অথবা, জাতিবর্ণভেদে সামাজিক অসমতা সম্পর্কে লিখ।
অথবা, জাতিবর্ণ কীভাবে সামাজিক অসমতা সৃষ্টি করে?
অথবা, সামাজিক অসমতায় জাতিবর্ণ প্রথা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : মানবসমাজে সবসময়ই সামাজিক অসমতার অস্তিত্ব বিরাজমান ছিল। সামাজিক অসমতা হচ্ছে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাঝে অসাম্যের অস্তিত্ব। একই সমাজে বসবাস করেও সবাই একই মর্যাদাধিকারী হয় না কিংবা একই ধরনের আর্থরাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে না। সামাজিক অসমতা মর্যাদা, ক্ষমতা ও সম্পদ ইত্যাদির অসম বণ্টনকে রক্ষা করে। সমাজের বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, সব সমাজেই কোনো না কোনোভাবে অসমতা বর্তমান থাকে। অসমতার মাত্রায় তারতম্য হতে পারে। তবে একেবারে বৈষম্যহীন সমাজ অস্তিত্বহীন।
জাতিবর্ণভেদে সামাজিক অসমতা (Social inequality by caste) : ভারতীয় সামাজিক অসমতার ব্যাখ্যায় জাতিবর্ণ প্রথা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটা জাতিবর্ণ অন্তর্বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী যার নিজস্ব পৈত্রিক পেশা আছে। বিভিন্ন জাতিবর্ণ উঁচুনিচু অবস্থানে অনেকটা স্থায়ীভাবে স্তরায়িত। জাতিবর্ণকে এজন্য Frozen Class বা অনড় ও অপরিবর্তনীয় শ্রেণি বলা হয়। জাতিবর্ণের সদস্যপদ জন্মগত এবং এগুলো অন্তর্বিবাহ গোষ্ঠী বিধায় এক জাতিবর্ণের লোক অন্য জাতিবর্ণে বিবাহ করতে পারে না। জাতিবর্ণ নির্ভর একটি আদর্শ ভারতীয় গ্রামে প্রতিটা জাতিবর্ণের চলাচলের নিজস্ব রাস্তা আছে। সেখানে কমপক্ষে একটি প্রভাবশালী উচ্চ জাতিবর্ণ থাকে, যার সদস্যরা হলো জমির মালিক। অন্যান্য জাতিবর্ণের লোকেরা এসব জমিতে কাজ করে। পেশাজীবী জাতিবর্ণের লোকেরা কেউবা আবার রাস্তা পরিষ্কার রাখে। এ কাজের জন্য বছরান্তে ফসল মৌসুমে পারিশ্রমিক পায় । হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী ৫টি প্রধান জাতিবর্ণ হচ্ছে ব্রাহ্মণ বা ধর্মীয় পুরোহিত, ক্ষত্রিয় বা যোদ্ধা, বৈশ্য বা ব্যবসায়ী, শূদ্র বা চাকর এবং অস্পৃশ্য। অস্পৃশ্য নামটি এজন্য দেওয়া হয়েছে যে এদের স্পর্শ বা ছায়া লাগলে উচ্চ
জাতিবর্ণের মানুষ দূষিত হয়ে যাবে বলে বিশ্বাস। শাস্ত্রে ৫টি মাত্র জাতিবর্ণের কথা বলা হলেও কার্যত সমাজে আরও অনেক
উপজাতিবর্ণ রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে ফর্সাবর্ণের আর্যরা ভারতবর্ষে এসে জাতিবর্ণ প্রথার পত্তন করে এবং নিজেদেরকে কৃষ্ণবর্ণের থেকে সামাজিক গুরুত্ব বজায় রেখে চলে। কেউ কেউ যুক্তি দেন যে, প্রাক-ভারতেও জাতিবর্ণ প্রথা ছিল। জাতিবর্ণ প্রথায় সামাজিক গতিশীলতা একেবারে নেই একথা বলা যায় না। কতিপয় হিন্দু অস্পৃশ্য পরিবার খুবই ধনী আবার হয়ত অনেক ব্রাহ্মণই দরিদ্র । বি.আর. আমবেদকার নামক একজন অস্পৃশ্য জাতিবর্ণের সদস্য ভারতে প্রথম আইনমন্ত্রী ছিলেন। V. Barnouw এর মতে, ভারতে জাতিবর্ণ বিলোপ হচ্ছে একথা স্পষ্ট করে বলা যায় না। কারণ, সেখানে প্রতিটি জাতিবর্ণের মধ্যে সংহতি আরো তীব্রতর হচ্ছে। জাতিবর্ণভিত্তিক সাময়িকী প্রকাশিত হচ্ছে। জাতিবর্ণভিত্তিক হোস্টেল, ব্যাংক ও হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তির ক্ষেত্রে জাতিবর্ণভিত্তিক কোটা প্রবর্তিত হয়েছে। ভারতের বাইরে আফ্রিকার রুয়ান্ডাতে সীমিত আকারে জাতিবর্ণের অস্তিত্ব মেলে। সেখানকার দুই মিলিয়ন অধিবাসী তিনটি প্রধান জাতিবর্ণে বিভক্ত। এরা প্রত্যেকেই অন্তর্বিবাহভিত্তিক গোষ্ঠী, উঁচুনিচু মর্যাদায় অবস্থিত এবং প্রত্যেকের নিজস্ব পেশা আছে। জাতিবর্ণ তিনটি হচ্ছে-
১. তুৎসি : এরা সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী এবং দেশের অধিকাংশ গরু-মহিষের মালিক। মোট জনসংখ্যার মাত্র ১০% এ তুৎসিরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাশালী জাতিবর্ণ । যারা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।
২. হুতু : এরা কৃষককুল এবং সংখ্যায় ৮৫%।
৩. তোয়া : এরা শিকারী এবং মৃৎশিল্পী। এরা সংখ্যায় ৫%। এছাড়াও সোমালিয়ায় ভারতের অস্পৃশ্যদের ন্যায় জনগোষ্ঠী রয়েছে যারা মিদগান নামে পরিচিত। এরা চামড়ার কাজ করে এবং মূলত শিকারী। এদেরকে নোংরা মনে করা হয়। বাইরের কোনো জনগোষ্ঠীতে এদের বিবাহ নিষিদ্ধ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে একথা বলা যায় যে, জাতিবর্ণব্যবস্থা সামাজিক অসমতার সৃষ্টি করে। কেবল তাই নয়, জাতিবর্ণের সদস্যপদ যেহেতু জন্মের দ্বারা নির্ধারিত, অন্তর্বিবাহ যার অন্যতম রীতি,তাতে জাতিবর্ণ প্রথা সমাজে অনেকটা স্থায়ী অসমতার জন্য দায়ী।
সামাজিক অসমতায় জাতিবর্ণ প্রথা কতটুকু দায়ী বলে মনে কর।
পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079
Leave a Reply