সুফিবাদ ও শরিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর।

অথবা, এ প্রসঙ্গে সুফিবাদের সাথে শরিয়তের তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, সুফিবাদ ও শরিয়ত সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
সুফিবাদ এক প্রকার মরমিবাদ। পরম সত্তাকে জানার ও চেনার আকাঙ্ক্ষা এবং আল্লাহ প্রেম ও আল্লাহর ধ্যানের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি মনোভাব সুফিবাদ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পার্থিব জীবনে দুঃখ কষ্ট সহ্য করা এবং যাবতীয় পাপ কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়ে গভীর ধ্যানে নিমজ্জিত হয়ে আল্লাহর প্রেম উপলব্ধি করাই সুফিবাদ। ইন্দ্রিয়জ ও ইচ্ছার বিশুদ্ধকরণ, অন্তঃস্থ ও বহিঃস্থ জীবন গঠন ও চিরন্তন পরিতৃপ্তির মধ্যেই সুফিবাদের সারসত্তা নিহিত রয়েছে।
সুফিবাদ ও শরিয়তের তুলনামূলক আলোচনা : শরিয়ত একটি ইসলামি পরিভাষা। ইসলামে যে অর্থে শরিয়ত ব্যবহৃত হয় তা হলো ইসলামে অবশ্য পালনীয় কর্মকাণ্ডকে শরিয়ত বলে। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা, বাকাত দেয়া প্রভৃতি। উল্লিখিত উদাহরণগুলো সকলের জন্য করজ। এগুলোর ব্যত্যয় ঘটানো চলবে না। সুফিবাদ অনুসারে বুকিবাদে অতিরিক্ততা ও কাঠিন্যতা রয়েছে, এর কিছুটা ঠিক হলেও সম্পূর্ণটা ঠিক নয়। কেননা শরিয়ত হলো সিরাতুল মুস্তাকিম। এটি একটি আম (সর্ব সাধারণ) শব্দ। কিন্তু আমরা যদি ইসলামি শিক্ষাকে গভীরভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে যে, শরিয়তের মধ্যে দুটি স্তর রয়েছে। যথা :
১. উচ্চতর স্তর এবং
২. নিতর স্তর।
নিম্নতর বা দুই নং ২টি সকলের জন্য প্রযোজ্য। যেমন- ফরজসমূহ পালন, ন্যায়বিচার করা প্রভৃতি শরিয়তের নিম্নস্ত রের কাজ। তবে এর অর্থ এই নয় যে, এগুলো নিকৃষ্টতম কাজ। কাজকে এখানে Matter of degree হিসেবে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, ১নং সকলের জন্য নয়। যেমন- ‘পরোপকারের নীতি’ এটি সকলে অর্জন করতে পারে না। কেবল নির্বাচিত বা selected লোকেই তা অর্জন করতে পারে। এ প্রকারের লোক ন্যায়বিচার করবেনই আবার সাথে সাথে পরোপকারও করবেন। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাহর হুকুম বা সিরাতুল মুস্তাকিমেরও দুটি স্তর রয়েছে। সুফিবাদ শরিয়তের উচ্চস্তরের সাথে সম্পর্কিত। কেননা নিম্নস্তরের শরিয়তের পালনের মাধ্যমে সুফিবাদ সম্ভব নয়। যেমন- পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার মাধ্যমে শরিয়তের উচ্চস্তরে পৌছা সম্ভব নয়, কেননা নামাজকে গুণসম্পন্ন করার জন্য এর ইহতিমামের উপর হাদিস শরীফে বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু নফল নামাজ সকলের জন্য প্রযোজ্য নয়। একজন মুত্তাকীর জন্য আবশ্যক হলো Devoted soul বা নিবেদিত আত্মা। নিবেদিত আত্মা বলতে বুঝায় আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হয়ে থাকা। এজন্য শুধু ফরজ ইবাদত যথেষ্ট নয় বরং প্রয়োজন হলো আল্লাহর স্মরণ বা জিকির ও বেশি বেশি নফল ইবাদত করা। সুফিগণ বলেছেন, আল্লাহর প্রতি নিবেদিত প্রাণ হয়ে তাকে স্মরণের জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন প্রয়োজন।সুফিগণ বিভিন্ন ব্যবহারিক দিক বিবেচনা করে বিভিন্ন কলাকৌশল আবিষ্কার করেছে। যেমন হুজুরে পাক (স) বলেছেন, এমন দুটি বাক্য রয়েছে যা জিহ্বার জন্য হালকা কিন্তু আমলনামার জন্য ভারী। সে দুটি বাক্য হলো ‘সুবহানাল্লাহিল ওয়া বিহামদিহি’ ‘সুবহানাল্লাহিল আযীম’। সুফিগণ এ দুটি বাক্য বেশি বেশি পাঠের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তাই বলা যায় যে, সুফিবাদ শরিয়ত হতে অতিরিক্ত কিছু নয়।
যাহেরি ও বাতেনি দিক : ইসলামেরও দুটি দিক রয়েছে। ১. যাহেরি দিক, ২. বাতেনি দিক। ১নং দিক অনুসারে বান্দা আল্লাহকে ভয় করে এবং তা থেকেই আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে। অপরদিকে যারা ২নং দিক অনুসরণ করে তারা ভয়ের পরিবর্তে ভক্তিকে গুরুত্ব দেয়। সুফিবাদ ইসলামের বাতেনি দিকের উপর গুরুত্ব দেয়। অন্যদিকে, জান্নাতেরও দুটি দিক বা উচ্চস্তর, নিম্নস্তর রয়েছে। নিম্নস্তরের সুখ হলো দৈহিক সুখ। আর উচ্চস্তর হলো মানসিক সুখ। যারা সুফিবাদ বা বাতেনি দিক চর্চা করবেন তারা জান্নাতের উচ্চতর সুখের সাক্ষাৎ পাবেন। তাই বলা যায় যে, ইসলামের যাহেরি দিক = শরিয়তের নিম্নস্তর = বেহেস্তের নিম্নস্তরের প্রতিশ্রুতি = অন্যান্য পথ বা অন্যদিকে ইসলামের বাতেনি দিক = শরিয়তের উচ্চতর স্তর = বেহেস্তের উচ্চস্তরের প্রতিশ্রুতি = সুফিবাদ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদ ইসলাম ধর্মের বাতেনি দিকের পরিচায়ক এবং শরিয়তের সামাজিক বিধিবিধানের নির্দেশক। মুসলিম জাতির চিন্তাধারায় অন্যান্য দিকের মতো সুফিবাদও কুরআন ও হাদিসের শিক্ষার উপর প্রতিষ্ঠিত। সুফিবাদ অনুসারে আল্লাহ প্রেমময়, তিনি আমাদের প্রেমাস্পদ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*