীদের আহ্বানে তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদ গ্রহণ করেন। কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে পুনরায় কংগ্রেসকে তিনি শক্তিশালী করে তোলেন। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস তার হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ক্ষমতার লোভ সোনিয়া গান্ধীকে কখনো স্পর্শ করতে পারে নি। নিঃস্বার্থভাবে এখন পর্যন্ত তিনি দেশের কল্যাণের জন্য সেবা করে যাচ্ছেন।
সোনিয়া গান্ধীর পরিচয় : ১৯৪৬ সালের ৯ ডিসেম্বর ইতালির তুরিন নগরের কাছে আরবাসানো নামে এক অখ্যাত নগরে সোনিয়া গান্ধী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম স্টেফানো এবং মায়ের নাম পাওনা। তাঁর বাবা একজন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। তাঁর বাবা-মায়ের কাছেই ছোটবেলা থেকে তিনি বড় হন। এরপর ইংরেজি ভাষায় ডিগ্রি লাভের জন্য ১৯৬৪ সালে যখন সোনিয়ার বয়স ১৮ বছর তখন তিনি ভর্তি হন ইংল্যান্ডের ক্যামব্রীজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র ছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জ্যেষ্ঠপুত্র রাজীব গান্ধী। সেখানে তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে সোনিয়ার। সোনিয়া ১৯৬৮ সালের ১৩ জানুয়ারি ভারতে আসেন ইতালি ছেড়ে। একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রাজীব-সোনিয়া। বিয়ের পর সোনিয়া বসবাসের জন্য আর স্বদেশে ফিরে যান নি। সোনিয়া ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন ১৯৮২ সালে। বিয়ের পর সোনিয়া ধর্মান্তরিত হন নি। তিনি আজও তাঁর রোমান ক্যাথলিক ধর্মে বিশ্বাসী। সোনিয়া-রাজীব দম্পত্তির দুই সন্তান হলেন ছেলে রাহুল গান্ধী ও কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। বিয়ের পর থেকে সোনিয়া গান্ধী বসবাস করতেন তাঁর শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীর সাথেই। তাঁর শাশুড়ির মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন ১৯৮৪ সালে। তখন সোনিয়া গান্ধী ভারতের ফার্স্টলেডি হিসেবে জনসমক্ষে আবির্ভূত হন। এরপর রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের ২১ মে আততায়ীর হাতে নিহত হন। ফলে সোনিয়া দু’সন্তান নিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে যান। এতটা শোকের পরেও সোনিয়া সাহস হারিয়ে ফেললেন না। বরং তিনি ধৈর্য ধরে থাকলেন। শুরু হলো দু’সন্তানকে নিয়ে তাঁর সামনের পথ চলা। কংগ্রেসের সভাপতির পদ তিনি তখন গ্রহণ করেন নি। ছয় বছর তিনি নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন ১৯৯৮ সালে দলের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে এবং নেতাকর্মীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি কংগ্রেসের সভাপতির পদ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বে ২০০৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস পুনরায় ক্ষমতা ফিরে পায়।
সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক কর্মজীবন : সোনিয়ার রাজনৈতিক কর্মজীবন সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. কংগ্রেসের সভাপতিত্ব গ্রহণ : স্বামীর মৃত্যুর পর ছয় বছর নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখলে কংগ্রেসের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে এবং দলের নেতাকর্মীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৯৯৮ সালে কংগ্রেসের সভাপতির প অলংকৃত করেন এবং বর্তমান পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে আসীন রয়েছেন। তার নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় কংগ্রেস ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে তার হৃত গৌরব। যার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই ২০০৪ সালে ভারতের নির্বাচনে কংগ্রেসের বিজয়ের মধ্য দিয়ে।
২০০৪ সালের নির্বাচন ও সোনিয়া গান্ধী : পুত্র রাহুল ও কন্যা প্রিয়াঙ্কা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সোনিয়া গান্ধী ২০০৪ সালের নির্বাচনে জনসংযোগ করেন। তিনি ভারতবাসীকে কংগ্রেস জোটে ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানান। জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ততার কারণে কংগ্রেস বিজয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে। এক্ষেত্রে সোনিয়া গান্ধী বিশাল ভূমিকা পালন করেন । যথা :
ক. গণসংযোগ : সোনিয়া সারা দেশে রেকর্ড সংখ্যক নির্বাচনী জনসভা, সমাবেশ করেন। রাতদিন জনসংযোগ এলাকায় তিনি নির্বাচনী জনসভা করেছেন। সাধারণ মানুষের ঘরে প্রবেশ করে তাদেরকে বুঝিয়েছেন এবং তাদের নিকট নিজের দলের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। পরিষ্কার হিন্দি ভাষায় তিনি জনগণকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, তিনি আর বিদেশিনি নন, তিনি ভারতের অধিবাসী এবং হিন্দি তাঁর প্রধান ভাষা ।
খ. রোড শো : সমগ্র ইন্ডিয়ার ৫০ হাজার কি. মি. সড়কে রোড শো করে তিনি পুরো নির্বাচনী আবহাওয়াকে পাল্টে দিয়েছেন রাজনীতিবিদরা সোনিয়ার এ রোড শোকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন চমক বলে অভিহিত করেছেন।

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, শুধুমাত্র ভারত নয়, সমসাময়িক বিশ্বরাজনীতিতে এক অসামান্য দৃষ্টান্ত হলেন সোনিয়া গান্ধী। তিনি ক্ষমতাকে কখনো বড় করে দেখেন নি। দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব হাতে পেয়েও তিনি দেশের স্বার্থে সে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন নি। ক্ষমতার লোভ তাঁকে বিন্দুমাত্র স্পর্শ করতে
পারে নি। তাঁর এ অবদান ও ত্যাগের জন্য তিনি কোটি কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি ভারতবাসীর গৌরব।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a7%80-%e0%a6%93-%e0%a6%89%e0%a6%a8%e0%a7%8d/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*