সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।

অথবা, সুফিবাদ ও রক্ষণশীল মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
অথবা, সুফিবাদ ও গৌড়াপন্থীদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
অথবা, সুফিবাদ ও শরিয়তের মধ্যে পার্থক্য লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ্ প্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এটি এমন ধর্ম, যা পার্থিব ও অপার্থিব, লৌকিক ও অলৌকিক জীবনের মধ্যে সেতু বন্ধন নির্মাণ করে। মানুষের পার্থিব লোকের মূল্যবোধকে অসীম। লোকে উন্নীত করে। পার্থিব ও লৌকিক জীবন অসীম লোকে উন্নীত করার সাধনাকেই সংক্ষেপে সুফিবাদ বলা হয়। কুরআন ও হাদিসের জাহেরি ও বাতেনি শিক্ষাই সুফি সাধনার মূলভিত্তি।
সুফিবাদ : ইসলামের মরমি ভাবধারা সুফিবাদ নামে পরিচিত। হৃদয়ের গভীরে পরম প্রিয়জনকে, শ্রেয়কে ও প্রিয়কে খুঁজে বের করা এবং তাঁর সাথে নিবিড় যোগসূত্র স্থাপনের যে প্রয়াস তাই সুফিবাদ। সুফি সাধকগণ সুফি নামে আখ্যায়িত। আল্লাহর প্রেমের উপলব্ধি ও আত্মার পবিত্র বিধানই তাদের সাধনার লক্ষ্য। পরমাত্মার সাথে মানবাত্মার মিলন সাধনই সুফি সাধনার মর্মকথা।
গোঁড়া মুসলমান : যারা শুধু ইসলামের বাহ্যিক (জাহেরি) দিককেই একমাত্র সঠিক রূপ বলে মনে করেন, কুরআন ও হাদিসের অভ্যন্তরীণ (বাতেনি) অর্থ গ্রহণ না করে শুধু আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করেন তারাই গোঁড়া মুসলমান। গোঁড়া মুসলমানগণ ইসলামের আংশিকরূপকেই পরিপূর্ণ ইসলাম বলে মনে করেন।
সূফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য : সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. জ্ঞানের উৎস : সুফি সাধকগণ আকলের উপর যতটা গুরুত্ব দেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন নকল ও কাশফের উপর। অন্যদিকে গোঁড়া মুসলমানরা নফলের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করে, আকলকে অল্প গুরুত্ব দেয় এবং কাশফের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে।
২. কলেমার অর্থ : গোঁড়া মুসলমানগণ কলেমা তাইয়্যেবা বলতে বুঝেন, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহা/উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (স) তাঁর প্রেরিত রাসূল। অন্যদিকে সুফিগণ এ অর্থ অস্বীকার করেন। তাদের মতে, এ কলেমার অর্থ হলো, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্তা নেই।
৩. কুরআনের অর্থ : গোঁড়া মুসলমানরা কুরআনের শাব্দিক অর্থের উপর গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। অন্যদিকে সুফিগণ কুরআনের আয়াতসমূহের বাহ্যিক, অভ্যন্তরীণ তাৎপর্যের কথা উল্লেখ করেন এবং কুরআনের অভ্যন্তরীণ অর্থই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে থাকেন।
৪. আল্লাহর ভয় : গোঁড়া মুসলমানরা আল্লাহর ভয়ে ইবাদত বন্দেগী করেন। অন্যদিকে সুফিরা আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য ইবাদত বন্দেগী করেন। স্বর্গ বা দোজখের ভয়ে তাদের বিচলিত করতে পারে না।
৫. জান্নাত লাভ : গোঁড়া মুসলমানরা ইবাদত করেন কর্তব্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেহেশতের লোভে। অন্যদিকে সুফিরা ইবাদত করেন আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আল্লাহকে পাওয়ার আশায়।
৬. শরিয়তের বিধান : গোঁড়া মুসলমানরা শরিয়তের বিধান পালনে কোন প্রকার শৈথিল্যকে মহা অপরাধ বলে গণ্য করেন। অন্যদিকে সুফি সাধকগণ আল্লাহর প্রেমে এতই মশগুল থাকেন যে, তাদের ক্ষেত্রে শরিয়তের বিধান প্রযোজ্য নয়।
৭. অন্ধ অনুকরণ : গোঁড়া মুসলমানরা ধর্মীয় নীতিসমূহ বিনা বিচারে গ্রহণ এবং ধর্মীয় নিয়মকানুন পালন করেন। অন্যদিকে সুফিরা ধর্মীয় নীতিমালা বিচারসহকারে নির্ধারণ ও প্রেম সহযোগে সম্পাদন করবেন।
৮. ঈমানের স্তর : গোঁড়া মুসলমানগণ ঈমানের স্তর সম্পর্কে অনভিজ্ঞ এবং সেজন্য তারা এগুলো অস্বীকার করেন। অন্যদিকে সুফিদের মতে, ঈমানের কতিপয় স্তর রয়েছে। এর সর্বশেষ স্তর লাভ করলেই প্রকৃত মুমিন হওয়া যায়।
৯. কবর জিয়ারত : গোড়া মুসলমানগণ কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমনকে শিরক মনে করেন। অন্যদিকে কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমনকে সুফিগণ জায়েজ মনে করেন।
১০. সংগীত : গোঁড়া মুসলমানগণ সর্বপ্রকার সংগীতকে হারাম ও নাজায়েজ বলে মনে করেন। অন্যদিকে অধিকাংশ সুফি ধর্ম সংগীতকে জায়েজ মনে করেন এবং আল্লাহর প্রাপ্তির জন্য গজল, কাওয়ালী ও কবিতা পাঠ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদ ও গোঁড়া মুসলমানদের মধ্যে পার্থক্য এটাই প্রমাণিত হয় যে, পার্থক্য প্রকৃতপক্ষে বাতেনি দিকের বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়েই বর্তমান। সুফিয়া জাহেরি ও বাতেনি দিকের সমন্বয়পন্থি। কিন্তু গোঁড়া মুসলমানরা শুধু জাহেরি দিকের প্রবক্তা। সুতরাং উভয়ের গুরুত্বকে মুসলিম দর্শনে অস্বীকার করা যায় না।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*