সমন্বয়ের সংজ্ঞা দাও। সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর ।

অথবা, সমন্বয় কাকে বলে? সমন্বয়সাধনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমন্বয় সংগঠনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। সমস্বয় ছাড়া কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা যায় না। সমন্বয়হীনতার কারণে সংগঠন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ইহা সংগঠনের ভুলত্রুটি দূর করে শক্তিশালী একটি কাঠামো প্রদান করে। সংগঠনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বয়সাধনের প্রয়োজনীয়তা অতি গুরুত্বপূর্ণ।সমন্বয়কে ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক নীতি বলা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে সংগঠনের গতিশীলতা ফিরে আসে।
সমন্বয়ের সংজ্ঞা : সাধারণ অর্থে সমন্বয় বলতে কোনো সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পাদন করার একটি কৌশল বিশেষ। সমাজবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ের মত সমন্বয়েরও একক ও সর্বজন স্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা প্রদান করা সম্ভব হয়নি।বিভিন্ন তাত্ত্বিক গোষ্ঠী ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমন্বয়ের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তার কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
জেমস ডি. মুনি (James D. Mooney) এর মতে, “সমন্বয় হচ্ছে কোনো কোনো সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনে কর্মের ঐক্য প্রতিষ্ঠাকল্পে গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রতান্ত্রিক ব্যবস্থা।” (Co-ordination is the orderly arrangement of group effort to provide unity of action in the pursuit of a common purpose.) ডিমোক ও ডিমোক বলেন, “প্রশাসনিক সংগঠনের বিভিন্ন অংশগুলোকে যথাযথভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত রাখার
অর্থই হচ্ছে সমন্বয় সাধন।
সেকদার হাডসন (Seckler Hudson) এর ভাষায়, “সমন্বয় একটি সামগ্রিক কার্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে পরস্পর সম্পর্ক নির্ণয় করে।” (The all important duty of interrelating the various parts of the work.)
জি. আর. টেরি বলেন, “সমন্বয় হলো সংগঠনের বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত করা বা বিভিন্ন অংশের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার এক প্রয়াস।উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, সমন্বয় হলো কোনো সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের একটি বিশেষ কৌশল। সমন্বয়ের মাধ্যমে সংগঠনের বিভিন্ন অংশের কাজের সংযুক্তি ঘটিয়ে সমস্ত কার্যকে উদ্দেশ্য অভিমুখে চলতে সাহায্য করে। এর ফলে কাজের দ্বৈততা যেমন পরিহার হয় তেমনি শূন্যতা ও পূরণ হয়।
সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা : বর্তমান সময়ে যে কোনো সংগঠনে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।বিশেষ করে বৃহৎ সংগঠনে ব্যাপকসংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি ও বিশাল আয়তনের কারণে যেখানে নানাবিধ প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দেয়। এই জটিলতা দূর করার লক্ষ্যে সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য একটি বিষয়। নিম্নে সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. দ্বৈততা রোধ : সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে বহু লোক এক সাথে কাজ করে। এ কারণে কোনো কোনো কাজের দ্বৈততা একান্তই স্বাভাবিক। যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে কোনো কাজের একাধিক বার সম্পাদন রোধ করা যায়।
২. শূন্যতা রোধ : সমন্বয়ের মাধ্যমে কেবল দ্বৈততা রোধ নয়, অনাকাঙ্ক্ষিত শূন্যতাও রোধ করা সম্ভব এক সাথে অনেক কাজ করার কারণে একটি কাজ একদিকে যেমন একাধিক বার হতে পারে, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো একটি অংশ কেউ না করার কারণে শূন্যও থেকে যেতে পারে। সমন্বয়ের মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব।
৩. ঐক্য প্রতিষ্ঠা : সংগঠনে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা একান্ত অপরিহার্য বিষয়। কারণ কোনো প্রতিষ্ঠানে ঐক্য বজায় না থাকলে সে সংগঠন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারে না। তাই সংগঠনের ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমন্বয়সাধন প্রয়োজন।
৪. ভারসাম্য রক্ষা : যে কোনো সংগঠনে কর্মচারীদের মধ্যে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, আচরণ ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক। এসব পার্থক্যসমূহ দূর করে প্রশাসনের কাজে সমতা আনয়নের লক্ষ্যে সমন্বয়সাধন একান্ত অপরিহার্য।
৫. দ্বন্দ্ব নিরসন : একই সাথে কাজ করতে গেলে প্রশাসনের বিভিন্ন শাখার মধ্যে দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ সংগঠিত হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। এর ফলে সংগঠনে তা সংকট ডেকে আনে। এমতাবস্থায় সমন্বয়ের মাধ্যমে এসব দ্বন্দ্ব নিরসন করা সম্ভব।
৬. শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা : প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার কারণে সংগঠনের অভ্যন্তরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। যা প্রশাসনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রশাসনিক এসব বিশৃঙ্খলা দূর করতে সমন্বয় সাধন একান্ত অপরিহার্য।
৭. বৈষম্য দূরীকরণ : প্রশাসনে বা সংগঠনে বিভিন্ন কারণে পদোন্নতি, কর্মবণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি হতে পারে। এসব বৈষম্যের ফলে সংগঠনে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়ে থাকে। তাই প্রশাসনে এসব বৈষম্য দূরীকরণে সমন্বয় সাধন একান্ত প্রয়োজন।
৮. অপচয় রোধ : সংগঠনের কার্যক্রমে অপচয় রোধ করার জন্য সমন্বয় সাধন একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে কাজের দ্বৈততা এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে সময় এবং অর্থের অপচয় হয়, যা সমন্বয়ের মাধ্যমে রোধ করা যায়।
৯. সম্পদের সদ্ব্যবহার : যে কোনো সংগঠনের জন্য সম্পদের সদ্ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য বিষয়। কারণ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত উভয় ক্ষেত্রে সীমিত সম্পদের সাহায্যে অসীম অভাব পূরণ করতে হয়। সমন্বয় এমন একটি নীতি যা এই সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অসীম চাহিদা পূরণে সহায়তা করে থাকে ।
১০. যোগাযোগ রক্ষা : একটি সংগঠনে বিভিন্ন ইউনিট বা শাখার মাধ্যমে কার্যাবলি সম্পাদিত হয়। সমন্বয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ইউনিট বা শাখার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হয়।
১১. অনাবশ্যক প্রতিযোগিতা রোধ : অনেক সময় সংগঠনের বিভিন্ন শাখার মধ্যে অনাবশ্যক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। যা সংগঠনে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি করে। এই অনাবশ্যক প্রতিযোগিতা রোধের জন্য সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা একান্ত অপরিহার্য।
১২. আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়হীনতা দূরীকরণে : অনেক সময় সংগঠনের কাজের মধ্যে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়। যা সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহক করে। সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই এ সমস্যা দূর করা সম্ভব।
উপসংহার : উপরের আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, সংগঠনের বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা দূর করার জন্য সমন্বয়সাধন একান্ত অপরিহার্য। সমন্বয়সাধনের মাধ্যমেই সংগঠনের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব। সমন্বয়সাধান কোনো পৃথক কাজ নয় বরং এমন শর্ত বিশেষ যা প্রশাসনের সকল পর্যায়েই পালিত হওয়া উচিৎ।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*