শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অবস্থান বর্ণনা কর।
অথবা, নারীর শিক্ষাগত উপযোগিতা আলোচনা কর।
অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আলোচনা কর।
অথবা, বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অবস্থান সম্পর্কে বিবরণ দাও।
অথবা, বাংলাদেশে নারীর শিক্ষাগত উপযোগিতা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সন্তান ধারণ করা থেকে শুরু করে যতদিন পর্যন্ত ‘না শিশুরা হাঁটতে ও কথা বলতে শেখে মায়ের আশ্রয়েই তারা বেড়ে উঠে। আর বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারীকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ওপারিবারিক কারণে পুরুষদের উপর নির্ভর করতে হয়। এ নির্ভরশীলতাই তাদের পরাধীন করে তোলে। তাদেরকে এ পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে পারে একমাত্র শিক্ষা। দেশের সুষম আর্থসামাজিক বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য পুরুষে পাশাপাশি মহিলাদেরও সমহারে অংশগ্রহণ একান্ত আবশ্যক। এ অংশগ্রহণ তখনই সম্ভব যখন তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয় । আর এ সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই প্রয়োজন শিক্ষার। তাই পরিবার, দেশ ও জাতির উন্নয়নে নারী শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য।
নারীর শিক্ষাগত অবস্থান : এদেশের শতকরা ৩৮% লোক অশিক্ষিত, যার মধ্যে নারী অশিক্ষিতের সংখ্যা শতকরা ৫৫%। এ বিপুল পরিমাণ অশিক্ষিত নারীকে নিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রা। বিশ্বব্যাপী যেখানে মহিলাদের শিক্ষিত করে তোলার অভিযান শুরু হয়েছে, সেখানে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর মহিলারা শিক্ষা আলো থেকে বঞ্চিত। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অবস্থান আলোচনা করতে গেলে পুরুষ, নারী, গ্রাম, শহর, শিক্ষার বিভিন্ন স্তর নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করতে হবে।
বালিকা প্রাথমিক শিক্ষা : বাংলাদেশের শিশুদের আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু এ শিক্ষাব্যবস্থা অনুন্নত, বিশেষ করে পল্লি এলাকায়। গ্রামীণ পরিবারগুলোর ৭০% ভূমিহীন। চরম দরিদ্র ও অভাবের দরুন গ্রামীণ পরিবারের প্রাথমিক বিদ্যালয় বয়সী সন্তানদের ৬৫% স্কুলে যায়। আর ছাত্রীর সংখ্যা এ হারের চেয়ে অনেক কম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৯৫ সালে প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ। এর মাঝে বালক ৯২ লাখ এবং বালিকা ৭৭ লাখ। প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেছে ১৯৯৫ সালে ৬০.৪%। বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে শিক্ষকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ লাখ ৩৫ হাজারের মতো এবং স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৭৯ হাজার। দেখা যাচ্ছে, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনুপাতে
স্কুলের সংখ্যা অনেক কম। বাংলাদেশে ৬-১০ বছরের জনসংখ্যা শতকরা ৪০ জন। কাজেই এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা মোটেই সন্তোষজনক নয়। আর নারী শিক্ষার অবস্থা আরো শোচনীয়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের অবস্থান : যেহেতু বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ, সেহেতু জনসংখ্যার ৯০% গ্রামে বাসকরে। মাধ্যমিক স্কুলের মোট ছাত্রছাত্রীর এক-পঞ্চমাংশ শহরের স্কুলে পড়ে। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধিপেলেও তা মোট সংখ্যার ৪০% কম। মাধ্যমিক পর্যায়ে এসে ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার বেড়ে যায়। এর কারণ অনেকটাই
অর্থনৈতিক এবং সামাজিক। আশার কথা, সম্প্রতি মাধ্যমিক পর্যায়ে নারী অংশগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সরকার উপবৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এভাবে নারী শিক্ষাখাতে যদি সরকার বিভিন্নভাবে উৎসাহ যোগায় তবে বাংলাদেশের নারীসমাজ অচিরেই একটি শক্তিশালী জনশক্তিতে পরিণত হবে।
উচ্চশিক্ষায় নারীর অবস্থান : বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার হার অতি নগণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা মাত্র ৩%, উচ্চশিক্ষায় ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের অনুপাতে আনুমানিক ৮%। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১৯৯৪ এর পরিসংখ্যানে মেয়েদের ভর্তির শতকরা হার ২৫ ভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শতকরা ২৫ জন ছাত্রী এবং শতকরা ১৪ জন শিক্ষিকা।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে আমরা দেখতে পাই, ধীরে ধীরে মেয়েদের শিক্ষার হার কমে যাচ্ছে উচ্চস্তরে এসে। এখানে আর একটা কথা বলা দরকার, তা হলো মেয়েদের শিক্ষার মানও কিন্তু কমে আসছে। কারণ মেয়েরা পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ্যক্রম বাদ দিয়ে সহজাত শিক্ষা যেমন- গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইত্যাদি পড়ে থাকে। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসেও দেখা যায় মেয়েরা Social science বেশি পড়ছে Pure science এর তুলনায়। আবার বলা যায়, এ বিশ্ববিদ্যালয় Level পর্যন্ত যেসব মেয়েরা পৌঁছেছে তাদের খুব কম সংখ্যাই চাকরি বা কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নেবে। এজন্য নারী শিক্ষার মানও অবনত।