সুফিবাদের প্রেম তত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা কর।

অথবা, সুফি প্রেম তত্ত্বের বিভিন্ন দিক আলোচনা কর।
অথবা, সুফি প্রেমতত্ত্ব সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
অথবা, সুফি প্রেমতত্ত্ব কী?
অথবা, সুফি প্রেমতত্ত্ব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সুফি প্রেমতত্ত্ব সম্পর্কে যা জান লেখ।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরীণ বা বাতেনি অথবা মরমি দিকটিই সুফিবাদ নামে পরিচিত। আধ্যাত্মিক পূর্ণতা লাভের মাধ্যমে পরম আল্লাহর নৈকট্য লাভই ইসলামের এ দিকটির মর্মকথা। আর আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় হিসেবে সুফিবাদে যে পথটার উপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় তাই হলো প্রেম তত্ত্ব বা খোদাপ্রেম।
সুফি প্রেম তত্ত্ব : সুফি সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্থাৎ সুফি অভিজ্ঞতার প্রগাঢ়তম মুহূর্তে আল্লাহর অপরোক্ষ জ্ঞান এবং সান্নিধ্য অর্জনের লক্ষ্যে সুফি যে পথে অগ্রসর হন সে পথের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রেম। বলা যায় প্রেম সুফি সাধনা ও দর্শনের প্রাণস্বরূপ। প্রেমই সুফি দর্শনের মূল কথা। সাধারণভাবে প্রেম বলতে বুঝানো হয় স্ত্রী-পুত্র, বস্তু- সম্পদ প্রভৃতি পার্থিব বিষয়ের প্রতি আকর্ষণ বা অণুরক্ততাকে বুঝায়। কিন্তু সুফি যে প্রেমের অনুসারী তা এ ধরনের প্রবৃত্তিমূলক প্রেম নয়। সুফির প্রেম নিঃসৃত হয় হৃদয় থেকে এমন এক সময়ে যখন তিনি উপনীত হন নৈতিক বিকাশের এক উচ্চতর পর্যায়ে এবং তাঁর সব শক্তি ও ইচ্ছাকে পরিচালিত করেন আল্লাহর সঙ্গে মিলনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে। অর্থাৎ সুফি দর্শনে
মানবাত্মার সঙ্গে মিলনের মূলসুর বা উপায় হলো প্রেম। প্রেমই হলো সুফির পরমাত্মার সঙ্গে একাত্ম হবার একমাত্র পথ। তাই দেখা যায় বাংলার সুফি দর্শন যুক্তিমূলক জ্ঞানবাদ নয় এ দর্শন সাক্ষাৎ অনুভূতিমূলক প্রেম ভাব ভক্তিমূলক ভাবাবেগমূলক দর্শন। এর স্থান মস্তিষ্কে নয়, দর্শন শাস্ত্রের যুক্তিতর্ক বা চুলচেরা বিশ্লেষণে নয়, এর স্থান হৃদয়ে, গভীর অনুভূতির মধ্যে, প্রেম, ভাব, ভক্তি আবেগের মধ্যে মানবাত্মা ও পরমাত্মার মিল সাধনের মধ্যে। মধ্যযুগের বৈষ্ণব দর্শনে আমরা যে প্রেমের সন্ধান পাই সুফি দর্শনের প্রেমের সাথে তার তেমন কোন পার্থক্য নেই। বলা যায় উভয় দর্শনের প্রেমের মূলসুর একই সূত্রে গ্রথিত। বাংলার সুফিরা তাঁদের সাহিত্য ও গানে ‘প্রেমে’ শব্দটিকে এত বিচিত্র অর্থে ব্যবহার করেছেন যে, তা থেকে সুফি প্রেমের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেয়া এবং এর প্রকার নিরূপণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা তাঁদের জানার সুবিধার্থে সুফিদের প্রেমকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
১. জাগতিক প্রেম বা ভবের পিরিতি : মানবিক প্রেম বা জাগতিক প্রেম সুফি দর্শনে ভবের পিরিতি নামে পরিচিত। সুফি দর্শনে ভবের পিরিতি একেবারে নিরর্থক নয়। বাংলার সুফিরা জাগতিক প্রেমকে ঐশী প্রেমের সোপান বলে মনে করেন। তবে জাগতিক প্রেমের মোহে আবদ্ধ থাকলে ঐশী প্রেমে উত্তরণ সম্ভব নয়। ষড় রিপুকে দমন করে কামকে প্রেমে রূপান্তর করতে পারলেই কেবল মানবিক প্রেমকে ঐশী প্রেমে উত্তরণ করা সম্ভব। এখানে মানবিক প্রেমকাহিনী কাঞ্চনের প্রতি আকর্ষণ নয় বরং পরমাত্মার সঙ্গে মিলনের প্রয়াসম্বরূপ।
২. ঐশী প্রেম বা খোদার পিরিতি : ঐশী প্রেম বা খোদা পিরিতিই সুফি দর্শনের প্রেম তত্ত্বের মূল নির্যাস, সুফির আল্লাহর সঙ্গে সম্মিলনের একটি প্রধান শর্ত হচ্ছে ঐশী প্রেম। খাঁটি ঐশী প্রেম তখনই অর্জিত হয় যখন সবরকম আবেগ উচ্ছ্বাসকে দমন করা হয় এবং আল্লাহ্ কেবল আল্লাহই সুফি মনে উপস্থিত থাকেন তার নিরন্তন সঙ্গী হিসেবে। অতএব, যে প্রেমের আকর্ষণে মানবাত্মার ও পরমাত্মার মহামিলন ঘটে তাই ঐশী প্রেম। এ প্রেম হচ্ছে সর্বোচ্চ স্তরের প্রেম। সুফি এ প্রেমেরই কাঙাল। যথার্থ ঐশী প্রেম সর্বতোভাবে স্বার্থলেশ শূন্য এবং একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এ প্রেমের অন্য আর কোন অভীষ্ট থাকতে পারে না। এ প্রেমের আকর্ষণেই সুফি তাঁর জীবন মান সবকিছু ত্যাগ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তাই আঠারো উনিশ শতকের একজন নব্য সুফি মন্তব্য করেছেন প্রেমের রাজ্যে কত সুখ যে তা বলা যায় না। যে এসেছে সেই মজেছে অন্য রাজ্যে যেতে চায় না।
উপসংহার : আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, প্রেমই সুফির পথ পরিক্রমার মূল আধেয়। এ প্রেমই তাঁর আল্লাহর সাথে মিলনের প্রধান শর্ত। আর তাই সুফি তাঁর পরম আরাধ্যকে লাভের আশায় প্রেমে নিমগ্ন থাকেন দিনমান।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%a6%e0%a7%87/
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*