সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতা উল্লেখ কর ।

অথবা, সামাজিক গবেষণার নেতিবাচক দিক উল্লেখ কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার সমস্যাসমূহ লিখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার দুর্বল দিকগুলো তুলে ধর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার ৬টি সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে । কেননা পরিবর্তনশীল মানব মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা আবেগ, অনুভূতি ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ও কার্যকরী তথ্য পাওয়া সব সময় সম্ভব হয়ে উঠে না।
সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতা : নিম্নে সামাজিক গবেষণার সীমাবদ্ধতাসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. ভালো বা দক্ষ অনুসন্ধানকারী পাওয়ার সমস্যা : অনুসন্ধানকারী আন্তরিক না হলে কোনো গবেষণাই কৃতকার্য আন্তরিকতার অনুযায়ী গবেষণাকর্ম সম্পাদন করতে হয়। গবেষণাকর্মটি সঠিক ও নির্ভুল হতে পারে না। সামাজিক সামাজিক গবেষক খুঁজে বের করা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। গবেষককে হওয়ার জন্য প্রয়োজন দক্ষ ও আন্তরিক গবেষক। আর তা না হলে মাঠ পর্যায় থেকে সঠিক তথ্য বের করে নিয়ে আসা সাথে গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গবেষণার ক্ষেত্রে দক্ষ সম্ভবপর হবে না।
২. তথ্য সংগ্রহে সমস্যা : সামাজিক গবেষণায় তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। কেননা গবেষককে মানুষের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। সাধারণত তারা (Human beings) গবেষককে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত থাকে না । তারা অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য প্রদান করতে উৎসাহবোধ করে না। বিশেষকরে বিরাট গ্রামীণ জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় না থাকায় তথ্য প্রদান করতে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হয় ।
৩. নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা : সামাজিক গবেষণার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো নিয়ন্ত্রণহীনতা। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যেমন বিভিন্ন ঘটনা বা চলকের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যায়, কিন্তু সামাজিক অবস্থাকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না । ফলে সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে বিভিন্ন চলকের মধ্যকার কার্যকারণ সম্পর্ক নিরূপণ করা সম্ভব হয় না।
৪. পুনরাবৃত্তি সমস্যা : সামাজিক গবেষণার আর একটি সীমাবদ্ধতা হলো এখানে কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা যায় না। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে কোনো ঘটনাকে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অধ্যয়ন করে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব । কিন্তু সামাজিক গবেষণায় যেহেতু মানুষের মন, আচরণ ও সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করা হয়, সেহেতু এখানে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটানো কষ্টকর এবং সঠিক ফল বয়ে নিয়ে আসে না।
৫. পক্ষপাতদুষ্টতা : সামাজিক গবেষণার আর একটি সমস্যা হলো এখানে গবেষকের ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, চিন্তা- চেতনা, ধ্যান-ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি, অভ্যাস ইত্যাদির প্রভাবন লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ গবেষক পক্ষপাত দোষে দুষ্ট হয়ে পড়লে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ উপাত্ত সংগৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ক্ষীণ। ফলে সামাজিক গবেষণা ত্রুটিমুক্ত হতে পারে না ।
৬. উপাত্ত বিশ্লেষণে সমস্যা : উপাত্ত সংগৃহীত হওয়ার পরও সমস্যা থেকে যায় । ফলাফল পাওয়ার জন্য গবেষককে উপাত্তের ব্যাখ্যার (Interpretation of data) উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই উপাত্ত বিশ্লেষকরা পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। তাদে অদূরদর্শিতা এবং উপাত্ত বিশ্লেষণে অদক্ষতার কারণে এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।
৭. প্রশ্নমালার সমস্যা : কোন অনুসন্ধানকারী যখন কোনো সমস্যা নিয়ে অনুসন্ধান করেন, তখন তাকে প্রশ্নমালার সাহায্য নিতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো প্রশ্নমালা তৈরির ক্ষেত্রে। প্রশ্নমালা হতে হবে সহজ-সরল এবং সহজে বোধগম্য, যাতে উত্তরদাতা সঠিকভাবে উত্তর প্রদান করতে পারে। প্রশ্নমালার ধরন এবং মানের উপর ভিত্তি করে মানসম্মত উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক প্রশ্নমালার উপর সামাজিক গবেষণার সফলতা নির্ভর করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও পরিশেষে বলা যায় যে, সমস্যাসংকুল এ মানব পৃথিবীতে সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক গবেষণা অপরিহার্য। উল্লিখিত সীমাবদ্ধতার পরিসর থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে সামাজিক গবেষণার প্রয়োগ ও প্রয়োজনীয়তা উন্নত ও অনুন্নত উভয় বিশ্বে সমাদৃত হবে ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*