সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য আলোচনা কর।

উত্তর : ধর্ম সাধারণ লোকের সংস্কৃতি আর সংস্কৃতি শিক্ষিত ও মার্জিত লোকের ধর্ম। সংস্কৃতি মানে উন্নততর জীবন সম্পর্কে চেতনা; সৌন্দর্য, আনন্দ-প্রেম সম্পর্কে ধারণা। সাধারণ মানুষ ধর্মের মারফতেই তা পেয়ে থাকে। তাই তাদেরকে ধর্ম থেকে বঞ্চিত করা আর সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত করা এক কথা। ধর্ম হচ্ছে জীবনের নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু সংস্কৃতিবান মানুষেরা সংস্কৃতির মাধ্যমেই নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রিত করে। ধর্ম মানুষকে পাপ থেকে, পতন থেকে রক্ষা করে; কিন্তু মানুষের জীবনকে বিকশিত করে না। জীবনের গোলাপ ফোটানোর দিকে তার নজর নেই, গোলাপের গাছটি নিষ্কণ্টক রাখাই তার উদ্দেশ্য। অপরদিকে, সংস্কৃতির উদ্দেশ্য হচ্ছে জীবনের বিকাশ সাধন করা। মনুষ্যত্বের বিকাশই সবচেয়ে বড় কথা। চলার পথে সে স্খলন পতন থেকে রক্ষা পাওয়াটাই বড় কথা নয়। তাই জীবনের গোলাপ ফোটাতে গিয়ে দু’একটা কাঁটা এসে গেলে সংস্কৃতিবান মানুষের তাতে ক্ষতি নেই। সমাজ সাধারণভাবে মানুষকে সৃষ্টি করে, মানুষ আবার নিজেকে গড়ে তোলে শিক্ষাদীক্ষা ও সৌন্দর্য সাধনার সহায়তায়। এই যে নিজেকে বিশেষভাবে গড়ে তোলা এরই নাম সংস্কৃতি। তাই সংস্কৃতিবান মানুষ স্বতন্ত্র সত্তা এবং আলাদা মানুষ। নিজের চিন্তা, নিজের ভাবনা ও নিজের কল্পনার বিকাশ না হলে কালচার্ড বা সংস্কৃতিবান হওয়া যায় না। ধার্মিকের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে ভয় আর পুরস্কারের লোভ। সংস্কৃতিবান মানুষের জীবনে ওসবের বালাই নেই। তারা সব কিছু করে ভালোবাসার তাগিদে। সত্যকে ভালোবাসা, সৌন্দর্যকে ভালোবাসা, ভালোবাসাকে ভালোবাসা, বিনা লাভের আশায় ভালোবাসা, নিজের ক্ষতি স্বীকার করে ভালোবাসার নামই সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানে জীবনের values সম্পর্কে ধারণা। ধর্মের মতবাদ বা আদর্শও তা ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই সে সম্পর্কে সাবধান হওয়া দরকার। অতীতে ধর্ম ঈশ্বরকে আচ্ছন্ন করেছিল, বর্তমানে মতবাদ বা আদর্শ মনুষ্যত্বকে আচ্ছন্ন করতে পারে। অনেকে আবার সংস্কারমুক্তিকেই সংস্কৃতি বলে মনে করে। কিন্তু তা সত্য নয়। সংস্কারমুক্তি সংস্কৃতির একটি শর্তমাত্র। তাও অনিবার্য শর্ত নয়। অনিবার্য সত্য হচ্ছে মূল্যবোধ। সংস্কারমুক্তি ছাড়াও সংস্কৃতি হতে পারে কিন্তু মূল্যবোধ ছাড়া সংস্কৃতি হতে পারে না। কবিতার মতো বলতে গেলে বলতে হয় সংস্কৃতি মানে সুন্দরভাবে, বিচিত্রভাবে মহৎভাবে বাঁচা। প্রকৃতি ও সংসার, মানব ও সংসারের মতো অসংখ্য অনুভূতির শিকড় চালিয়ে দিয়ে বিচিত্র রস টেনে নিয়ে বাঁচা। মহত্ত্বের জীবনদানে নর-নারীর বিচিত্র সুখদুঃখে, ভ্রমণ কাহিনীর মারফতে, ইতিহাসে মারফতে, মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশে, জীবনকাহিনীর মারফতে, জীবনের দুঃখ নিবারণের অঙ্গীকারে প্রচুরভাবে, গভীরভাবে বাঁচাই সংস্কৃতি। বিশ্বের বুকে বুক মিলিয়ে, ‘সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীরে’ স্নাত হয়ে বাঁচার নামই সংস্কৃতি।

পরবর্তী পরীক্ষার রকেট স্পেশাল সাজেশন পেতে হোয়াটস্যাপ করুন: 01979786079

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!